1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রিজার্ভ বিতর্কের সত্য-মিথ্যা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ নভেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের ডলার রিজার্ভ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত আছে৷ কেউ বলছেন সরকার রিজার্ভ গিলে খেয়েছে, আবার কেউ বলছেন সরকার যে রিজার্ভের কথা বলছে সেই রিজার্ভ নেই৷

বৈদেশিক মুদ্রার নেট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলারছবি: Stephan Jansen dpa/picture alliance

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, দেশের মানুষের জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে৷''

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসল বিতর্কটি হলো হিসাব পদ্ধতি নিয়ে৷ রিজার্ভের নেট এবং গ্রস নিয়ে৷ অন্য কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই৷

বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন রিজার্ভের যে হিসেব দিয়ে এসেছে সেটা গ্রস হিসেব৷ আইএমএফ বলেছেন নেট হিসেবের কথা৷ তারা বলছে, ডলার রিজার্ভ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাৎকক্ষণিভাবে ব্যবহারযোগ্য যে রিজার্ভ আছে৷

সর্বশেষ আকুর দায় দেনা পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ছিলো ৩৪ বিলিয়ন ডলার৷ কিন্তু তার মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই৷ এই ডলার দিয়ে চারটি তহবিল গঠনসহ আরো কিছু কাজ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে সাতশ' কোটি ডলার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে (জিটিএফ) ২০ কোটি, লংটার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটিতে(এলটিএফএফ) তিন কোটি ৮৫ লাখ এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ৬৪ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ বিমানকে চার কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে৷ এই ৭৯২ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের বাইরে কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলংকাকে দেয়া হয়েছে ২০ কোটি ডলার৷ সব মিলিয়ে এটা কমবেশি আট বিলিয়ন ডলার৷

‘আমরা রিজার্ভের নেট, না গ্রস হিসাব করব সেটা নিয়েই বিতর্ক’

This browser does not support the audio element.

আইএমফ এই আট বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বাদ দিয়ে হিসাব করতে বলেছে৷ সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক তা মেনেও নিয়েছে৷ তাই বাংলাদেশের এখন রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার নয়, ২৬ বিলিয়ন ডলার৷

গত ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার নেট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলার৷  তিনি বলেন, ‘‘রিজার্ভ আমরা গ্রস দেখাই৷ কিন্তু নেট দেখাতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷''

আমদানি এবং অন্যান্য খাতে বাংলাদেশের এখন মাসে রিজার্ভ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়৷ এর মধ্যে আমদানি ব্যয় হয় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডালার৷ এখন যে রিজার্ভ আছে তা থেকে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ও অন্যান ব্যয়  মেটানো যাবে৷ আমদানি ছাড়া বাংলাদেশকে ঋণ, ঋণের সুদসহ সেবাখাতের দেনাও পরিশোধ করতে হয়৷ আর রিজার্ভে ডলার আসে রপ্তানি, প্রবাসী আয়, বিদেশি ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদান থেকে৷ তবে এটা কারেন্ট এবং ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট এই দুইভাগে ভাগ থাকে৷

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা রিজার্ভের নেট, না গ্রস হিসাব করব সেটা নিয়েই বিতর্ক৷ আর কোনো বিতর্কের জায়গা নেই৷ তবে আমাদের যে আট বিলিয়ন ডলার নেট রিজার্ভে  এখন দেখানো হচ্ছে না ওটাও আমাদের আছে৷ আমরা যেসব ফান্ডে দিয়েছি তারা  ডলার কোথায় পেত? তারা তো বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলারই ব্যবহার করত৷ সেটা তাদের আলাদা করে দেয়া হয়েছে৷ এখন যদি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল তুলে দেয়া হয় তাহলে সেটাই রিজার্ভ হবে৷''

‘রিজার্ভ খেয়ে ফেলা বা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলছেন, ‘‘নেট রিজার্ভ হিসেব করার করার পর এখনও চার থেকে সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মিটানোর মত রিজার্ভ আছে৷ কিছু লোক অযথাই গুজব ছড়াচ্ছে, অসত্য তথ্য দিচ্ছে৷''

ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘রিজার্ভের বিতর্কটা নেট এবং গ্রস নিয়ে, সেটা তো সমাধান হয়ে গেছে৷ বিভিন্ন খাতে রিজার্ভের যে আট বিলিয়ন ডলার আছে সেটা নেট রিজার্ভে এখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক আর দেখাচ্ছে না৷''

তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ ডলার রিজার্ভে থাকলেই সেটাকে স্ট্যান্ডার্ন্ড ধরা হয় বলে জানান তিনি৷ বলেন, বাংলাদেশের এখন তার বেশি আছে৷ আর রিজার্ভ যেরকম খরচ হয় সেভাবে আসেও৷ তবে বিশ্ব এবং বাংলাদেশের যে সার্বিক অবস্থা সেটা বিবেচনায় নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ জানান , রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স-এর ফ্লো ধরে রাখতে হবে৷ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে, রিজার্ভ বাড়তে পারে আবার কমতেও পারে৷ তবে যদি ধারাবাহিভাবে কমে তার সমাধান খুঁজতে হবে৷''

রিজার্ভের নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে তার জবাব হলো, ‘‘এটা যারা বলেন তা হয় বুঝে অথবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলেন৷ এটা সম্ভব নয়৷ রিজার্ভ আসা এবং যাওয়া দুটিই ডকুমেন্টেড৷ এটা গোপন করা যায় না৷ সেটার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে৷ আরো কীভাবে ব্যবহার করা যেত সেটা নিয়ে কথা হতে পারে৷ কিন্তু রিজার্ভ খেয়ে ফেলা বা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই৷ আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে রিজার্ভের টাকা চুরি হয়েছিলো সেটা তো একটা অপরাধ৷ অপরাধীরা হ্যাকিং করে চুরি করেছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ