বাংলাদেশের কি রাষ্ট্রধর্ম থাকা উচিত? এই প্রশ্নের পক্ষে-বিপক্ষে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতা থেকে পাঠকদের নানারকম মন্তব্য তুলে ধরা হলো৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতির অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷ কিন্তু ১৯৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে সংবিধানের চরিত্র পাল্টে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়৷ এ ব্যাপারে মোহাম্মদ অনুপম রহমান মনে করেন, আধুনিক বিশ্বে এই সব বিতর্ক বাদ দিয়ে সংবিধান অনুসরণ করা উচিত৷ তাঁর প্রশ্ন রাষ্ট্রের ধর্ম আবার কী?
ইকবাল হোসেন মনে করেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্মের প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হোক সেটা তিনিও চান না৷ আর সে কারণেই এই মুহূর্তে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করার অনুরোধ করছেন মিডিয়াকে৷
তবে শাকিরা উম্মে শাদে বলছেন, ‘‘রাষ্টধর্ম ইসলাম আছে, থাকবে৷ অযথা বিতর্ক করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি যারা করছে, তারা দেশ ও ইসলামের শত্রু৷'' মসুর আহমেদও বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবেই দেখতে চান৷
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
‘‘৯০ শতাংশ মুসলিম যেখানে বাস করে সেখানে অবশ্যই রাষ্ট্রের পরিচয় ইসলাম হবে, এবং সেই রাষ্ট্রের প্রাধানের অনান্য ধর্মের মানুষদের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া হবে নৈতিক দায়িত্ব৷'' বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে এই যুক্তি দিয়েছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু শামসুল হক৷
অন্যদিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন যুক্তি শরিফুল আলমের৷ তাঁর প্রশ্ন ‘‘রাষ্টভাষা থাকলে রাষ্টধর্ম কেন নয়?''
‘‘রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কিসের? ধর্ম তো মানুষের জন্য৷'' রাষ্ট্রধর্ম সম্পর্কে এই ব্যাখ্যা পাঠক ইমনের৷
‘‘ইসলামের ছায়াতলে সকল ধর্মের মানুষ বাস করতে পারে৷ ইসলাম শান্তির ধর্ম৷'' এই মন্তব্য জহুরুল ইসলামের৷
পাঠক নিরব, শেখ ইয়ামিন এবং সোহেল অবশ্য রাষ্ট্রধর্ম থাকার পক্ষেই মত দিয়েছেন৷ পাঠক রূপকও বাংলাদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই পেতে চান৷
তবে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু বিপ্লবের একদমই পছন্দ নয়৷ তিনি মনে করেন, ‘‘কোনো ধর্ম না থাকলে, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ শান্তিতে থাকতো৷''
আরিফুল ইসলাম আবার কিছুটা দুঃখ করে বলছেন, ‘‘মানুষ বোঝে না, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়৷'' রুবেল ভুইয়াও আরিফুল ইসলামের সাথে একমত৷