স্মৃতিকথা লিখেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সোনিয়া-মনমোহনের প্রশংসা করলেও ওবামা সমালোচনা করেছেন রাহুলের।
বিজ্ঞাপন
রাহুল গান্ধীকে বিজেপি নেতারা হামেশাই 'পাপ্পু' বলে থাকেন। বাংলায় যার অর্থ 'বোকা ছেলে'। অমিত শাহ তো তাঁকে রাহুল বাবা বলে সম্বোধন করেন। অর্থাৎ, তিনি নেহাতই বাচ্চা ছেলে, হাবাগোবা। আর কংগ্রেসের যুবরাজ সম্পর্কে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ধারণা, ''তিনি খুবই নার্ভাস, তাঁর গুণগুলি পরিপক্ক হয়নি।'' ওবামা রাহুলের তুলনা করেছেন ক্লাসের এক ছাত্রে সঙ্গে। যে কোসওয়ার্ক করে শিক্ষককে ইমপ্রেস করতে চায়, কিন্তু মূল বিষয়টি সম্পর্কে যার জ্ঞানের কোনো গভীরতা নেই।
ওবামা এই মন্তব্য করেছেন তাঁর স্মৃতিকথা 'আ প্রমিসড ল্যান্ড'-এ। আর কয়েকদিনের মধ্যেই বইটি প্রকাশিত হবে। তার আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস বইটির যে পর্যালোচনা করেছে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে রাহুলের প্রতি ওবামার মনোভাব। পঞ্চাশে পা দিয়ে ফেলা রাহুলকে অপরিণত বলেই মনে করছেন বারাক ওবামা। রাহুলকে আগেও এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। বিজেপি যে তাঁকে পাপ্পু বলে, তাতে তাঁর কেমন লাগে? রাহুলের জবাব ছিল, ওরা যা খুশি বলতে পারে। এর ফলে বিজেপি নেতাদের মানসিকতা বোঝা যায়। তাতে তাঁর কিছু এসে যায় না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু বিজেপি নয়, ওবামার মতো অনেকের মনোভাব তাঁর পক্ষে খুব আশাব্যঞ্জক নয়।
যে মেয়ের কাজ ওবামাকেও ছুঁয়ে গেছে
জাপানের ১২ বছরের মেয়ে সাদাকো সাসাকি মৃত্যুর আগে কাগজ দিয়ে এক হাজারের বেশি সারস পাখি তৈরি করেছে৷ এখন তা বিশ্বব্যাপী শান্তি ও আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
সাদাকো সাসাকি কে?
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় পরমাণু বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ ওটাই ছিল বিশ্বে প্রথম আণবিক বোমা নিক্ষেপের ঘটনা৷ ঐ হামলায় সঙ্গে সঙ্গে মারা যান ৮০ হাজার মানুষ৷ এরপর তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও প্রায় কয়েক হাজার জন৷ তাদের একজন সাদাকো সাসাকি৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
মৃত্যু
হিরোশিমায় হামলার সময় সাসাকির বয়স ছিল দুই৷ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও তার শরীরে তেজস্ক্রিয় উপকরণ ঢুকে গিয়েছিল৷ যদিও প্রথমে বিষয়টি বোঝা যায়নি৷ একদম সুস্থ বাচ্চা হিসেবে পড়াশোনা করছিল সে৷ এরপর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তার লিউকেমিয়া ধরা পড়ে৷ এর তিন মাস পর ১৯৫৫ সালের ২৫ অক্টোবর সাসাকি মারা যায়৷ ছবিতে সাসাকির দুই বছরের বড় ভাই মাসাহিরো সাসাকিকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে৷ আর ফ্রেমে আছে সাসাকির ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
বাঁচার আশা
কোনো ব্যক্তি কাগজ দিয়ে এক হাজার সারস পাখি বানালে তার একটি আশা পূরণের আশ্বাস দেয়া আছে জাপানের এক লোককাহিনিতে৷ এতে বিশ্বাস রেখে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় হাজারের বেশি সারস পাখি তৈরি করেছিল সাসাকি৷ এর বিনিময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আশা করেছিল সে৷ যদিও তা হয়নি৷ ছবিতে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের পার্ল হারবারের ইউএসএস অ্যারিজোনা মেমোরিয়ালে সাসাকির তৈরি একটি সারস পাখি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
তবে শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে...
সাসাকির আশা পূরণ না হলেও তার সারস তৈরির কাহিনি এখন সারা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করছে৷ আশা ও শান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে কাগজের তৈরি সারস৷ ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবরের এই ছবিতে হংকংয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভস্থলে কাগজের তৈরি সারস পাখি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/S. Vera
স্মৃতিস্তম্ভ
১৯৫৮ সালে জাপানের হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে সাসাকির একটি ভাস্কর্য (ছবি) স্থাপন করা হয়৷ তার হাতে সোনালি রংয়ের একটি সারস শোভা পাচ্ছে৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল পিস পার্কেও সাসাকির একটি ভাস্কর্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/F. Gentsch
ওবামাও সারস বানিয়েছেন
প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৬ সালে হিরোশিমা সফর করেছিলেন বারাক ওবামা৷ সেইসময় তিনি কাগজ দিয়ে চারটি সারস পাখি বানিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
কেমন বানিয়েছেন ওবামা?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তৈরি কাগজের একটি সারস৷ ওবামার সারসগুলো এখন হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে রাখা আছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo
7 ছবি1 | 7
আরো দুই ভারতীয় রাজনীতিক সম্পর্কে ওবামা মন্তব্য করেছেন তাঁর বইয়ে। মনমোহন সিং এবং সোনিয়া গান্ধী। মনমোহনের প্রশংসা করেছেন এবং সোনিয়া সম্পর্কে বলেছেন, ''চার্লি ক্রিস্ট বা আর ইমানুয়েলের উদাহরণ দিয়ে ছেলেরা কতটা হ্যান্ডসাম তা আমাদের বোঝানো হয়। মেয়েদের সৌন্দর্য নিয়ে সেরকম বলা হয় না। তবে সোনিয়া গান্ধীর মতো দুই একজন ব্যতিক্রম আছেন।'' আর মনমোহনের প্রশংসা করেছেন তাঁর ''সততা ও ন্যায়পরায়ণতা' নিয়ে।
এর আগে ২০১৫ সালে তিনি একটি নিবন্ধে নরেন্দ্র মোদীর ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ছেলেবেলায় যিনি তাঁর বাবকে চা বিক্রি করতে সাহায্য করেছেন, তিনি এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ওই দারিদ্র্য থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা ভারতের গতিময়তাকেই বোঝায়।
দেখা যাচ্ছে, রাহুল গান্ধী বাদ দিয়ে বাকিরা সকলেই ওবামার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অথচ, ২০১৫ সালে রাহুল ওবামার সঙ্গে দেখা করে তা টুইট করে বলেছিলেন, তিনি ওই সাক্ষাৎকারে কতটা খুশি। তবে ওবামার মূল্যায়নের পর তাঁর সেই খুশি উবে যেতেই পারে।