উত্তর প্রদেশের আমেথি সংসদীয় কেন্দ্র দেশের অন্য সব আসনের তুলনায় রাহুল ও তাঁর কংগ্রেস পার্টির কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ৷ কারণ গান্ধী পরিবারের দুর্গ বলে পরিচিত আমেথি আসনটি ধরে রাখতে না পারলে সেটা হবে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর প্রদেশের আমেথি সংসদীয় আসন গান্ধী পরিবারের দুর্গ – রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী থেকে রাহুল গান্ধী৷ গত দুটি নির্বাচনে রাহুল কার্যত বিনা চ্যালেঞ্জেই ধরে রাখতে পেরেছিলেন এই আসন৷ বাড়িয়েছিলেন ভোটের ব্যবধান৷ ২০০৪-এর নির্বাচনে রাহুল জিতেছিলেন ২ লাখ ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনে সেই ব্যবধান বেড়ে হয়েছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার৷
কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের দুর্গ আমেথি আসনে ভূমিগত বাস্তবতায় ভোটারদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একটা পরিবর্তনের প্রবণতা৷ একটা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া৷ কারণ প্রত্যাশামত উন্নয়ন হয়নি৷ কোথায় যেন একটা চাপা অসন্তোষের ছায়া ভোটারদের মনে৷ সেটাকে ভোট প্রচারে কাজে লাগিয়ে গান্ধী পরিবারের দুর্গে নিঃশব্দে ঢুকে পড়েছে বিজেপি৷ সেটা আঁচ করতে পেরে কংগ্রেস নেতৃত্ব আমেথি কেন্দ্রের নির্বাচনি ময়দানে রাহুলের ভোট প্রচারে নামিয়েছে রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (বাড্রা) এবং সোনিয়া গান্ধীকে৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
রাহুলের ভোট প্রচারে নেমে প্রিয়াঙ্কা তাঁর নিজস্ব ভাষায় তুলোধোনা করে চলেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীকে৷ কারণ বিজেপি, বিশেষ করে মোদীকে আমেথির চাবি হস্তান্তরিত না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কংগ্রেস৷ তার পাশে দাঁড়িয়েছে বন্ধুদল মুলায়ম সিং-এর সমাজবাদী পার্টি৷ রাহুলের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী দেয়নি৷ অপর বন্ধু দল বহুজন সমাজ পার্টি দিয়েছে অতি দুর্বল প্রার্থী৷ আম আদমি প্রার্থী কুমার বিশ্বাস কিছু ভোট কাটবেন৷ তবে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে আমেথি আসন যেন একটা মর্যাদার লড়াই৷
রাহুলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিভি সিরিয়ালের পরিচিত মুখ স্মৃতি ইরাণি৷ বিজেপি ক্যাডারে রীতিমত ওজনদার প্রার্থী৷ যদিও প্রিয়াঙ্কার জিজ্ঞাসা, কে এই স্মৃতি ইরাণি? ভাবগত ব্যঞ্জনা যেন কোথাকার কে ইরাণি, সে রাহুলকে চ্যালেঞ্জ করছেন? অন্যদিকে গৈরিক ব্রিগেডের মূল কৌশলনীতি ইরাণি-রাহুলের জবরদস্ত লড়াইয়ের পর হারজিতের ব্যবধানটা যেন দেখিয়ে দেয় যে, গান্ধী পরিবারের দুর্গের ইঁট খসতে শুরু করেছে৷ আর সেই লক্ষ্যে একদিকে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির প্রচার অভিযানের প্রধান মোদীর ডান হাত অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিজেপির পুরো সাংগঠনিক শক্তি এবং অন্যদিকে দলের দিশা নির্দেশক আরএসএস তার সর্বশক্তি দিয়ে ইরাণিকে জেতাতে আমেথি ময়দানে নেমে পড়েছে ভোটে একটা নাটকীয় ফলাফলের আশায়৷
গত সোমবার ভোট প্রচারের শেষদিনে বিজেপি প্রার্থী ইরাণির হয়ে জনসভায় ভাষণ দিলেন নরেন্দ্র মোদী৷ জনসভায় যাতে অন্তত লাখ দুয়েক লোক হয় তার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দিনরাত খেটেছেন৷ এটা বোঝাতে যে ‘মোদী ঢেউ' আমেথিতেও আছড়ে পড়েছে৷ রাহলকে কোণঠাসা করতে বিজেপি প্রকাশ করেছে ১৬ পাতার পুস্তিকা৷ তাতে তুলে ধরা হয়েছে প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট বাড্রার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ, রাহুল গান্ধীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কটুক্তি৷ যেমন রাহুলের শরীরে বইছে বিদেশি রক্ত৷
মোটকথা, রাহুলের পক্ষে আমেথির মাটি আর আগের মত নরম নেই৷ শক্ত মাটিতে হাঁটতে হবে রাহুলকে৷ ৭ই মের পর এবারের শেষ রণ বারাণসী ১২ই মে৷ আমেথির পর বারাণসীতে রাহুল যাবেন তাঁর দলবল নিয়ে মোদী বধে৷ কিন্তু কতটা সফল হবেন রাহুল বিশ্লেষকদের মনে রয়ে গেছে ঘোরতর সংশয়৷