ব্রাজিলে রাস্তায় ফুটবল খেলা শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ স্বয়ং ব্ল্যাক পার্ল পেলের উত্থানও ঐ গলির ফুটবল থেকে৷ তাই রিও ডি জানেরোয় বার্তা সংস্থার এএফপি-র কার্যালয়ের চিফ ফটোগ্রাফারের মাথায় আসে একটা অদ্ভুত আইডিয়া৷
বিজ্ঞাপন
ফুটবল মানে একটা প্যাশন৷ সেই প্যাশনটাকেই ছবিকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রশিল্পী ক্রিস্টফ সাইমন৷ তবে তিনি চেয়েছিলেন, রিও-র মতো শহরের ফাভেলা, অর্থাৎ বস্তির রাস্তায় যে সব ছেলেরা ফুটবল খেলে, তাদের চোখ দিয়ে সেই প্যাশনকে দেখতে এবং ধরে রাখতে৷ সেজন্য তিনি বেছে নেন রিও-র যেমন কুখ্যাত, তেমনই সুবিখ্যাত ‘সিটি অফ গড’ বা ‘ঈশ্বরের শহর’ বস্তিটিকে৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
সাইমনের ভাষ্যে: ‘‘ব্রাজিলের ফাভেলাগুলোতে বাচ্চারা ফুটবল খেলে সর্বসময় এবং সর্বত্র৷ পুরনো ফাটাছেঁড়া ফুটবল নিয়ে পোড়ো জমিতে কিংবা দেয়ালে বল কিক করে৷’’ বিশ্বকাপ আসছে, তাই সাইমন নাকি ব্রাজিলিয়ানদের ফুটবলপ্রীতি নিয়ে ছবি তোলার কথা ভাবছিলেন৷ এর আগে তিনি রিও-র বিভিন্ন বস্তিতে পুলিশের ‘শান্তি অভিযানের’ ছবি তুলেছিলেন৷ তখন ফাভেলার রাস্তায় সাইমনের পিছনে ফেউ-এর মতো বেড়াতো এই ছেলে-ছোকরার দল৷
ওদিকে সাইমনের ৫০ বয়স পার হতে চলেছে৷ ফটোগ্রাফার হিসেবে যা কিছু শিখেছেন, তা এবার কাউকে শিখিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে৷ সেখানেও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফাভেলার ঐ ছেলেদের মুখ৷ রাস্তার ফুটবলের নাম করে ওদের ক্যামেরার কাজ শেখালে কেমন হয়? খোঁজ নিয়ে দেখলেন, জাপানের নিকন কোম্পানি বিনামূল্যে দশটি ওয়াটারপ্রুফ ‘কুলপিক্স’ ক্যামেরা দিতে প্রস্তুত৷
তখন ‘সিটি অফ গড’ বস্তিতে একটি ফটোর দোকান চালান সাইমনের এক বন্ধু টোনি বারোস৷ এই টোনি আবার চেনেন ফাভেলার সব বাসিন্দা ও তাঁদের ছেলেপিলেদের৷ মাস তিনেকের জন্য এই সব বিচ্ছুদের সাইমনের সাগরেদ করে দেওয়া তাঁর পক্ষে শক্ত কাজ নয়৷ কাজেই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস অবধি প্রত্যেক সপ্তাহান্তে টোনি আর সাইমন তিন থেকে দশজন অবধি বাচ্চাদের নিয়ে গলির ফুটবলের ছবি তুলতে বেরোতেন৷ খুদে ফটোগ্রাফারদের বয়স দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে৷ তারা তিন-চার ঘণ্টা থেকে শুরু করে সারাদিন অবধি ছবি তুলত৷ তারপর তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে হতো৷
জন্মেই যেমন কেউ ফুটবলার হয় না, তেমন জন্মেই কেউ ফটোগ্রাফার হয় না৷ সাইমনকে তাঁর সাগরেদদের অনেক কিছু শেখাতে হয়েছে: যেমন ছবিতে নিজেদের দেখালে চলবে না; যাদের ছবি তুলবে, তারা যেন স্বাভাবিক থাকে, পোজ না করে; কোনোদিন ফ্ল্যাশ ব্যবহার কোরো না, ইত্যাদি৷ এই শিক্ষার পরিণতি: ছেলেদের তোলা ছবিগুলো পুরোপুরি অথেন্টিক, মানে বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে, বলে সাইমন মনে করেন৷