রিচার্জেবল ব্যাটারির কাঁচামালের উপর নির্ভরতা কমাতে চায় ইউরোপ
১৬ আগস্ট ২০২১নর্গে মাইনিং কোম্পানির হয়ে একদল ভূতত্ত্ববিদ ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ক্রিটিক্যাল' কাঁচামালের সন্ধান করছেন৷ সবার আগে তাদের নমুনা সংগ্রহ করতে হবে৷ ইয়াসমিন টোরডেনরো তাঁদেরই একজন৷
কোম্পানির গবেষকদের শিবিরে প্রতি মাসে মাটি খুঁড়ে পাওয়া কয়েকশো নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ ভূতত্ত্ববিদ দলের সদস্য অলিভার বেলি বলেন, ‘‘এই নমুনার মধ্যে ধাতুর কিছু চিহ্ন দেখা যাচ্ছে৷ আমরা নির্দিষ্ট স্তরের খোঁজ করছি, যেখানে উচ্চ মানের ধাতু রয়েছে৷ অর্থাৎ যেখানে টাইটেনিয়াম, ভ্যানেডিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত বেশি৷''
সার শিল্পে ফসফেট অপরিহার্য এক কাঁচামাল৷ বিশাল আকারের রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরি করতে ভ্যানেডিয়ামের প্রয়োজন হয়৷ দুটিকেই ‘ক্রিটিকাল' বা জরুরি কাঁচামাল হিসেবে গণ্য করা হয়৷ লিথিয়াম, রেয়ার আর্থ বা গ্রাফাইটও সেই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ কিন্তু এই সংজ্ঞা ঠিক কোথা থেকে এলো? মাইনিং এক্সপ্লোরেশন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মিশায়েল ভ্যুর্মসার বলেন, ‘‘ক্রিটিকাল কাঁচামাল সংজ্ঞাটি আসলে ইউরোপ থেকে এসেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটি সৃষ্টি করেছে৷ কারণ ইউরোপসহ গোটা বিশ্ব আজ পর্যন্ত মূলত চীন থেকে সরবরাহের উপর নির্ভরশীল, যা প্রায় ৬২ শতাংশ৷''
চীন আজও ক্রিটিকাল কাঁচামাল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রেখেছে৷ সে দেশ ৮০ শতাংশের বেশি রেয়ার আর্থ উৎপাদন করে এবং মাটির নীচে সবচেয়ে বড় ভাণ্ডারও সেখানেই রয়েছে৷ লিথিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল ও তামার ক্ষেত্রেও চীন অন্যান্য দেশ থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করে একচেটিয়া আধিপত্য গড়ে তুলেছে৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় বিকল্প জ্বালানীর প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে এই সব কাঁচামাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্তরে জলবায়ু পরিবর্তন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে চীনের কাঁচামালের উপর নির্ভর করতে হবে৷ যেমন লিথিয়ামের ক্ষেত্রেও চীন বিশ্বের বাজারে শীর্ষ স্থানে রয়েছে৷ ইলেকট্রিক গাড়ি ও রিচার্জেবল ব্যাটারির ক্ষেত্রে লিথিয়াম অপরিহার্য৷
ইলেকট্রিক গাড়ি, বায়ু ও সৌরবিদ্যুতের মতো নতুন প্রযুক্তির জন্য বিশাল পরিমাণ ক্রিটিকাল কাঁচামালের প্রয়োজন৷ বর্তমান হিসেব অনুযায়ী ২০৪০ সাল পর্যন্ত লিথিয়ামের চাহিদা প্রায় ৪২ গুণ বেড়ে যাবে৷
ক্রিটিক্যাল কাঁচামালের বিপুল চাহিদার তালিকায় তামাও স্থান পাচ্ছে৷ জেনারেটর ও ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য তামার তার প্রয়োজন৷ চীন ঠিক সময়ে সেই চাহিদা টের পেয়েছিল৷ দেরিতে হলেও ইউরোপ এবার নড়েচড়ে বসছে৷
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবিলা করতে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ইইউ নির্গমনের মাত্রা ৬০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ তাই বার্লিন শহরে পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ইইউ-র জন্য একই ছাদের নীচে কাঁচামাল সংগ্রহের কাজ চলছে৷ ইউরোপিয়ান র মেটিরিয়াল অ্যালায়েন্সের ব্যার্ন্ড শেফার বলেন, ‘‘ইউরোপিয়ান র মেটিরিয়াল অ্যালায়েন্সের একটাই দায়িত্ব রয়েছে৷ ইউরোপে কাঁচামাল, বিশেষ করে ক্রিটিকাল কাঁচামালের সরবরাহে কোনো রকম বিঘ্ন যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য৷ সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রধান ভূমিকা হলো কাঁচামালের উৎস ও মিশ্রণ বাড়ানো এবং এমন সব কোম্পানি শনাক্ত করা, যাদের ঘাটতি কমানোর সদিচ্ছা ও ক্ষমতা রয়েছে৷''
ধাতুর সন্ধান থেকে শুরু করে খনি তৈরি করতে প্রায়ই ২০ বছর সময় লেগে যায়৷ নর্গে মাইনিং কোম্পানির দাবি, বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকায় অনেক দ্রুত উত্তোলন সম্ভব হবে৷ এমনটা সত্যি হলে ইইউ-র যথেষ্ট লাভ হবে৷
ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/এসবি