খেতে আগাছা ও কীটপতঙ্গের মোকাবিলায় প্রায়ই নানা রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়৷ তাতে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে নানা রকম সমস্যা দেখা যায়৷ অরগ্যানিক পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক সমাধানসূত্র সাহায্য করছে৷
বিজ্ঞাপন
কীটনাশকেরদীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
খেতে আগাছা, কীটপতঙ্গ, ছত্রাক দূর করতে ফ্রাংক স্টুট বিশ বছর ধরে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করে আসছেন৷ বেশ কিছুকাল তাতে কাজ হয়েছে৷ কিন্তু এত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করার ফলে তাঁর খেতে ‘সুপারউইড' বা এমন আগাছা সৃষ্টি হয়েছে, যা সবকিছু প্রতিরোধ করতে পারে৷ ফসল তোলার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেটি গম নষ্ট করে দেয়৷ ফ্রাংক বলেন, ‘‘একে বলে ব্ল্যাক গ্রাস বা কালো ঘাস৷ আসল সমস্যা হলো, সেগুলি দ্রুত বেড়ে উঠে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে ৫০ শতাংশেরও বেশি আয় কমে যায়৷''
বায়ার, বিএএসএফ বা সিনজেন্টা কোম্পানি সেই আগাছার মোকাবিলায় প্রতিরোধক তৈরি করেছে বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই আগাছা কিছুতেই নির্মূল করা যাচ্ছে না৷ তাদের বংশবৃদ্ধি অব্যাহত থাকছে৷ ফ্রাংক স্টুট বলেন, এক বর্গমিটার এলাকায় তিন থেকে চারশ' এমন আগাছা গজালে ফসলের আর বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকে না৷''
এই খেতও শীঘ্র ধ্বংস হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে৷ জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের কৃষি চেম্বারের ল্যুডার বর্নেমানের সঙ্গে স্টুট কয়েক বছর ধরে কীটনাশক সত্ত্বেও ‘সুপারউইড'-এর প্রসার নথিভুক্ত করছেন৷ কিছুতেই কাজ হচ্ছে না৷ এমনকি মারাত্মক বিষও তাদের নির্মূল করতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ ল্যুডার বলেন, ‘‘গ্লিফোসেট, যার কিনা ব্ল্যাক গ্রাসসহ সব ধরনের আগাছা ধ্বংস করার কথা, তাতেও কাজ হচ্ছে না৷ শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যে কিছু জায়গায় তা প্রয়োগ করে কোনো কাজ হয়নি৷ সেখানে কালো ঘাস দিব্যি বেঁচে রয়েছে৷ তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখে সত্যি অবাক হতে হয়৷''
ফ্রান্সের এক অন্যরকম কৃষকের কথা
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃষি অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই সেখানকার কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেছেন৷ কিন্তু ব্যতিক্রম এই জ্যঁ-ব্যার্না উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বলদ দিয়ে হালচাষ
গরু কিংবা ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য গ্রামবাংলায় এখনো দেখা গেলেও ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃষি অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সে সেটি বিরল এক দৃশ্য৷ তাই তো জ্যঁ-ব্যার্না উয়োঁ যখন নিজের বলদ নিয়ে জমিতে নেমে পড়েন, তখন তা একটু অস্বাভাবিকই ঠেকে সেখানে৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
শুরু থেকেই এমন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়৷ কিন্তু বর্তমানে ৭০ বছর বয়সি উয়োঁ শুরু থেকেই এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন৷ তাই ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের পাশাপাশি আটটি গরুর দুধ দোয়ান হাত দিয়ে, আটাও তৈরি করেন হাতে৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
‘আমি সুখী’
নিজের জীবনযাপন নিয়ে খুশি উয়োঁ৷ তাই তো তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন পুরোপুরি সুখী মানুষ৷ আমি কখনোই ধনী ছিলাম না, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ আজকালকার কৃষকদের অনেক জমি আর পশু আছে৷ কিন্তু তাই বলে যে তাঁরা সবাই সুখী, তা নয়৷ তাদের অনেক সমস্যা আছে৷’’ উয়োঁর বাড়ির ছবিটি দেখে কেমন সুখী, সুখী লাগছে কি?
ছবি: Reuters/S. Mahe
নিজ বাড়িতে বিক্রি
উয়োঁর সব পণ্য প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত৷ তবে পণ্য বিক্রির জন্য তিনি এগুলোর গায়ে অর্গানিক লেভেল লাগাতে রাজি নন৷ কোনো সুপারমার্কেটেও তিনি তাঁর উৎপাদিত পণ্য দেন না৷ শুধু কেউ যদি তাঁর বাড়িতে যায়, তাহলে তাঁদের কাছে শূকর কিংবা বাছুরের মাংস, মাখন ইত্যাদি বিক্রি করেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
উয়োঁর সঙ্গী
ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলের রিয়েক-স্যুর-বেলোঁ এলাকায় উয়োঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে থাকেন লরেন্স৷ দু’জনে মিলেই খামার সামলান৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বয়সের কারণে
এতদিন যন্ত্রের সহায়তা না নিলেও বয়সের কারণে একসময় শারীরিক অক্ষমতাকে তো মেনে নিতেই হয়৷ উয়োঁর ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে৷ তাই সম্প্রতি দু’টি ট্রাক্টর কিনেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
অন্যের সমালোচনা নয়
যে কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি আর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছেন, তাঁদের সমালোচনা করতে রাজি নন উয়োঁ৷ কারণ, প্রয়োজনের তাগিদেই তাঁরা এসব করছেন বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘ভাবতে পারেন, একটু গ্লাইফোসেট দিলেই আপনাকে আর আগাছা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না!,’’ বলেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
উত্তরসূরি
উয়োঁ না হয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই কৃষিকাজ করে জীবন কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর খামার চলবে কীভাবে? তিনি জানালেন, খামারটি বিক্রি না করে কাউকে দান করে দেবেন৷ তবে উত্তরসূরীর পক্ষে তাঁর মতো করে চলা সহজ হবে না বলে মনে করেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
8 ছবি1 | 8
এই প্রতিরোধ ক্ষমতাই আগাছার ‘সুপার পাওয়ার'৷ মানুষ নিজেই তাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে৷ জিনের মধ্যে আচমকা পরিবর্তন ঘটালে কোনো উদ্ভিদ উদ্ভিদনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে৷
কালো ঘাসের কুফল
খেতে এমন প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্ল্যাক গ্রাস থাকলে এবং তা দূর করতে উদ্ভিদনাশক প্রয়োগ করলে উলটে তার আশেপাশের প্রতিদ্বন্দ্বী আগাছাগুলি মরে যায়৷ তখন ব্ল্যাক গ্রাস বিনা বাধায় বেড়ে উঠতে ও বংশবৃদ্ধি করে যেতে পারে৷ এই প্রক্রিয়ায় যে আগাছা একের পর এক বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, তাদের ‘সুপারউইডস' বলা হয়৷ সেগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ এমন মাল্টিরেজিস্ট্যান্ট আগাছা গোটা বিশ্বে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে৷ লোয়ার স্যাক্সনি কৃষি চেম্বারের ল্যুডার বর্নেমান বলেন, ‘‘রাসায়নিক শিল্পের প্রতিনিধিরা বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এমনটা ঘটতে পারে৷ বিগত বছরগুলিতে সত্যি এমনটা দেখা গেছে৷ ৫ থেকে ১০ বছর পর পর নতুন করে এমনটা ঘটতো৷ অর্থাৎ ব্ল্যাক গ্রাস বিশেষ ধরনের অ্যাকটিভ সাবস্টেন্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুললেই বার বার নতুন উদ্ভিদনাশক বাজারে এসেছে৷ তাতে কাজও হয়েছে৷ কিন্তু চাষের প্রণালীতে রদবদল করা হয়নি৷''
রাসায়নিক পদার্থের কল্যাণে সাধারণ চাষিরা এমন সব ফসল ফলাতে পারতেন, যাতে সবচেয়ে বেশি আয় হয়৷ এখন তাঁরা অরগ্যানিক চাষিদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন৷ অথচ এককালে তাঁরাই হাসির পাত্র ছিলেন৷
আগাছা দূর করার বিকল্প পদ্ধতি
অরগ্যানিক চাষের খেতেও আগাছা জন্মায় বটে, কিন্তু বিষ প্রয়োগ করে তা দূর করা হয় না৷ রাইনার বোনহর্স্ট তাঁদেরই একজন৷ তিনি প্রাচীনকাল ধরে চলে আসা কৌশল প্রয়োগ করেন৷ রাইনার বলেন, ‘‘এটা হলো ‘হেয়ারি ভেচ', যা খেতে ভরে গেলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ কিন্তু আমরা সেগুলি ছেঁটে ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি৷ এখন ফসল বেশ ভালো বলে আমার মনে হচ্ছে৷ এখানে যান্ত্রিক উপায়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে৷''
প্রকৃতি ও মানুষ বাঁচাতে দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের উদ্যোগ
কুষ্টিয়ার ছেলে দেলোয়ার জাহান ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেছেন৷ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করছেন তাঁরা৷
ছবি: Delowar Jahan
বিষমুক্ত খাবারের অঙ্গীকার
বাংলাদেশে ফসলের ক্ষেতে প্রতি মিনিটে ৭২ কেজি ‘বিষ’ ছিটানো হয় বলে জানান দেলোয়ার জাহান৷ এতে মাটির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে যে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করছেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷
ছবি: Delowar Jahan
‘প্রাকৃতিক কৃষি’ আন্দোলন
দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷ এর মাধ্যমে তাঁরা আশেপাশের কৃষকদের দেখান যে, এভাবেও ফসল উৎপাদন করে লাভ করা সম্ভব৷ এছাড়া কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের নতুন নতুন পদ্ধতি বের করেন তাঁরা৷ ছবিতে দেলোয়ারকে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
শুরুর কথা
২০১৩ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামে জমি লিজ নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন শুরু করেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷ বর্তমানে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামে দেড় একর জমিতে প্রায় ৪০ রকমের সবজি উৎপাদিত হয় বলে জানান তিনি৷ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দেলোয়ার নিজে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন৷ আর তাঁর সঙ্গীদের পরিবারও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷
ছবি: Delowar Jahan
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন দেলোয়ার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্সে দ্বিতীয় ও মাস্টার্সে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলেন দেলোয়ার৷ এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন৷ কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন ভেবে সেখানে যাননি তিনি৷ ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র পাশাপাশি ঢাকায় একটি পত্রিকায় কৃষি বিষয়ক সাংবাদিকতা করছেন দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
সঙ্গীদের কথা
দেলোয়ারের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন তরুণ-তরুণী৷ তাঁদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করেছেন৷ ছবিতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
সাফল্যের কথা
দেলোয়ারদের যেখানে খামার আছে, সেই মানিকগঞ্জ ছাড়াও ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার অনেক কৃষক বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল উৎপাদন করছেন৷ ছবিতে দেলোয়ারের সঙ্গীদের ফসল তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
পণ্যের বাজার
বিভিন্ন জেলার কৃষকদের প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা সবজি, ফল ঢাকায় কিনতে পাওয়া যায়৷ এজন্য মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’ চালু করা হয়েছে৷ ছবিটি বিপণন কেন্দ্রের সামনে তোলা৷
ছবি: Delowar Jahan
যা পাওয়া যায়
কী চান? শাক-সবজি, ফল, চাল, ডাল, হাতে ভাজা মুড়ি, মসলা, তেল, ঘি, দুধ, ডিম; বলে শেষ করা যাবে না৷ মাঝেমধ্যে বাসায় চাষের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক সারও পাওয়া যায় ঐ কেন্দ্রে৷ হালনাগাদ তথ্য পেতে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র ফেসবুক পাতা দেখা যেতে পারে৷ এজন্য উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Delowar Jahan
নিরাপদ ফসল
ঢাকায় প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কিষাণীরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে এসেছেন৷
ছবি: Delowar Jahan
গ্রামে যাওয়া হয়নি
দেলোয়ার কুষ্টিয়ার ছেলে৷ কিন্তু নিজের গ্রামে না গিয়ে মানিকগঞ্জে কাজ করার কারণ বলতে গিয়ে তিনি জানান, সেটি সম্ভব ছিল না৷ ‘‘যখন পড়ালেখা করতাম তখন গ্রামে গেলে সবাই জানতে চাইতো কতদিন আছি কিংবা কবে যাব? তখনই বুঝতে পারি যে, আসলে গ্রামে ফেরা সম্ভব না,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজ
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চশিক্ষার পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে জড়িত হয়ে জীবনযাপন করতে চায় তাহলে সেটি সম্ভব বলে মনে করেন দেলোয়ার৷ ‘‘কেউ যদি সমন্বিত খামার করেন, যেখানে মাছ চাষ থাকবে, গরু থাকবে, দুধের জন্য ছাগল থাকবে, হাঁস থাকবে, সবজি থাকবে- তাহলে সম্ভব৷’’
ছবি: Delowar Jahan
তবে...
দেলোয়ার বলেন, সমস্যা হচ্ছে তরুণরা মনে করে, কৃষিকাজ মানে অচ্ছুতের কাজ৷ তাই এটি কেউ করতে চায় না৷ ‘‘কারণ চারপাশে এত রং, এত প্রত্যাশা জীবনে যে, কেউ আসলে কৃষিকাজ করতে চায় না৷ প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের কাছে (প্রাকৃতিক কৃষির কাজ দেখতে) আসে৷ যে পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আসে তার দ্বিগুণ পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে চলে যায়’’, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
12 ছবি1 | 12
অরগ্যানিক চাষের ক্ষেত্রেও বেশ কিছুকাল ধরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ক্যামেরা, জিপিএস ও লেন ডিপার্চার ওয়ার্নিং সিস্টেম কাজে লাগিয়ে যন্ত্রই খেতের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আগাছা তুলে দিচ্ছে৷ অবশ্যই কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করতে হচ্ছে না৷ অথচ সাধারণ চাষিরা অরগ্যানিক চাষিদের অবজ্ঞা করে এতকাল সেই পথে যেতে চাননি৷ তাঁদেরই একজন মার্কুস ম্যুকে৷ তিনি বলেন, ‘‘কাজটা খুবই সহজ ছিল৷ ট্যাংক ভর্তি করে স্প্রে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হলো৷ দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যায়৷ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগাছা কাটার কৌশলকে বার বার অত্যন্ত ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে দাবি করা হয়েছে যে, অর্থনৈতিক কারণে এমন যন্ত্র ব্যবহার অর্থহীন৷''
অতীত থেকে শিক্ষা
তবে শুধু আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করলেই তাকে অরগ্যানিক চাষ বলা চলে না৷ রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই আগাছা ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাইনার বোনহর্স্ট-কে প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ বাজারের নিয়ম মানলে চলে না৷ সেই খেতের আলুর চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় অনেক বেশি হলেও চার বছর পর পর খেতে সেই আলু গজায়৷ ফ্রাংক স্টুট বলেন, ‘‘ফসলের সব ধরনের সুরক্ষার জন্য শুধু ব্যবহার করবো – এমন ধারণা থেকে আমাদের বিদায় নিতে হবে৷ বরং আগের মতো ফসল পরিবর্তন করতে হবে এবং আরো অনেক পরিশ্রম করে মাটির আরো যত্ন নিতে হবে৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা এমনটাই করতেন৷''
এমন উপলব্ধি সত্ত্বেও বিষাক্ত স্প্রে রাতারাতি খেত থেকে বিদায় নেবে বলে মনে হয় না৷ তবে ফ্রাংক স্টুট নতুন ফসল চাষ করতে চান৷ হয়তো গমের বদলে মটরশুঁটি৷ আয় কম হলেও সেই উদ্ভিদ অনেক বেশি সহনশীল৷