1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

পাঁচ বছর আগে ঠিক এই দিনে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পিলখানায় ঘটেছিল নৃশংস এক হত্যাযজ্ঞ৷ বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের হাতে জিম্মি হয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তারা৷ কয়েকজন প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবন দিতে হয়েছিল মোট ৭৪ জনকে৷

ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

নিম্ন আদালতে এই হত্যাযজ্ঞের বিচার হয়েছে ইতিমধ্যে৷ এখন উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর জওয়ানরা৷ তবে সেই আপিলের শুনানি এখনও শুরু হয়নি৷ তাই আজও নিহতদের স্বজনদের দাবি – ‘রায়ের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক৷'

ঐ হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর তানভীর হায়দার নূরের মা শাহানা নূর বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে এভাবে হত্যার জন্য বড় করিনি আমি৷ আমার ছেলে কোনো দোষ করেনি৷ এখনও প্রতিদিন বুকে যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমাতে যাই৷''

নিহত লে. কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘ছেলে হারানোর যে কী কষ্ট, সেটি কেবল একজন বাবাই বোঝেন৷ তাই আমার দাবি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে শহিদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হোক৷'' বলা বাহুল্য, দ্রুত রায়ের বাস্তবায়নও দেখতে চান তিনি৷

নিহত কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, ‘‘শহিদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে৷ ওরা খুঁজে বেড়াচ্ছে, কেন ওদের বাবাকে হত্যা করা হলো৷ সন্তানেরা হত্যাকারীদের সম্পর্কে জানতে চায়৷'' মঙ্গলবার সকালে বনানী কবরস্থানে ফুল দেয়ার পর এমন মন্তব্য স্বজনদের৷

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উচ্চ আদালত যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন – এ লক্ষ্যে আমরা আবেদন করবো৷ যদিও এখনও আপিলের পেপারবুক তৈরি হয়নি৷'' তিনি বলেন, হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে এখনও রয়েছে নানা ভয়৷ আগে ছিলেন তাঁরা বিচারাধীন মামলার আসামি৷ এখন তাঁরা সবাই তাঁদের সাজার কথা জানেন৷ তাই পরে যে কোনো বিচার কার্যক্রমে আদালতে আনা-নেয়ার জন্য সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হচ্ছে৷ এই ভীতি থেকেই বিস্ফোরক মামলার দিনক্ষণ পেছানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷

কয়েকজন প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবন দিতে হয়েছিল মোট ৭৪ জনকেছবি: DW

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম সরদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, দীর্ঘসূত্রতার কারণে পিলখানা হত্যা মামলায় আসামিরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না৷ রায় হওয়ার পরও অনেক আসামি কারাগারে৷ অল্প কয়েকজন ছাড়া পেয়েছেন৷ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানি শেষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি৷

এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, বিজিবি ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে আদালত যেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন, তার বেশিরভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ বাকিগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে৷ রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সীমান্ত ভাতা ৩০ শতাংশ করা হয়েছে৷ বিজিবির সৈনিকদের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ বিশেষ করে, এখন থেকে যে কোনো একজন সৈনিককে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী সরাসরি সহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হবে৷

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার সেনা কর্মকর্তাদের বেশির ভাগেরই দাফন হয়েছে বনানীর সামরিক কবরস্থানে৷ কয়েকজনকে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে৷ কবরস্থানে মাঝামাঝি এক সারিতে এসব কর্মকর্তাকে দাফন করা হয়েছে৷ সবার আগে বিডিআর-এর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর কবর৷ কবরগুলো সারি করে বাঁধানো হয়েছে সিরামিকের ছোট দেয়াল আর স্টিলের রেলিং দিয়ে৷ মাঝে কালো সিরামিক লাগানো স্মৃতিস্তম্ভ৷ তাতে তিন সারিতে নিহত সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম লেখা৷ এই নামফলকের বেদিতেই সকাল থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সবাই৷ সকাল নয়টার আগে বনানীর সেনা কবরস্থানে আসেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা৷ আসেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও৷

শোকাবহ এই দিনে এশিয়া কাপের আড়ম্বরপূর্ণ উদ্বোধনের মাধ্যমে পিলখানা দিবসকে অশ্রদ্ধা করা হয়েছে বলে দাবি করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পিলখানার বিদ্রোহের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়৷ যারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে দূর্বল করে নিরাপত্তাহীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে৷''

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের এই নারকীয় ঘটনার বিচার শেষ হয়েছে গত ৫ই নভেম্বর৷ বিচারে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে মোট ১৫২ জনকে ফাঁসি ও ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ২৫৬ জনের সাজা হয়েছে৷ আর খালাস পেয়েছেন ২৭৭ জন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ