মাত্র ১৭ সেকেন্ডের এই কথোপকথন ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি৷ সেখানে তিনি এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘‘বিলাসবহুল গাড়িতে চড়লে যেন কারো কারো মাথা আর কাজ করে না৷ এসব মানুষ আমাদের দেশটাকে পরিচ্ছন্ন রাখবেন? কোথাও যদি এমন অন্যায় হতে দেখেন, এরকমই করুন এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিন৷’’
সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিও৷ বিরাট এবং আনুশকার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের কেউ কেউ রাস্তায় প্লাস্টিক ছুড়ে ফেলা লোকটিকে একহাত নিয়েছেন৷ তবে ভিন্নমতও এসেছে৷ অনেকেই বলছেন, আনুশকার প্রতিবাদের ধরণটা খুব অনুকরণীয় হয়নি৷ কেউ কেউ আবার বিরাটের কাছেই পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘আপনি কেন আপনার স্ত্রী'র সাহসিকতা প্রদর্শনের ঘটনা ভিডিও করছেন? কেন তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছেন? আপনি কি এই প্রথম কাউকে গাড়ি থেকে রাস্তায় প্লাস্টিক ছুড়তে দেখলেন?’’
পাশাপাশি, বিরাট এবং আনুশকার উদ্দেশ্যে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আপনাদের উদ্দেশ্য যদি কাউকে উপদেশ দেওয়া হতো, তাহলে ওরকম বসের মতো আচরণ না করে বন্ধুসুলভ হতেন৷ এভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করাটা খুব সস্তা ব্যাপার৷’’
এভাবে বিরাট আর আনুশকার বিরুদ্ধে কিছু লোক মুখ খুলতে শুরু করায় প্লাস্টিক ছুড়ে ফেলা আরহান সিং-ও এক সময় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন ফেসবুক পাতায়৷
সেখানে প্রথমেই তিনি জানান, অসতর্কতাবশত রাস্তায় প্লাস্টিক ফেলায় তিনি দুঃখিত৷ তবে এর পাশাপাশি আনুশকা শর্মার আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ তাঁর মতে, আনুশকার আচরণে সৌজন্যবোধের ঘাটতি ছিল৷ এমন অনুভূতি থেকেই তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের কথোপকথনে মিসেস আনুশকা শর্মা কোহলি যদি একটু সৌজন্যবোধ, একটু বিনয় দেখাতেন, তাহলে তো তাঁর তারকাখ্যাতি কমে যেতো না!... আমার বিলাসবহুল গাড়ির জানালা দিয়ে ভুলবশত যে নোংরা বাইরে গিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি নোংরা আপনার (আনুশকা) মুখ, আপনার বিলাসবহুল গাড়ি থেকে বেরিয়েছে৷’’ বিরাট কোহলি যে ভিডিও করে ঘটনাটি প্রচার করেছেন, তারও সমালোচনা করেছেন আরহান সিং৷
ক্রিকেট মাঠের মতো বিতর্কের মাঠেও বিরাট কোহলি অবশ্য কাউকে ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন৷ সমালোচকদের লক্ষ্য করে তাই তাঁর একটাই কথা, ‘‘অনেকেই আছেন, যাঁরা এমন সাহসি কিছু করে দেখাতে পারেন না, তাঁরা এই ব্যাপারটিকে হাল্কা করে দেখছেন৷ কী লজ্জা!’’
এসিবি/জেডএইচ
প্লাস্টিক আবর্জনার পাহাড় জমছে পশ্চিম বলকানে
ইউরোপে পরিবেশ সমস্যা যে কোথায় পৌঁছাতে পারে, তার নমুনা হল পশ্চিম বলকানের দেশগুলি৷ কয়লা-থেকে-বিদ্যুৎ, অবাধে গাছ কাটা আর প্লাস্টিক আবর্জনার ফলে পরিবেশ বিপন্ন৷
ছবি: picture alliance/M. Strmoti
বেআইনি ময়লা ফেলা চলেছে সর্বত্র
মধ্য বসনিয়ার রাদুসা অঞ্চলটি মনোরম হতে পারত – যদি না সেখানে প্লাস্টিক আবর্জনার পাহাড় জমত৷ প্রায় দশ হাজার ছোট-বড় বেআইনি ল্যান্ডফিল বা গারবেজ ডাম্প, অর্থাৎ ময়লা ফেলার জায়গা আছে এখানে, বলে অনুমান করা হয় – যার মধ্যে শুধু পাঁচটি নাকি লাইসেন্স প্রাপ্ত এবং পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত সরকারি রীতিনীতি মেনে চলে৷ বসনিয়ায় মোট আবর্জনার মাত্র তিন শতাংশ রিসাইকেল করা হয়৷ প্রায় সমগ্র বলকান অঞ্চলে একই পরিস্থিতি৷
ছবি: A. Kamber
আগুন লাগলে পর...
২০১৭ সালের গ্রীষ্মে ড্যানিউব নদীর তীরে ভিংকা শহরের ময়লা ফেলার জায়গাটিতে আগুন লাগে৷ এক মাস ধরে সেই আগুন জ্বলতে থাকে৷ প্লাস্টিক, গাড়ির টায়ার আর ইলেকট্রিকের সাজসরঞ্জাম পোড়ার বিষাক্ত ধোঁয়া কাছের বেলগ্রেড শহরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে – বেলগ্রেড হল সার্বিয়ার রাজধানী৷ ভিংকায় প্রতিদিন ২,৭০০ টন ময়লা ফেলা হয়৷ আবর্জনার পাহাড়ের তলায় মিথেন গ্যাস জমে, পরে সেই গ্যাসে যখন আগুন ধরে, তখন দমকলও অসহায়৷
ছবি: Google Earth
প্লাস্টিকের নদী
অগুনতি প্লাস্টিকের বোতল নদীনালায় গিয়ে পড়ে, যেমন এখানে দক্ষিণ সার্বিয়ার মোরাভা নদীতে৷ এছাড়া রয়েছে পয়ঃপ্রণালী আর কলকারখানার ময়লা পানি: তা-ও গিয়ে পড়ে নদীর জলে৷ সার্বিয়ায় ময়লা পানির মাত্র আট শতাংশ সিউয়েজ প্ল্যান্টে পরিষ্কার করা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য সার্বিয়াকে তার পরিবেশ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে অর্থাৎ হাজার কোটি ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে – যা কিনা তার বাৎসরিক সরকারি বাজেটের চেয়ে বেশি!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Vojinovic
ময়লা কুড়িয়ে জীবনধারণ
উত্তর-পশ্চিম ম্যাসিডোনিয়ার গোস্তিভার শহরের ময়লা ফেলার জায়গাটিকে দেখলে বেআইনি বলে মনে হতে পারে৷ এখানে সব ধরনের ময়লা এসে পড়ে – তারই মধ্যে এটা-সেটা কুড়িয়ে ও বেচে দিন গুজরান করেন কিছু মানুষ৷ এবার নাকি আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর অর্থানুকুল্যে এই ল্যান্ডফিলটিতে ৫০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করা হবে – তবে আবর্জনা রিসাইক্লিংয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই৷
ছবি: DW/S. Toevski
শুধু কাচের বোতলের উপর ডিপোজিট
পশ্চিম বলকান প্লাস্টিক আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে কেন (যেমন ছবিতে ম্যাসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়েতে), সে প্রশ্নের একটি উত্তর হলো: এখানে শুধুমাত্র কাচের বোতলের ওপর ডিপোজিট নেওয়া হয়৷ ম্যাসিডোনিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিতেও শুধুমাত্র কাচের তৈরি বিয়ারের বোতলের উপর ডিপোজিট নেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L.Cameron
প্লাস্টিকের বোতলের পরেই আসে প্লাস্টিকের ব্যাগ
গোটা বলকান জুড়ে দোকানে কিছু কেনাকাটা করলে, তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া যায় – ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করতে হলে প্রথমেই যা বদলাতে হবে৷ আলবেনিয়া ২০১৮ সালের পয়লা জুলাই থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করছে৷ কিন্তু গোটা বলকান জুড়ে তা ঘটা অবধি আইওনিয়ান সাগরের তীরে হিমারার উপকূলে সম্ভবত এই দৃশ্যই বজায় থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/R. Haid
সাগর যা বয়ে আনে
স্থানটি ক্রোয়েশিয়ার পর্যটকপ্রিয় দুব্রোভনিক শহরের প্রাচীন অংশ৷ কিন্তু সেখানে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যে টন টন প্লাস্টিক ভেসে আসে, তার অধিকাংশই এসেছিল আলবেনিয়া থেকে – এড্রিয়াটিক সাগরের ঢেউয়ের দোলায় ভেসে ভেসে৷
ছবি: picture alliance/PIXSELL/G. Jelavic
এক ঝাঁক গাংচিল
ডালমেশিয়ায় পর্যটকদের প্রিয় স্প্লিট শহরের কাছেই এলাকার একমাত্র বৈধ ল্যান্ডফিল৷ ইইউ-এর সদস্যদেশ ক্রোয়েশিয়া অধিবাসী প্রতি ৪০৩ কিলোগ্রাম আবর্জনা সৃষ্টি করে থাকে, যা কিনা ইইউ-এ দেশগুলির গড়, বাসিন্দা প্রতি ৪৮০ কিলোর চেয়ে বেশ কিছুটা কম৷ পশ্চিম বলকানে এক মন্টেনিগ্রো (৫৩৩ কিলো) ছাড়া বাকি সবাই ইইউ গড়ের নীচে (আলবেনিয়া ৩৯৬ কিলো, বসনিয়া ৩১১ কিলো ও সার্বিয়া ২৬৮ কিলো) – বলছে ইউরোস্ট্যাট-এর পরিসংখ্যান৷
ছবি: picture alliance/M. Strmoti
পথিকৃৎ
ক্রোয়েশিয়ার কৃক দ্বীপটিতে কিন্তু ইতিমধ্যেই আবর্জনার ৬০ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়ে থাকে – যার জন্য বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা পৃথক পৃথকভাবে জমা করা প্রয়োজন৷ কৃক দ্বীপের লক্ষ্য হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপের একমাত্র জ্বালানি-স্বনির্ভর দ্বীপ হওয়া৷