1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের পর নির্বাচন চান শিক্ষার্থীরা

সমীর কুমার দে ঢাকা
৬ আগস্ট ২০২৪

রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের পরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের৷ ইতিমধ্যে দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন৷ এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ চলছে৷

সংসদ ভবন
সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সংসদ ভবন চত্বরে প্রবেশ করেন৷ ফাইল ফটো৷ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তিনি সম্মতিও দিয়েছেন বলে তার কার্যালয় ইউনূস সেন্টার ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছে৷

 ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' সমন্বয়কদের একজন বাকের মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের পরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে৷ ইতিমধ্যে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছি৷ তিনি আমাদের সম্মতিও দিয়েছেন৷ এই সরকারের উপদেষ্টা কারা হবেন, সেই নামও আমরা প্রস্তাব করব৷ আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশটা হবে বৈষম্যহীন৷ আমাদের দাবি মেনে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন৷ ফলে আলোচনায় বসেই সমাধান করা হবে৷’’

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদের পক্ষে যে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ হবে ৩ থেকে ৬ বছর৷ সরকারের মেয়াদ শেষের ৩ মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রধান বিচারপতির অপসারণ বা পদত্যাগ এবং দলবাজ বিচারপতিদের অপসারণ৷ এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রধানদের অবসরে পাঠানো (তিন বাহিনী বাদে); নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন; সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাতিল; সরকারের সকল চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল; ছাত্র-নাগরিক হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, নিহত ও আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান; জুলাই মাসকে জাতীয় শোকের মাস ঘোষণা; বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে৷ 

আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশটা হবে বৈষম্যহীন: বাকের মজুমদার

This browser does not support the audio element.

বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার বলা হয়েছে,রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা,সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে৷ নির্বাহী আদেশে এই সংসদ বিলুপ্ত করা হলো৷ এর আগে বেলা তিনটার মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার আলটিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷

এদিকে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এত আলোচনা হলেও এই মুহূর্তে দেশে নেই তিনি৷ ৮৪ বছর বয়সি এ অর্থনীতিবিদ অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্যারিসে গিয়েছিলেন৷ তিনি এখনো ফ্রান্সের রাজধানীতেই অবস্থান করছেন৷ তবে দ্রুতই তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে জানা গেছে৷

এর আগে নোবেলজয়ী এই অধ্যাপককে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা৷ মঙ্গলবার ভোর ৪টার পর ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম৷

গণভবনে হাজারো জনতা

02:07

This browser does not support the video element.

ভিডিও বার্তায় নাহিদ বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম৷ কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই রূপরেখা ঘোষণা করছি৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে৷ তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন৷ তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হোক৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাকি সদস্যদের নামও আমরা শিগগিরই ঘোষণা করবো৷ দ্রুতই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া দেখতে চাই৷’’

এখন আলোচনা চলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন কখন ও কীভাবে হচ্ছে? কারা থাকছেন এ সরকারে? সংবিধানের মধ্যে থেকে কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন সম্ভব? জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবকিছু হয়ত সম্ভব হবে না৷ কারণ এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে৷ যদি কিছু সংবিধানের বাইরে যায়, সেগুলোও নতুন সরকার এসে সংবিধানের মাধ্যমে বৈধ করে নেবে৷ এর আগেও তো আমাদের এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, সমাধানও হয়েছে৷’’

সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে দুটো জিনিস দেখতে হবে৷ একটি হলো সংবিধান, অন্যটি হলো গণঅভ্যুত্থান৷ গণঅভ্যুত্থান কোনো আইন না৷ সংবিধানের কোথাও গণঅভ্যুত্থান নেই৷ সংবিধানে এরকম কিছু নাই৷ তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা জয়লাভ করে, তাদের ইচ্ছা মতোই সবকিছু হবে৷ যে ইচ্ছা তারা করবে, সেটা আইনে যাওয়ার সুযোগ আছে৷ তবে বলা যাবে না যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে করলাম৷ গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ীরা করতে পারেন, সেটা পরে আইনে রেটিফাই করতে হবে৷ সেটি সংবিধান অনুযায়ী ফ্রম করতে হবে৷ সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সরকার গঠন হবে৷ ১৯৯১ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল৷ তেমনিভাবেই এখন সারা বাংলাদেশের ক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ তথা আমাদের অহংকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের প্রতিনিধির মাধ্যমে ১৯৯১ সালের রূপরেখা অনুযায়ী, ওই কনসেনসাসের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হতে পারে৷’’

তবে সংবিধানের মধ্য থেকেই সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সংবিধানের কোন বরখেলাপ হবে না৷ তবে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা না গেলে রাষ্ট্রপতি ও উচ্চ আদালত বরাবর নির্বাচন কমিশন একটা আবেদন দেবে৷ সেখানে কী কারণে তারা পারল না, সেটার ব্যাখা দেবে৷ আমাদের সময় ২০০৭ সালে যেটা হয়েছিল, আমরা আদালতে গিয়েছিলাম৷ আদালত আমাদের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করাসহ কিছু কাজ দিয়েছিল, সে অনুযায়ী আমরা করেছিলাম৷ তখন আমরা আদালতকে বলেছিলাম, দুই বছর সময় লাগবে৷ আদালত সেই সময় দিয়েছিল৷ ফলে আমাদের কাছে একটা বৈধ কাগজ ছিল৷ যদিও সেটা পরের সংসদে ব়্যাটিফাই করে নিতে হবে৷’’

সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে সংবিধানের বরখেলাপ হবে না: ড. সাখাওয়াত হোসেন

This browser does not support the audio element.

অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর তিনি এ আহ্বান জানান৷ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে৷ আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কালবিলম্ব না করে আপনি অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন৷ অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূণ্যতা দেখা দিতে পারে৷’’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে চান, আপনারা সমর্থন করেনে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না৷ এটা হচ্ছে যে, যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব৷ এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট৷ উনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান৷ তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার৷ তবে ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে, তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ