সুইডেনের মানুষ এরিক, যদিও বাস করেন প্রাগে৷ পেশায় আলোকচিত্রশিল্পী৷ ‘সাররিয়াল' বা পরাবাস্তব ছবি তোলেন৷ বাস্তবের খুঁটিনাটি মিলিয়ে এক অলীক স্বপ্নজগত গড়ে তোলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
এরিক ইওহানসন – যেন এক জাদুকর
04:23
রিটাচ ফটোগ্রাফার এরিক ইওহানসন বলেন, ‘‘আমার কাছে একটা আইডিয়া পাওয়ার পন্থা হলো এমন দু'টো জিনিসের মধ্যে একটা যোগসূত্র আবিষ্কার করা, যেগুলো সাধারণত পরস্পরের সঙ্গে মেলে না৷ আমি এমন সব জিনিস নেওয়ার চেষ্টা করি যেগুলো আসলে সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু এমন একটা উত্তরণ খোঁজার চেষ্টা করি, যাতে তারা সুন্দরভাবে মিলে যায়৷''
প্রথম স্কেচ করা থেকে চূড়ান্ত ছবি সৃষ্টি হওয়া অবধি অনেকদিন সময় লেগে যায়, হয়ত কয়েকটা মাস৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, প্রতিটি খুঁটিনাটি যেন যতটা সম্ভব বাস্তব, বাস্তবিক দেখতে হয়৷ তাতে যত কাঠখড় পোড়াতে হোক, এরিক-এর কোনো আপত্তি নেই৷ কেননা সবশেষে ‘ইলিউশন' বা মায়া'টা পূর্ণাঙ্গ হওয়া চাই৷ তথ্যপ্রযুক্তির স্নাতক এরিক বলেন, ‘‘আমার চিরকালই আঁকতে ভালো লাগত, ছোটবেলা থেকেই৷ কিন্তু আমার কম্পিউটার সম্পর্কেও খুব আগ্রহ ছিল৷ তারপর যখন ১৫ বছর বয়সে আমার প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা হাতে পেলাম, তখন মনে হলো, আমি এই দুটোকে মিশিয়ে নতুন এক ধরনের ফটো তৈরি করব৷''
জন্তুজানোয়ারের সেরা ছবি ২০১৫
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি দেখায় প্রকৃতি কত সুন্দর অথচ কত ক্ষণভঙ্গুর৷ সেই বিরল মুহূর্তগুলো ধরে রাখার দায়িত্ব প্রকৃতিপ্রেমী আলোকচিত্রীদের৷
ছবি: Don Gutoski/Wildlife Photographer of the Year 2015
তুই শেয়াল না মুই শেয়াল
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে উত্তর অ্যামেরিকার রেড ফক্স বা বাদামি শেয়ালেরা ক্রমেই আরো বেশি করে সুমেরু অঞ্চলের স্নো ফক্স বা সাদা শেয়ালদের রাজত্বে ঢুকে পড়েছে৷ শুধু ঢুকে পড়েছে নয়, মাঝেমধ্যে স্বজাতিকে শিকারও করে ফেলছে৷ ক্যানাডার নাগরিক ডন গুটোস্কি উত্তর ক্যানাডায় ৪০ হেক্টার জমির মালিক৷ মাইনাস তিরিশ ডিগ্রি ঠান্ডায় তিন ঘণ্টা বসে থেকে তিনি এই ছবিটি তোলেন৷
ছবি: Don Gutoski/Wildlife Photographer of the Year 2015
গোসাপ
এডউইন গিসবার্স হল্যান্ডের লোক৷ নদীনালার হিমশীতল জলে রাবারের স্যুট পরে অসীম ধৈর্য্যের সঙ্গে বসে থেকে তিনি এই গোসাপের ছবিটি তোলেন – এবং উভচর প্রাণী তথা সরীসৃপ বিভাগের সর্বোচ্চ পুরস্কারটি পকেটস্থ করেন৷
ছবি: Edwin Giesbers/Wildlife Photographer of the Year 2015
স্কারলেট আইবিস
সারস গোত্রীয় এই লালপাখিদের ছবিটি তোলা হয় ব্রাজিলে৷ আলোকচিত্রী ছিলেন ফ্রান্সের জোনাথান জ্যাগো৷ পুরস্কার জিতেছেন ১৫ থেকে ১৭ (বছর) বিভাগে৷ ইলহা দো লঁসোয়া সৈকতে ডিঙি বেঁধে লাল আইবিসদের কাঁকড়া ধরা দেখছিলেন জোনাথান৷ আইবিসরা উড়ে যাবার সময় জোনাথান তাদের ছবি তোলেন৷
ছবি: Jonathan Jagot/Wildlife Photographer of the Year 2015
তিমি মাছের খিদে
অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল অ’ জলের নীচে ফটোগ্রাফিতে সেরা পুরস্কারটি জিতেছেন একটি ব্রাইড্স হোয়েল গোত্রীয় তিমি মাছ ছোট সার্ডিন মাছেদের ঝাঁকের উপর ধাওয়া করছে, এই ছবিটি তুলে৷ একবার হাঁ করলেই গোটা ঝাঁকটা তার মুখে ঢুকে যেতে পারে, পেটের কথা না হয় বাদই গেল!
ছবি: Michael AW/Wildlife Photographer of the Year 2015
শৈবাল
অ্যালগে বলতে বোঝায় জলজ শ্যাওলা৷ স্পেনের বাহিয়া দে কাদিজ ন্যাচারাল পার্কে ছবিটি তোলেন পের সোলার৷ তিনি নিজেও স্প্যানিশ৷ বসন্তে জলাভূমির অ্যালগে সবুজ সমুদ্রশৈবালের গায়ে যেন ফুটে থাকে! আকাশ থেকে তোলা ছবি বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি৷
ছবি: Pere Soler/Wildlife Photographer of the Year 2015
কোন পাখি
পক্ষি বিভাগে জিতেছে তিনটি লাল-পা শিকরী বাজের একটি ছবি, তুলেছেন ইসরায়েলের আমির বেন-ডভ৷ শীতে ইউরোপ থেকে আফ্রিকা যাবার আগে পাখিগুলো বাইট সেমেশ-এ একটু জিরিয়ে নিচ্ছে৷
ছবি: Amir Ben-Dov/Wildlife Photographer of the Year 2015
সার্কাস
‘‘এই বাঘ-সিংহগুলোকে আফিম গেলানো থেকে শুরু করে তাদের দাঁত-নখ উপড়ে নেওয়া, সার্কাস চলার সময় বল্লম দিয়ে খোঁচা দেওয়া, সব কিছু করা হয়েছে’’, লিখেছেন ‘সিঙ্গল ইমেজ’ বিভাগে বিজয়ী জার্মানি তথা ব্রিটেনের ব্রিটা ইয়াশিন্সকি৷ চীনের গুইলিন-এর একটি সার্কাসের দৃশ্য৷ মাঝের প্রাণীটি আবার একটি ‘লাইগার’, যার বাপ হলো সিংহ কিন্তু মা একটি বাঘ! এই লাইগার নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্জার৷
ছবি: Britta Jaschinski/Wildlife Photographer of the Year 2015
‘রাফ’ বা গলকণ্ঠী
ইয়ং ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারটি পেয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের অনজ্রেই পেলানেক৷ নরওয়ের গ্রীষ্মে দিনরাত আলো থাকে৷ অনজ্রেই তাঁর ঘেরাটোপে বসে এই দুটি পুরুষ ‘রাফ’ বা গলকণ্ঠী পাখির ছবি তোলেন, অবশ্যই তাদের ঝগড়া মেয়ে পাখিটিকে নিয়ে৷
ছবি: Ondrej Pelánek/Wildlife Photographer of the Year 2015
ছায়াময় কায়া
দেওয়ালে ও কার ছবি? শেয়ালের৷ কিন্তু এ শহুরে শেয়াল, আসে-যায় অতি সাবধানে, দেখা পাওয়া যায় কি যায় না৷ আর্বান বা শহুরে বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি৷ তুলেছেন যুক্তরাজ্যের রিচার্ড পিটার্স৷ তাঁর এক বন্ধু ঠিক সময় লাইট জ্বালিয়ে দেন, কাজেই শেয়াল পণ্ডিত ধরা না পড়েও ধরা পড়েছেন৷ সে ছবি তোলা রইল ব্রিটেনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়ামে৷
ছবি: /Richard PetersWildlife Photographer of the Year 2015
9 ছবি1 | 9
বার্লিন থেকে প্রাগে
এরিক সবেমাত্র বাস উঠিয়ে প্রাগে এসেছেন৷ এর আগের চার বছর ছিলেন বার্লিনে৷ তিনি সব জায়গাতেই কাজ করতে পারেন, বললেন এরিক৷ এখন বয়স হয়েছে তিরিশ৷ বাড়ি বদলে – মানে শহর বদলে তিনি নাকি নতুন কিছু সৃষ্টির প্রেরণা পান৷ এরিক বলেন, ‘‘একটা শহরের পরিবেশ, তার সংস্কৃতি আমার কাজের ওপর প্রভাব ফেলে বলে আমার ধারণা৷ একটা নতুন জায়গা খুবই ইন্টারেস্টিং, যা কিছু দেখবেন, সবই একটা নতুন কিছু সৃষ্টি করার প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে৷ কাজেই প্রাগ আমাকে নতুন আইডিয়া দেবে, বলে আমি নিশ্চিত, যদিও সেটা কীভাবে, তা বলতে পারব না৷''
পারিপার্শ্বিকের সব জায়গা থেকেই প্রেরণা খুঁজে পান এরিক৷ এমনকি কৃত্রিম পদার্থ আর প্রকৃতির মধ্যে পার্থক্য থেকেও৷ তাঁর ছবিগুলোর দাম হলো ৬০ থেকে ১২০ ইউরোর মধ্যে৷ প্রাগে আজ প্রথমবার তাঁর নতুন স্টুডিও-য় বসে কাজ করছেন এরিক৷ কাজ করার সময় নিজের পুরনো ছবিগুলোকে চোখের সামনে রাখতে ভালোবাসেন৷ পুরনো ছবিতে মাঝেমধ্যে এমন কোনো খুঁটিনাটি বিষয় চোখে পড়ে, যা হয়ত আরো ভালোভাবে করা যায়৷ এরিক বলেন, ‘‘আমি যেদিন আমার কাজ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হব, সেটাই হবে শিল্পী হিসেবে আমার শেষ দিন, বলে আমার ধারণা৷ আমাকে এগিয়ে যেতে হবে, আরো ভালো হতে হবে৷ এখনো আমার মাথায় নানা ধরনের আইডিয়া আছে, যেগুলো নিয়ে আমি কাজ করতে চাই৷''
এখন এরিক যে ছবিটা নিয়ে ব্যস্ত, সেটার জন্য একটি ডিটেল বাকি আছে, একটা কাঁচি৷ কাঁচিটাই হবে এই ছবির কেন্দ্রবিন্দু৷ এরিক জানালেন, ‘‘আকাশ থেকে শুরু করে, ধীরে ধীরে পটভূমি ভরিয়ে, তারপর সামনের স্যাচুরেশন কিছুটা কমিয়ে....আমি চাই, আকাশটা যেন কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে, এমন মনে হয়৷ মেয়েটার হাতে থাকবে সেই কাঁচি, আমি যার ছবি তুলছিলাম৷''
ফটোশপ পদ্ধতিতে এরিক বেশ কয়েকশো রং নিয়ে কাজ করেন৷ মায়া যাতে পূর্ণাঙ্গ হয়, সেজন্য তিনি সারা পৃথিবীতে ঘুরে বেরিয়েছেন৷ স্বদেশ সুইডেন প্রায়ই তাঁর ফটোগ্রাফির জগতে উঁকি মারে৷ ফটোর জন্য যদি মৌসুমটা ঠিক না হয়, তাহলে সে প্রকল্পকে আগের বছর অবধি বসে থাকতে হবে৷ কেননা সব কিছু যতটা সম্ভব বাস্তবের মতো দেখতে হওয়া চাই৷
ইনস্টাগ্রাম লেন্সের চোখে বার্লিন
বার্লিনে ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ধূসর, বরফে ঢাকা, বৃষ্টি-ভেজা পরিবেশ৷ কিন্তু ইনস্টাগ্রামের ফটোগ্রাফারদের জন্য এর আলাদা আকর্ষণ রয়েছে৷ কী দেখেন তাঁরা নিজেদের লেন্সের চোখে? বার্লিনে ইনস্টাগ্রামের জগতেই বা কী চলছে?
ছবি: Instagram/Tobias Koch
কুৎসিত, অথচ আকর্ষণীয়
বার্লিন শহর নোংরা, ধূসর, কুৎসিত৷ যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নের অভাব নেই৷ অনেক বাড়িঘর কিছুটা তৈরি হয়ে পড়ে আছে, অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেটাই তো চোখে পড়ার মতো! বার্লিন প্রাচীর পতনের পর থেকে মুক্তি ও সৃজনশীলতার তাগিদ অনুভব করা যায় বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ তিনিই ইনস্টাগ্রামে বার্লিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট @berlinstagram-এর স্রষ্টা৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোবাইল নয়, আসল ক্যামেরার কারসাজি
‘আমার ফোন কখনো কাদায় পড়ে যায়নি’ – গর্ব করে এ কথা বলতে পারেন ক’জন? মোবাইল ফোনের ক্যামেরার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও লিন্ডা ব্যার্গ (@lindaberlin) কিন্তু তাঁর পেশাদারী ডিএসএলআর ক্যামেরার উপরই নির্ভর করেন৷ সেই ক্যামেরার অনেক কারসাজি দিয়ে অভিনব প্রেক্ষাপটে শহরের স্থাপত্য তুলে ধরেন তিনি৷
ছবি: Instagram/Linda Berg
বাড়ির উঠানেই জীবনের কাহিনি
ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফার কারোলিন ভাইনকফ (@careauxphotography) বার্লিনের সদা পরিবর্তনশীল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলেন৷ ইনস্টাগ্রাম যেন তাঁর ভার্চুয়াল ডায়রি৷ ধৈর্য ধরে সব সময়ে ‘মোটিফ’-এর সন্ধান করে বেড়ান তিনি৷ আচমকা অসাধারণ মুহূর্ত উঠে আসে চোখের সামনে৷ প্রস্তুত না থাকলেই সেটি চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়৷
ছবি: Instagram/Carolin Weinkopf
লেন্সের সামনে খাদ্যের সমাহার
মুখে জল আনা খাবার-দাবার ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেন এৎসগি পোলাট (@ezgipolat)৷ তবে ফিল্টার নয়, স্বাভাবিক আলোতেই ছবি তুলতে ভালেবাসেন তিনি৷ স্থানীয় বাজার থেকে তাজা ফলমূল, তরিতরকারি এনে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন তিনি৷ হাটেও আনাগোনা রয়েছে তাঁর৷ শহরের কোন পাড়ায় কবে কোন হাট বসে, সে খবর তাঁর ঝুলিতে রয়েছে৷
ছবি: Instagram/Ezgi Polat
অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান
খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা ঘামানো বৃথা বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ আনাড়ি ফটোগ্রাফারদের জন্য তাঁর পরামর্শ – নিখুঁত ছবির বদলে নিজস্ব আগ্রহের মোটিফ ও গল্প বলার ভঙ্গি গড়ে তোলাই মূল কাজ৷ স্থানীয় ফটোগ্রাফারদের কাজ দেখতে, চলতি প্রবণতা বুঝতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা উচিত (যেমন #igersberlin, #berlin, #kreuzberg)৷ ছবির ‘জিওট্যাগিং’ করাও জরুরি৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোটিফ সর্বত্র, প্রস্তুত থাকা চাই
ফটোগ্রাফার হিসেবে টোবিয়াস কখ (@tokography) আরও ব়্যাডিকাল হতে পিছপা হন না৷ তিনি ব্যস্ত রাজপথের মাঝখানে গিয়ে সবার ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছবি তোলেন৷ ফোনের ক্যামেরাই তাঁর সঙ্গী৷ সেটি কখনো হাত ফসকে কাদায় পড়েনি৷ বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ছুতমার্গ নেই তাঁর৷ রাস্তার গর্ত থেকে শুরু করে দোকানের জানালা – যে কোনো জায়গায় আকর্ষণীয় মোটিফ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷