তালেবানের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও হুমকির মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শনিবার সকাল থেকে ভোট দিচ্ছেন আফগানিস্তানের জনগণ৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির চতুর্থ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৫ হাজার ৩৭৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে ৯৬ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন, এরমধ্যে ৩৩ লাখ নারী৷ সুষ্ঠুভাবে ভোট শেষ করতে মোতায়েন করা হয়েছে ৭২ হাজার নিরাপত্তাকর্মী৷
ভোট জালিয়াতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন বলছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভোটারদের নিবন্ধন হওয়ায় জালিয়াতি ঠেকানো যাবে৷
এই নির্বাচনের জন্য প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে৷ এরমধ্যে আফগান সরকার দিয়েছে ৯০ মিলিয়ন ডলার, বাকি অর্থ আন্তর্জাতিক অনুদান৷
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে ১৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন৷ কিন্তু চারজনের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় ভোটাররা ১৪ জনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন৷
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আফগান যুবারা
প্রায় দুই দশক তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক শক্তির উপস্থিতিতে বেড়ে উঠেছে এখনকার আফগান তরুণ প্রজন্ম৷ সরকার-তালেবান সংলাপ ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনায় নানা উদ্বেগ দানা বাঁধছে তাঁদের মনে৷ শান্তি ফিরবে তো?
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সুলতান কাসিম সায়েদি, মডেল
কাবুলের এই ১৮ বছর বয়সি মডেল স্পোর্টস হেয়ারস্টাইল করতে পছন্দ করেন৷ তাঁর পছন্দের মডেল সৌদি আরবের ওমর বোরকান এবং ক্যানাডিয়ান পপস্টার জাস্টিন বিবার৷ তাঁর ভয়, ‘‘তালেবান ক্ষমতায় আসলে, আমরা হয়তো আর শো করতে পারবো না৷’’ কিন্তু তারপরও যুদ্ধের বদলে শান্তি চান সুলতান৷
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
হুসাইন, হেয়ারড্রেসার
লক্ষ লক্ষ আফগানের মতো, যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে ছোট্ট হুসাইনকে নিয়ে তাঁর পরিবারও পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ইরানে৷ তবে এখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হেয়ারড্রেসারের কাজ করেন ১৯ বছরের হুসাইন৷ তালেবানের সাঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ায় তিনি খুশি৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে যুদ্ধ ও সংঘাত শেষ হওয়া দরকার৷ আমি চাই তালেবান আগের মতো আচরণ না করে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনুক৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মাহদি জাহাক, আর্টিস্ট
গত ১৭ বছর থেকে তালেবানেরও শিক্ষা নেয়া উচিত বলে মনে করেন ২৫ বছর বয়সি আর্টিস্ট সাহদি জাহাক৷ তিনি বলছেন, ‘‘শান্তি ফিরে আসার একটা আশা রয়েছে৷ কিন্তু গত ১৭ বছরে দেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা তাদের স্বীকার করতে হবে এবং সবাইকে তাঁদের জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
কাওসার শেরজাদ, অ্যাথলিট
মুয়ায় থাই অ্যাথলিট কাওসার শেরজাদ৷ তাঁর বয়স ১৭ বছর৷ নারীদের ব্যাপারে তালেবানের অতীত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি৷ কাওসার বলছেন, ‘‘আফগান নারীরা খেলাধুলায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন৷ আমি আশাবাদী, এই সাফল্যগুলো মেনে নিবে তালেবান৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
সোহাইল আতাই, ব্যবসায়ী
মাত্র ২২ বছর বয়সেই একটি বিলাসবহুল কাপড়ের দোকানের মালিক সোহাইল৷ বুঝতে শেখার পর থেকেই দেশজুড়ে সহিংসতা, যুদ্ধ, বোমা দেখে বড় হয়েছেন৷ এখন যে-কোনো প্রকারেই হোক, এই যুদ্ধের সমাপ্তি চান তিনি৷ সোহাইল বলছেন, ‘‘আমরা যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ এখন ভালো একটা জীবনযাপনের জন্য আমরা শান্তি চাই৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
মারাম আতায়ী, পিয়ানোবাদক
কাবুলের এক মিউজিক স্কুলে পিয়ানো বাজানো শিখছেন ১৬ বছরের মারাম৷ তাঁর জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তালেবান আবার ক্ষমতায় এলে তাঁকে আর পিয়ানো বাজাতে দেবে কিনা৷ মারাম বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভালো হয় সরকার ও তালেবানের মধ্যে সমঝোতা হলে৷ গানবাজনার অধিকার ও নারী অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
ওমিদ আরমান, মডেল
কাবুলের এক কাপড়ের দোকানে ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন ২১ বছর বয়সি মডেল ওমিদ৷ যুদ্ধ-সংঘাত ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে মনে করেন তিনি৷ ওমিদ বলেন, ‘‘এই দেশের সবাই শান্তি চায়৷ আমরা অনেক সংঘাতের সাক্ষী হয়েছি৷ যথেষ্ট হয়েছে, আর না৷ আমরা আর কোনো বিপর্যয় দেখতে চাই না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
নাদিম কোরায়শী, ব্যবসায়ী
কাবুলে একটি গেম শপের মালিক ১৯ বছরের নাদিম৷ এত বছরের সংঘাত শেষে শান্তির সুবাতাস ভালো ফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা তাঁর৷ নাদিম বলছেন, ‘‘সরকার ও তালেবানের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা দেখতে চাই আমরা৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
জারঘোনা হাইদারি, চাকরিজীবী
একটি বইয়ের দোকানে কাজ করেন জারঘোনা৷ তাঁর বয়স ২২ বছর৷ শান্তি প্রক্রিয়ায় তেমন একটা আশার কিছু দেখছেন না জারঘোনা৷ তিনি বলছেন, ‘‘এই দেশে শিগগিরই শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না৷ আমার ধারণা, তালেবান শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় আসবে না৷’’
ছবি: Reuters/Mohammad Ismail
9 ছবি1 | 9
স্থানীয় গণমাধ্যগুলো বর্তমান রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি এবং তার প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে৷ এরা দুজন তথাকথিত জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকারের অংশ হিসেবে পাঁচ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন৷
২০১৪ সালে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছিলেন আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ৷ ২০০৯ সালে হামিদ কারজাইর কাছে হেরে যান আবদুল্লাহ৷
ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন ফাউন্ডেশন অব আফগানিস্তান (টিএফএ) সাত হাজার মানুষের মধ্যে এক জরিপ চালিয়ে বলছে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷
সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে দফায় দফায় শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় প্রায়ই বোমা হামলার ঘটনা ঘটছে৷ সম্প্রতি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালালাবাদে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন৷