1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাথরে হলোকস্টের স্মৃতি

৩ মে ২০১৪

জার্মানে নাম দেওয়া হয়েছে ‘‘স্টলপারস্টাইন’’: অর্থাৎ যে পাথরে হোঁচট খেতে হয়; হোঁচট খেয়ে অজান্তেই স্মরণ করতে হয়, সামনের বাড়িটিতে এমন কোনো মানুষ বাস করতেন, যাকে নাৎসি নিধনযজ্ঞের শিকার হতে হয়েছিল৷

বার্লিনে কয়েকটি ‘হোঁচট খাওয়া পাথর'ছবি: DW/R. Pelzl

যে শিল্পীর মাথায় প্রথম এই ‘হোঁচট খাওয়ার পাথর' বসানোর ধারণাটা আসে, তিনি হলেন শিল্পী গ্যুন্টার ডেমনিশ, যাঁর বাস কোলোন শহরে৷ ১৯৯৬ সালে তিনি বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গ অঞ্চলে ৪১টি ‘স্টলপারস্টাইন' বসান৷ স্টলপারস্টাইন বলতে আর কিছু নয়, ফুটপাথের ছোট ছোট চৌকো পাথরগুলোর কয়েকটাকে তুলে ফেলে, তার বদলে সেখানে কংক্রিটের একটি স্ল্যাব বসানো, যে স্ল্যাবের উপরে একটি পিতলের ফলকে খোদাই করা এই ধরনের কিছু তথ্য ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ানো পথচারীর নজরে পড়বে:

‘ডক্টর এরিশ ব্লুমেনটাল এখানে বাস করতেন: জন্ম ১৮৮৩ সাল; ২৯.১১.১৯৪২ তারিখে পাঠানো হয় আউশভিৎস বন্দিশিবিরে৷ সেখানেই হত্যা করা হয়৷ আর এখানে থাকতেন হেলেনে ব্লুমেনটাল: জন্ম ১৮৮৮, আউশভিৎসে পাঠানো হয় ২৯.১১.১৯৪২ তারিখে৷ সেখানেই মৃত্যু৷'

কোলোন শহরে একটি ‘হোঁচট খাওয়া পাথর'ছবি: DW/B.Cöllen

এটা অবশ্য একটি সাম্প্রতিক ‘হোঁচট খাওয়া পাথরে' উৎকীর্ণ বার্তার অনুলিপি৷ গ্যুন্টার ডেমনিশ তাঁর প্রথম স্টলপারস্টাইন-গুলি যাদের উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের নাম ছিল ক্রয়েৎসব্যার্গ অঞ্চলের স্থানীয় ইতিহাস সংক্রান্ত একটি বইতে৷ ডেমনিশ সেই বইটিতেই এলাকার প্রাক্তন ইহুদি বাসিন্দাদের হদিশ খুঁজে পান৷ ফুটপাথের পাথর খুঁড়ে সেখানে ক্রয়েৎব্যার্গের হারানো ইহুদি বাসিন্দাদের স্মৃতিফলক বসানোটা ছিল বস্তুত বেআইনি কাজ, কিন্তু ডেমনিশ সেই বেআইনি কাজ শুরু করার তিন মাসের মধ্যেই তাঁকে সরকারিভাবে প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়৷

আজ বার্লিন এবং ইউরোপের অন্যান্য ১৬টি শহরে মোট ৪৫ হাজার স্টলপারস্টাইন বা স্টাম্বলিং ব্লক বসানো হয়েছে৷ শুধু বার্লিনেই পাঁচ হাজার পাঁচশো ‘হোঁচট খাওয়ার পাথর' আছে৷ ইউরোপের সর্বত্র এ ধরনের নির্বাসিত, নিপীড়িত, স্থানান্তরিত ও নিহত ইহুদি – এবং অপরাপর জাতির – মানুষদের স্মৃতিতে ফুটপাথে ফলক বসানোর প্রবণতা বেড়ে চলেছে৷ সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে গ্যুন্টার ডেমনিশের স্টলপারস্টাইনের চাহিদা৷ এক-একটির দাম: ১২০ ইউরো৷ তাতেই এক বছর অবধি ওয়েটিং লিস্ট৷

ছবি: DW

শিল্পী স্বয়ং কিংবা যে সব বেসরকারি ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান এই সব স্টলপারস্টাইনের ফরমায়েশ দিচ্ছেন ও তার ব্যয়বহন করছেন, তাদের কেউই ব্যাপারটাকে নিছক বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন না৷ নাৎসি আমলে কোলোন থেকে বিতাড়িত সিন্টি ও রোমা ভবঘুরে উপজাতির মানুষদের স্মরণে আয়োজিত একটি কলা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার সময় ডেমনিশের মাথায় আসে: হলোকস্টের শিকার হয়েছেন যে সব মানুষ, তারা যে যুদ্ধপূর্ব জার্মান তথা ইউরোপীয় সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন, সেটা দেখানো প্রয়োজন৷ সেখান থেকেই স্টলপারস্টাইনের সূচনা৷ এ গুলির ফরমায়েশ দেন প্রধানত নিহতদের আত্মীয়স্বজন কিংবা অতীত কি বর্তমান পড়শিরা৷

বার্লিনের পথে পথে আজ এ ধরনের স্টলপারস্টাইন চোখে পড়বে৷ জার্মানরা হয়তো এই স্মৃতির পাথরগুলোর মধ্যে দিয়ে সেই চিরন্তন কথাগুলিই বলার চেষ্টা করছেন: ‘ভুলি নাই৷'

এসি/এসবি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ