হামবুর্গ বন্দরের ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স' বিপদের খবর পেয়েছে৷ যখনই বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই পরিবেশ প্রহরীরা বেরিয়ে পড়েন৷ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সব রকম মারাত্মক বিপজ্জনক বস্তু সম্পর্কে তাঁরা বিশেষজ্ঞ৷ যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তাঁদের বিশেষ গাড়িগুলিতে উচ্চ প্রযুক্তির সেন্সর লাগানো আছে৷
হামবুর্গ বন্দরের কমার্শিয়াল এরিয়ার ঠিক মাঝে ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স'-এর দপ্তর৷ এই এলাকায়ই সবচেয়ে বেশি রাসায়নিক দুর্ঘটনা ঘটে৷ ঘটনাস্থলেই এক মোবাইল কমান্ড সেন্টার বসানো হয়৷ ফলে সময় ও শক্তির অপচয় হয় না৷
কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ পোশাক অত্যন্ত ভারি এবং সেটি পরার পদ্ধতিও বেশ জটিল৷ অন্যের সাহায্য ছাড়া সেই পোশাক পরা অসম্ভব৷ সেই পোশাকের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও রেসপিরেটর-ও থাকতে হবে৷ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রাসায়নিক গ্যাস শরীরে ঢুকলে মৃত্যুও হতে পারে৷ তাই কোনো ভুলত্রুটির অবকাশ নেই৷
পরিমাপের যন্ত্র সহ সব সাজসরঞ্জামই সহজে বহন করা যায়৷ তবে অভিযানের আগে বিষ শনাক্ত করতে হয়৷ হ্যান্ডহেল্ড যন্ত্র ঘটনাস্থলে বিপজ্জনক পদার্থ শনাক্ত করে৷ সবকিছু দ্রুত হতে হবে৷ খুব বেশি সময় ধরে বিশেষ পোশাক পরে থাকা যায় না৷ জানালার কাচ ঝাপসা হয়ে গেলে বুঝতে হবে উত্তাপ বাড়ছে৷ তখন সতর্ক থাকতে হয়৷ টিম নমুনা সংগ্রহ করছে৷ পরিমাপের যন্ত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফল দেখিয়ে দেয়৷
বন্দর নগরীর এমনিতেই একটু বাড়তি আকর্ষণ থাকে৷ তার ওপর নগরটি যদি হয় হামবুর্গ, তাহলে তো কোনো কোনো পর্যটকের প্রেমে না পড়ে ফেরাই মুশকিল৷ কেন? জেনে নিন আজকের ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kay Nietfeldএলবে নদীতে নৌকা চলে সারাদিনমান৷ সিন্ধু ঈগলের ডাক আর স্রোতের কুলু কুলু শব্দে ঘুম ভাঙে সকালে৷ সাগর থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে হামবুর্গ বন্দর৷ বড় বড় জাহাজ যাতে অনায়াসে বন্দরে নোঙর ফেলতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে নদীকে প্রশস্ত করার পরিকল্পনা হয়েছিল৷ পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christian Charisiusসংগীত পিপাসুদের জন্য সুরের বিশাল এক রাজ্য গড়ে উঠছে হামবুর্গে৷ এলবে ফিলহারমনিক হল৷ লাল ইটের তৈরি পুরোনো এক ওয়াটার হাউসের ওপর গড়ে উঠেছে সুউচ্চ এক মনোরম কাচঘর৷ ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসবেন বিখ্যাত শিল্পীরা৷ ২০১৭ সালে উদ্বোধন হবার কথা এই কনসার্ট হলের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bodo Marksহামবুর্গেই রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে পুরোনো পাতাল-সুড়ঙ্গ ‘এলবে টানেল’৷ ১৯১১ সালে তৈরি করা হয়েছিল এই টানেল৷ অসংখ্য পথচারী, সাইকেল আরোহী এবং গাড়িকে প্রতিদিন লিফটে নামিয়ে দেয়া হয় পানির নীচের এই টানেলে৷ ৪২৬ মিটার দীর্ঘ এই টানেল হওয়ায় শহর থেকে এলবে নদী পার হয়ে শিপইয়ার্ড অঞ্চলে যেতে অনেক কম সময় লাগে৷ পথচারীদের এই টানেল ব্যবহারের জন্য কোনো টাকা দিতে হয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bodo Marksএলবে নদীর তীরেই গড়ে উঠছে ছোট্ট এক আধুনিক নগর৷ পুরোনো অফিস, আদালত, রাস্তা-ঘাট সব ঢেলে সাজিয়ে দেয়া হচ্ছে নতুন রূপ৷ ২০২৫ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা৷ কাজ শেষ হলে অন্তত ১০ হাজার মানুষের বসতি হবে হাফেন সিটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ulrich Perreyআড়াই হাজারের মতো ব্রিজ আছে হামবুর্গে৷ ভেনিস, আমস্টারডাম বা লন্ডনের মতো শহরেও এত ব্রিজ নেই৷ কিন্তু ব্রিজ বেশি হলে কী হবে, হামবুর্গের মানুষ কখনো ব্রিজের সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামায়না৷ ১৮৪২ সালে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে শহরের অনেক কাঠের ব্রিজ পুড়ে গিয়েছিল৷ তাই তারপর যত ব্রিজ হয়েছে তার সবই হয় স্টিলের, নয়তো লোহার৷ সব ব্রিজই এখন দ্রুত যোগাযোগে নগরবাসীর সহায়ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kay Nietfeld১৮৮৮ সালে স্পাইশারশ্টাট, অর্থাৎ ‘গুদামের শহর’এর উদ্বোধন করেন সম্রাট দ্বিতীয় ভিলহেল্ম৷ ব্যবসায়ীরা বিনা খরচে এখানে পণ্য মজুদ করতে পারতো বলে হামবুর্গ অবশ্য তার আগেই মুক্ত বন্দর হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল৷ এখনো পণ্য গুদামজাতকরণের সুবিধাসম্পন্ন বিশ্বের অন্যতম বড় শহর হামবুর্গ৷ আগামী গ্রীষ্মেই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-এর স্বীকৃতি পেয়ে যেতে পারে হামবুর্গ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kay Nietfeldহামবুর্গে শীতের বিদায় বার্তা বয়ে আনে রাজহাঁস৷ শহরে রাজহাঁসের ঝাঁক ফিরতে দেখলেই সবাই বুঝে নেয় বসন্ত এসেছে৷ এই রাজহাঁসদের দেখভালের জন্য বিশেষ অফিস খুলেছে সিটি কাউন্সিল৷ পিতার মতো রাজহাঁসদের দেখাশোনা করার জন্য একজন ‘সোয়ান ফাদার’ও রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christian Charisiusশহরের ছোট্ট একটা রাস্তা৷ নাম গ্রোসে ফ্রাইহাইট, অর্থাৎ ‘বিগ ফ্রিডম’ বা বড় স্বাধীনতা৷ রাস্তার দু ধারে বার আর ক্লাবের ছড়াছড়ি৷ শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভীষণ প্রিয় এই গ্রোসে ফ্রাইহাইট৷ ষাটের দশকে এখানেই স্টার ক্লাবে পারফর্ম করেছিল বিটলস৷ তখনো কিন্তু তাদের কেউ চিনতো না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Angelika Warmuthএক সফরে হামবুর্গের সবকিছু দেখা সম্ভব নয়৷ শহরের জাদুঘর, গির্জা, কনসার্ট হল, থিয়েটারগুলোতে একবার করে গেলেই তো কয়েকদিন কাবার হয়ে যায়৷ তাই পর্যটকদের অনেকেই সফর শেষ করে ‘আবার আসতে হবে’ ভেবে৷ আর হামবুর্গ তো সবসময় মুখিয়েই থাকে ‘মইন মইন’ অর্থাৎ স্বাগতম স্বাগতম বলে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাতে!
ছবি: picture-alliance/dpa/Angelika Warmuth
হামবুর্গ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বন্দর৷ শহরের মধ্যেই তার অবস্থান৷ জাহাজে রাখা টক্সিক পদার্থে আগুন ধরে গেলে শহরের বাসিন্দাদের বিপদ হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে এক মোবাইল হাইটেক ল্যাব কাজে লাগানো যেতে পারে৷ বিশাল দূরত্ব থেকেও পরিমাপ করা যেতে পারে৷
বিপজ্জনক গ্যাস কীভাবে শহরের উপর ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিজ্ঞানীরা এক অভিনব এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে তা জানতে পেরেছেন৷ তাঁরা হামবুর্গ শহরের কেন্দ্রস্থলের ৩৫ গুণ ছোট মডেল তৈরি করেছেন৷ ২৫ মিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের মধ্যে কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়া ও বাতাস চলাচলের প্রক্রিয়া যতটা সম্ভব নকল করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ লেজারের মাধ্যমে গ্যাসের বিস্তার দেখা যায় এবং পরিমাপও করা যায়৷ গ্যাস কত তাড়াতাড়ি গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা সত্যি ভয়াবহ বিষয়৷ বাড়িঘর ও অলিগলির মধ্যে এই অদৃশ্য বিপদের স্রোত সৃষ্টি হয়৷
আবহাওয়ার পূর্বাভাষের মতো বিষাক্ত গ্যাসের মেঘের বিস্তারেরও পূর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধারকর্মীরা নিখুঁতভাবে জানতে পারবে, ঠিক কোন এলাকার মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যেতে হবে৷ নিরাপত্তা বাড়াতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা৷
জার্মানির প্রথম শহর হিসেবে হামবুর্গ-এর এমন এক মডেল তৈরি করা হয়েছে৷ এমন বিশ্লেষণের মাধ্যমে শুধু পরিবেশ বিপর্যয় এড়ানো যাবে না, বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করে হামলা চালানো হলেও মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে৷