1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাহুল গান্ধীর প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ, পুলিশে অভিযোগ

২০ ডিসেম্বর ২০২৪

রাহুল গান্ধী তাদের দুই সাংসদকে ধাক্কা মেরে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন বলে পুলিশে অভিযোগ করেছে বিজেপি। তার এমন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ একই দিনে বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধেও ধাক্কা মারার অভিযোগ করেছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে৷

সংসদ ভবন চত্বরে আম্বেডকরের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
অম্বেডকরের ছবি নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর পরই রাহুল গান্ধী মকর দ্বার দিয়ে সংসদে ঢুকতে যান। ছবি: Indian National Congress party

বৃহস্পতিবার সংসদভবন চত্বর ছিল রীতিমতো ঘটনাবহুল। সকাল দশটার পর থেকে নতুন সংসদ ভবনের মূল প্রবেশপথ মকর দ্বারে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি সাংসদরা। তার থেকে কিছুটা দূরে বাবাসাহেব আম্বেডকরকে অমিত শাহ অপমান করেছেন অভিযোগ করে প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন কংগ্রেস সাংসদরা।

কী হয়েছিল?

পৌনে এগারোটা নাগাদ কংগ্রেস সাংসদরা সিদ্ধান্ত নেন, তারা এবার মকর দ্বার দিয়ে নতুন সংসদ ভবনে ঢুকবেন। রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস সাংসদরা মকর দ্বারে যান। তারপর সেখানে শুরু হয়

 ধাক্কাধাক্কি।

বিজেপি-র অভিযোগ, ভিতরে ঢোকার জন্য পাশ দিয়ে একটা জায়গা করে রেখেছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। কিন্তু রাহুল গান্ধী মাঝখান দিয়ে বিজেপি বিক্ষোভকে চিরে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখনই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। রাহুল বিজেপি সাংসদ  মুকেশ সেনাপতিকে ধাক্কা দেন। তিনি পড়ে যান বর্ষীয়ান সাংসদ প্রতাপ ষড়ঙ্গীর উপর। একজনের মাথার পিছনে, অন্যজনের মাথার সামনে আঘাত লাগে। রক্ত পড়তে থাকে।

রাহুল তখন ষড়ঙ্গীকে দেখতে তার কাছে যান। সেসময় বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে চিৎকার করে বলেন, ''রাহুল, আপনার এরকম ব্যবহার করার জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত।''রাহুল বলেন, তাকেই ধাক্কা দেয়া হয়েছিল।

বিজেপি-র দুই আহত সাংসদকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক জানান, দুজনের মাথায় চোট আছে।

স্পিকার ওম বিড়লা সাংসদদের দেখতে হাসপাতালে যান। প্রধানমন্ত্রী ফোন করে তাদের খবর নেন।

পরে সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, বাঁসুরী স্বরাজ ও হেমাঙ্গ জোশী পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। অনুরাগ জানিয়েছেন, রাহুলের বিরুদ্ধে সাংসদদের নিগ্রহ করা, উসকানি দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্য়মের রিপোর্ট, খুনের চেষ্টার ধারাও প্রথমে যোগ করা হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। এই অভিযোগে রাহুলকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের আছে

শুধু এই ধরনের প্রতিবাদের রাজনীতি করা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ রাহুল গান্ধী।ছবি: Indian National Congress party

নাগাল্যান্ডের বিজেপি সাংসদ ফাংনন কনিয়াক রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, রাহুল গান্ধী তার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। এর ফলে তার খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল। রাহুল চিৎকার করে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও তার অভিযোগ। ধনখড় জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।

রাহুলের বক্তব্য

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, ''আপনাদের ক্যামেরায় সবকিছু নিশ্চয়ই ধরা আছে। আমি সংসদ ভবনের ভিতরে ঢুকতে গেছিলাম। বিজেপি সাংসদরা আমাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তারা আমাকে ধাক্কা মারে। হুমকি দেয়। তাই এটা হয়েছে। ওটা সংসদ ভবনে ঢোকার দরজা। সংসদ ভবনে ঢোকার অধিকার আমাদের আছে। বিজেপি সাংসদরা আমাদের ভিতরে ঢুকতে দিতে চায়নি। মূল ঘটনা হলো, ওরা সংবিধানকে আক্রমণ করছে,আম্বেডকরজিকে অপমান করছে।''

সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল বলেন, ''কংগ্রেসসহ ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি অম্বেডকরকে অপমান করার জন্য অমিত শাহের ইস্তফার দাবি জানাচ্ছিল। আর বিজেপি সেই দাবি থেকে নজর সরানোর জন্য এই কাজ করলো। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। বিজেপি সাংসদরা দরজা জুড়ে দাঁড়িয়েছিল। ওরা আমাদের ভিতরে ঢুকতে দিতে চায়নি।''

মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ধাক্কা মারার অভিযোগ

কংগ্রেসের অভিযোগ,  বিজেপি সাংসদরা কংগ্রেস সভাপতি ও দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। খাড়গে সিঁড়িতে বসে পড়েন। তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছেন।

লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে খাড়গে অভিযোগ করেছেন, ইন্ডিয়া দলগুলির এমপিদের সঙ্গে তিনি যখন মকর দ্বারে আসছিলেন, তখন বিজেপি সাংসদরা তাকে ধাক্কা মারে। তিনি ব্য়ালান্স হারিয়ে ফেলেন ও সিঁড়িতে বসে পড়েন। তার হাঁটুতে আঘাত লাগে। হাঁটুতে আগে অপারেশন হয়েছে। তারপর কংগ্রেস সাংসদরা একটা চেয়ার জোগাড় করে আনলে তিনি বসে পড়েন। তারপর অনেক কষ্ট করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনিরাজ্যসভায় যান।

খাড়গে লিখেছেন, ''আমি চাই, এই ঘটনার তদন্ত হোক। এটা শুধু আমার উপর নয়, রাজ্য়সভার বিরোধী নেতা ও কংগ্রেস সভাপতির উপরেও হামলা।''

পরে কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারির নেতৃত্বে কংগ্রেস সাংসদরা পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তারা বলেছেন, ৮৪ বছর বয়সি কংগ্রেস সভাপতি ও দলিত নেতাকে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। বিজেপি সাংসদরা এই কাজ করেছে। তারা বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধে এফআইআরের দাবি করেন।

প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ

রাহুল গান্ধী শুধু কংগ্রেস নেতা বা সাংসদ নন, তিনি লোকসভার বিরোধী নেতা। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, তার কাছ থেকে কি আরো দায়িত্বসম্পন্ন আচরণ,আরো সিরিয়াস রাজনীতি প্রত্যাশিত নয়?

প্রবীণ সাংবাদিক এবং অসমীয়া প্রতিদিনের ব্যুরো চিফ আশিস গুপ্তা ডিডাব্লিউকে রাহুল গান্ধীর মনে রাখা উচিত, লোকসভায় বিরোধী নেতার পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পূর্বসূরিরা বিরোধী নেতা হিসাবে অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। তার আচরণের উপর শুধু বিজেপি নয়, সারা দেশের নজর আছে। সেখানে তিনি জোর করে ঢুকতে যাবেন, কাউকে ধাক্কা দেবেন, এটা প্রত্যাশিত নয়।

আশিসের মতে, বিজেপি সবসময়ই চাইবে, রাহুল চালে ভুল করুন। অতাীতে তারা বারবার রাহুলকে রাজনীতির আঙিনায় পাপ্পু বা নাবালক বলে সম্বোধন করেছে। রাহুল যদি এই ধরনের কাজ করেন, তাহলে বুঝতে হবে, বিজেপি ঠিক কথাই বলছে। রাজনৈতিক লড়াই করাটা এক কথা, আর এইভাবে সাংসদদের ধাক্কাধাক্কি করাটা অন্য কথা। এটা তার ভাবমূর্তির সঙ্গে, তার পদের গাম্ভীর্যের সঙ্গে যায় না।

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিব্লিউকে বলেছেন, ''রাহুল গান্ধী সস্তা রাজনীতির পথে হাঁটছেন। ব্যাগ নিয়ে বার্তা দেয়ার রাজনীতি, রাজনাথকে ফুল দেয়ার রাজনীতি, আম্বেডকরের ছবি হাতে নিয়ে প্রতিবাদ দেখানোর রাজনীতির বাইরে যেতে পারছেন না। তিনি সংসদের ভিতরে আলোচনা করতে সরকারকে বাধ্য করতে পারছেন না। নতুন কোনো উপায়ে চাপ তৈরি করতে পারছেন না।''

শরদের মতে, ''এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঔদ্ধত্য। যার ফলে ইউপিএ ও ইন্ডিয়া শরিকরা ক্ষুব্ধ। তারা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে চলার কথা বলছেন। রাহুলের উচিত, সব বিরোধী দলকে নিয়ে চলা। সিরিয়াস রাজনীতি করা। টিভি-র দিকে তাকিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করা।''

শরদ বলেছেন, ''বিজেপি সাংসদ ষড়ঙ্গীর কাছে গিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সেখানেও তিনি সহমর্মিতা দেখাতে পারলেন না। উল্টে তাকে ধাক্কা দেয়া হয়েছিল বলে চলে গেলেন। এটা সংবেদনশীল মানুষের মতো কাজও হলো না।''

জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ