স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে দেশটিকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেন৷ এছাড়া সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ভারতের পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি৷
ছবি: Reuters/F. Aziz
বিজ্ঞাপন
ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে বাংলাদেশ-ভারতের অবস্থান এক ও অভিন্ন৷ পাকিস্তান বরাবরই সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে৷ আমরা মনে করি, যারা সন্ত্রাসকে সমর্থন দেয়, তাদের নিরুৎসাহিত ও বিচ্ছিন্ন করা উচিত৷ সন্ত্রাসবাদকে নিরুৎসাহিত করতে এবং এর প্রতি ঘৃণা জাগাতে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই করা উচিত৷ কোনো দেশের বিরুদ্ধেই এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না৷''
তাঁর কথায়, ‘‘অতীত এবং বর্তমানের নানা ঘটনায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেয়ার প্রসঙ্গ বারবার সামনে চলে এসেছে৷''
ড. মুনতাসির মামুন
This browser does not support the audio element.
তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই চুক্তি সই হতে বিলম্ব হওয়ায় বিরোধী দল, বিশেষ করে দল জামায়াত বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে৷ তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘কোনো একটি দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে কোনো চুক্তি হতে পারে না৷ যেভাবে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে গেছে, আমরা আশা করি ভবিষ্যতে তিস্তা চুক্তি হবে৷''
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে৷ কিন্তু পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা বা তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা বাংলাদেশের কূটনীতি নয়৷ বাংলাদেশের কূটনীতি হলো, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, শত্রুতা নয়৷ তবে এর নানা ধরণ রয়েছে৷ সেজন্য প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সম্পর্কও থাকবে অভিযোগও থাকবে৷ আমরা চাই পাকিস্তানের সঙ্গে সর্বনিম্ন সম্পর্ক রাখতে৷ আর সেটাও পাকিস্তানের জন্য একটা মেসেজ৷''
শান্তনু মজুমদার
This browser does not support the audio element.
তিনি আরো বলেন, ‘‘পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে মদদ দেয়, তা সবার জানা৷ তাই এর ফল তাকে ভোগ করতে হবে৷'' এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের ব্যাপারে রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর কথায় সরকারের নীতি প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমার মনে হয় না৷''
শান্তনু মজুমদারের কথায়, ‘‘পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে কিছু করতে হবে না৷ পাকিস্তান এমনিতেই নানা করণে বিতর্কের মধ্যে আছে৷ রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান এরইমধ্যে তার চরিত্রের প্রতিফলন ঘটিয়েছে৷ সুতরাং আমাদের কাজ হলো, পাকিস্তানের কাছ থেকে আমাদের পাওনা আদায় এবং আমাদের ব্যাপারে তাদের নাক গলানো বন্ধ করা৷''
বাংলাদেশের কূটনীতি হলো, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, শত্রুতা নয়৷ এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের ঘরে৷
পাকিস্তান: অগুনতি সন্ত্রাসী হামলার একটি দশক
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর, চড়া মূল্য দিতে হয়েছে পাকিস্তানকে৷ উগ্রপন্থিদের হাতে দেশটির কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ ছবিঘরে দেখুন সেই মর্মান্তিক কাহিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০০৭ – সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের দিন করাচিতে হামলা
২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবর করাচিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর গাড়িবহরে জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ সে সময় দীর্ঘ আট বছর পর দেশে ফিরছিলেন তিনি৷ হামলায় বেনজির বেঁচে গেলেও, প্রাণ হারায় ১৩৯ ব্যক্তি৷ কিন্তু এর মাত্র দু’মাস পর, ২৭ ডিসেম্বর, রাওয়ালপিন্ডিতে অপর এক হামলায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Khawer
২০০৮ – ওয়াহ বোমা হামলা
ওয়াহ-তে অবস্থিত ‘পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিস’-এ জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারায় ৬৪ ব্যক্তি৷ ২০০৮ সালের ২১ আগস্টের সেই হামলাই এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে কোনো সামরিক স্থাপনায় সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ (টিটিপি) সে সময় ঐ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০০৮ – রাজধানীর হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত মারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরকভর্তি ট্রাক দিয়ে হামলা চালানো হয়৷ ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৬০ ব্যক্তি, আহত ২০০৷ হতাহতদের মধ্যে ২০ জন বিদেশিও ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
২০০৯ – পেশোয়ারে হামলা
পাকিস্তানের পেশোয়ারে নারী ও শিশুদের বাজার হিসেবে পরিচিত ‘মিনা বাজারে’ একটি গাড়ি বোমা হামলায় ১২৫ ব্যক্তি নিহত ও ২০০ ব্যক্তি আহত হয়৷ পাকিস্তান সরকার এই হামলার পেছনে তালেবান জড়িত বলে দাবি করলেও, জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান এবং আল-কায়দা – উভয়েই সেই হামলার দায় অস্বীকার করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A Majeed
২০১০ – ভলিবল ম্যাচে আত্মঘাতী হানা
পাকিস্তানের বানুর একটি গ্রামে ভলিবল খেলা চলাকালে আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারায় ১০১ ব্যক্তি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Azam
২০১১ – চারসাদার পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা
পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখার চারসাদা জেয়া একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জোড়া বোমা হামলায় ৯৮ ব্যক্তি নিহত ও ১৪০ জন আহত হয়৷ ২০১১ সালে ১৩ মে ক্যাডেটরা যখন প্রশক্ষিণ শেষে দশদিনের ছুটিতে নিজ নিজ বাড়ি যাওয়ার পথে বাসে উঠছিল, তখন হামলার ঘটনাটি ঘটে৷ বলা হয়ে থাকে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই নাকি ঐ হামলা চালায় তালেবান৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Ahmed
২০১৩ – পেশোয়ারে চার্চে বোমা হামলা
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পেশোয়ারের ‘অল সেইন্ট চার্চে’ জোড়া আত্মঘাতী হামলায় ৮২ ব্যক্তি প্রাণ হারায়৷ ‘তাহরিক-ই-তালেবান’ বা টিটিপি সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জুনদাল্লাহ সেই হামলার দায় স্বীকর করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Khan
২০১৪ – পেশোয়ারে স্কুলে হত্যাযজ্ঞ
২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিটিপি-র সাতজন বন্দুকধারী পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা চালায়৷ তারা ১৫৪ ব্যক্তিকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ১৩২টি শিশু ছিল৷ পাকিস্তানের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A Majeed
২০১৫ – করাচিতে বাসে হামলা
২০১৫ সালের ১৩ মে আটজন বন্দুকধারী করাচিতে একটি বাসে হামলা চালিয়ে ৪৬ ব্যক্তিকে হত্যা করে৷ নিহতদের সবাই শিয়া মুসলমান ছিল৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করে জুনদাল্লাহ বা ‘আল্লাহ-র সেনা’ নামের জঙ্গি গোষ্ঠী৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
২০১৬ – হাসপাতালে বোমা হামলা
চলতি বছরের ৮ আগস্ট পাকিস্তানের কোয়েটায় সরকারি হাসপাতালে আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়৷ নিহতদের অধিকাংশই আইনজীবী, যাঁরা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বেলুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিলাল আনওয়ার কাসির মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন৷