কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হাঙ্গেরিয়ান ছবিটির নাম ‘‘হোয়াইট গড’’৷ ছবির একটি দৃশ্যে বুদাপেস্টের খোলা রাস্তায় শ’দুয়েক বেওয়ারিশ কুকুর মানুষজনকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ এরা কিন্তু রক্তমাংসের জীব, কোনো কম্পিউটার অ্যানিমেশন নয়৷
বিজ্ঞাপন
ছবি শুরুই হচ্ছে দৃশ্যটি দিয়ে: একটি কিশোরী তার পিঠের ঝোলাটিতে ট্রাম্পেট ভরে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে৷ দিনের বেলা, কিন্তু রাস্তায় কোনো লোকজন নেই৷ হঠাৎ শ'দুয়েক হিংস্র নেড়ি ভৌ-ভৌ করে ডাকতে ডাকতে অন্য একটা রাস্তা থেকে বেরিয়ে মেয়েটির দিকে ধেয়ে এলো৷
পটভূমিতে দেখা যাচ্ছে দুর্ঘটনায় পতিত একটি বাস এবং ড্রাইভারদের ফেলে যাওয়া একাধিক প্রাইভেট গাড়ি, কেননা গোটা শহরটাই নেড়িদের সন্ত্রাস থেকে পালিয়ে বাঁচতে ব্যস্ত৷ ছবির কাহিনিতে মেয়েটি তার হারানো কুকুর হাগেনকে খুঁজতে বেরিয়েছে৷ মেয়েটির বাবা তাকে তার প্রিয় কুকুরটিকে মোটরওয়ে-তে ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছিলেন৷
কান উৎসবে ঐশ্বরিয়ার ২২ বছর
ভারতীয় অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন নিয়মিত কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছেন৷ এখন পর্যন্ত ২২ বার তিনি এই উৎসবে উপস্থিত হয়েছেন৷ এই বিশ্বসুন্দরীর টানা কান অভিযান নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Pizzoli
২০১৮
এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচায় সাদা গাউনে বরাবরের মতই অপূর্ব লাগছিলো এই বলিউড সুন্দরীকে৷
ছবি: AFP/Getty Images/L. Venance
২০১৭
এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচায় লাল গাউনে ঠিক গোলাপ ফুলের মতই সুন্দর লাগছিলো এই বলিউড সুন্দরীকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Yesayants
২০১৬
এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের নামের যেন সার্থকতা তুলে ধরেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/I. Gavan
২০১৫
গত কয়েক বছর ধরেই কানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন ঐশ্বরিয়া৷ প্রতিবছরই তাঁর পোশাকে থাকে ভিন্নতা৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
২০১৪
ঐ বছর সোনালী রংয়ের পোশাকে কানের লাল গালিচায় হাঁটেন এই বিশ্বসুন্দরী, যা জয় করেছিল অনেকের হৃদয়৷
ছবি: Reuters
২০১৩
কানের ৬৬তম আয়োজনে ঐশ্বরিয়া৷ ‘বিহাইন্ড দ্য ক্যান্ডেলাবরা’ ছবির প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে গত বছর বিশ্বের অন্যতম বড় চলচ্চিত্র উৎসবে হাজির হন তিনি৷
ছবি: ALBERTO PIZZOLI/AFP/GettyImages
২০১২
‘কসমোপোলিস’ ছবির প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে সেবছর কানে উপস্থিত ছিলেন ঐশ্বরিয়া৷ ছবিতে কি তাঁকে একটু মোটা দেখাচ্ছে? আসলে বিশ্বসুন্দরী তখন মা হয়েছেন৷
ছবি: ALBERTO PIZZOLI/AFP/GettyImages
২০১১
সাদা এবং কালোর সংমিশ্রণে তৈরি পোশাকে ঐশ্বরিয়া৷ এই বলিউড অভিনেত্রীর জন্য যেসব পোশাক তৈরি করে ফ্যাশন ডিজাইনাররা খ্যাতি কুড়িয়েছেন তার মধ্যে এটি একটি৷ সময়ের সাথে সাথে পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে মানানসই ব্যক্তিত্বও গড়ে তুলেছেন অ্যাশ৷
ছবি: GUILLAUME BAPTISTE/AFP/Getty Images
২০১০
সেবছর স্বামী অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে কানে হাজির হন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন৷ শাড়িতে অসাধারণ লাগছিল তাঁকে৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
২০০৯
কাঁধ খোলা সাদা গাউনে ঐশ্বরিয়া৷ ২০০৯ সালের এই ছবিটি এখন পর্যন্ত কানে ঐশ্বরিয়ার সেরা ছবি হিসেবে অনেকে বিবেচনা করেন৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
২০০৮
বচ্চন পরিবারের বউয়ের ভক্ত এবং সমালোচকরা মনে করেন, ঐশ্বরিয়ার চেহারায় এক ধরনের সরলতা আছে৷ আর এই সরলতা তাঁকে করে তুলেছে আরো বেশি আকর্ষণীয়৷ সবুজ আর সোনালী রংয়ের মিশ্রণে তৈরি এই পোশাকে অবশ্য বিশ্ব সুন্দরীর দৈহিক সৌন্দর্য্যও ফুটে উঠেছিল৷
ছবি: FRED DUFOUR/AFP/Getty Images
২০০৭
সেবছর অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ঐশ্বরিয়া৷ কানেও তিনি হাজির হন স্বামীসহ৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
২০০৬
ঘন নীল পোশাক, সোজা চুল আর গলায় সাপের আদলে তৈরি নেকলেস – ঐশ্বরিয়ার এই লেবাস সমালোচকদের মুখও বন্ধ করে দিয়েছিল৷ বিয়ের আগের বছর তাঁকে দেখতে কিন্তু বেশ আকর্ষণীয় লাগছিল৷
ছবি: Getty Images
২০০৫
কালো ঐশ্বরিয়ার প্রিয় রং৷ ২০০৫ সালে কানে বিদেশি ডিজাইনারের তৈরি তাঁর কালো পোশাক সাড়া জাগিয়েছিল৷ বিশেষ করে ফটোগ্রাফাররা ঐশ্বরিয়ার ছবি তুলেছেন অনেক আগ্রহ নিয়ে৷
ছবি: PASCAL GUYOT/AFP/Getty Images
২০০৪
ভারতীয় ডিজাইনার নিতা লাললার তৈরি এই পোশাক পরে ২০০৪ সালে কানের লাল গালিচায় হেঁটেছেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন৷ এই পোশাকের সমালোচনা করেছেন অনেকে৷ তাসত্ত্বেও ঐশ্বরিয়ার প্রিয় ডিজাইনারের তালিকা থেকে বাদ পড়েননি নিতা৷ তবে পরবর্তীতে অ্যাশের জন্য পোশাক ডিজাইনের ক্ষেত্রে সতর্ক হন তিনি৷
ছবি: Getty Images
২০০৩
২০০৩ সালে কানে ‘জুরি’ হিসেবে অংশ নেন ঐশ্বরিয়া৷ তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেবছর কান সফর নিয়ে বিশেষ সন্তুষ্ট ছিলেন না৷ যদিও প্রথম কোন ভারতীয় অভিনেত্রীর জুরিমণ্ডলীতে সুযোগ পাওয়ার খবর সাড়া জাগিয়েছিল৷ অনেকের নজর ছিল ঐশ্বরিয়ার দিকে৷
ছবি: Boris Horvat/AFP/Getty Images
২০০২
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ঐশ্বরিয়ার অভিষেক৷ ‘দেবদাস’ ছবির প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে তখন কানে এসেছিলেন তিনি, পড়েছিলেন শাড়ি৷
ছবি: Francois Guillot/AFP/Getty Images
17 ছবি1 | 17
অবশ্যই সেই পরিত্যক্ত হাগেন বুদাপেস্টের ‘রাস্তার কুকুরদের' সর্দার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এই কুকুরদের আবার কর্পোরেশনের মাইনে-করা কুকুর-ধরাদের হাত থেকে বেঁচে বেড়াতে হয়; মানুষজনের অবজ্ঞা, অবহেলা, অত্যাচারের শিকার তারা৷ ছবির আসল ‘থিম' তাই এক হিসেবে ‘আন্ডারডগ' বলা চলে, অর্থাৎ কুকুরদের জটলায় সবচেয়ে দীন-হীন, মান-প্রতিপত্তিবিহীন সেই কুকুরটি, যার কোনো অধিকারই নেই, যাকে সবাই অপমান করে, অবজ্ঞা করে, শোষণ করে৷
এই ‘আন্ডারডগ'-রা হলো হাঙ্গেরির তথা ইউরোপের দরিদ্র মানুষদের প্রতিভূ, বলেছেন ছবির হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক কর্নেল মুন্ড্রুৎসো৷ ঐ যে ছোট্ট মেয়েটি তার হারানো কুকুরকে ফিরে পাবার চেষ্টা করছে, সে হলো ‘‘সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য, সব দরিদ্র মানুষের'' প্রতীক, বলেছেন মুন্ড্রুৎসো৷
এই সব ‘‘দরিদ্র মানুষের প্রতীকদের'' ফিল্মের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়াটা সহজ কাজ নয়৷ সেজন্য হলিউড থেকে আনতে হয়েছে ডগ ট্রেনার টেরেসা অ্যান উইলিয়াম্সকে৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান ডগ ট্রেনার আরপাদ হালাজ৷ এক সঙ্গে দু'শো, আড়াই'শো নেড়ি কুকুরকে ট্রেনিং দেবার কথা তারা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি – তার ওপর আবার দৃশ্যটা যদি এই হয় যে, সেই সারমেয় বাহিনী বুদাপেস্টের পথ ধরে দৌড়াচ্ছে!
আশ্চর্য, পরে ঠিক এই জলজ্যান্ত, রক্তমাংসের দন্তী-নখী সারমেয় বাহিনীই দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে৷ মুন্ড্রুৎসো নিজেই বলেছেন, ‘‘লাইফ অফ পাই''-এর বাঘটির মতো কম্পিউটারে সৃষ্ট জীবজন্তু তাঁর অন্যদের মতোই ভালো লাগে, কিন্তু তাঁর ছবিতে ওটা কাজ করত না৷ আর পুচ্ছযুক্ত, সজীব, জলজ্যান্ত ফিল্মস্টারদের জন্যও ইতিমধ্যে দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ অমুক নেড়ির মুখ কিংবা ‘অভিনয়' ভালো লেগেছে? চিন্তা কি, অ্যাডপ্ট করে নেন!