রিফাত হত্যার প্রধান আসামী ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত
২ জুলাই ২০১৯মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের পূর্ব বুড়ির চর গ্রামের পায়রা নদীর তীরে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের ভাষ্য৷
তিনি বলেছেন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রাতে নয়নকে ধরতে অভিযানে বের হয়৷
‘‘ভোরের দিকে বুড়িরচর গ্রামে নদীর তীরে নয়নের সহযোগীরা পুলিশের দিকে গুলি চালায়৷ পুলিশও তখন আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়৷ কিছু সময় গোলাগুলি চলার পর নয়নের সহযোগীরা পালিয়ে যায়৷ পরে সেখানে নয়নের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়,'' ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন মারুফ৷
পুলিশ সুপার বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি গুলি এবং তিনটি দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেনসহ চার পুলিশ সদস্য এই অভিযানে আহত হয়েছেন৷
গত ২৫ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে (২৩) স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক৷ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রিফাতের মৃত্যু হয়৷
রিফাতের ওপর হামলার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা৷ সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে৷ আর তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন৷
বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেন৷
রিফাত খুন হওয়ার পরদিন তার বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন৷ অভিযানে নেমে পুলিশ এ পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে, যাদে মধ্যে এজাহরভুক্ত চারজনও রয়েছেন৷
নয়ন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার দুই সহযোগী রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাগাল পুলিশ এখনও পায়নি৷
বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানান, পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে নয়নের বিরুদ্ধে মাদক কেনাবেচা, চুরি, ছিনতাই, হামলা, সন্ত্রাস সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগে অন্তত আটটি মামলা রয়েছে৷
পরিবারের দেওয়া নাম সাব্বির আহম্মেদ হলেও নিজেকে জেমস বন্ড ভাবতে ভালোবাসতেন বলে ২৫ বছর বয়সি নয়ন নিজের নাম নয়ন বন্ড রেখেছিলেন৷ ওই নামেই তিনি বরগুনা শহরে পরিচিত ছিলেন৷
জেমস বন্ডের কোড নম্বর ‘007' এর সঙ্গে মিল রেখে তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেছিলেন, যার মাধ্যমে তার সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ হতো৷ বলা হচ্ছে, ওই ফেসবুক গ্রুপেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা সাজানো হয়৷
নয়নের গড়ে তোলা গ্যাং 007 শহরের কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজিস্কুল ও ধানসিঁড়ি এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ চালিয়ে আসছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য৷
তারা বলছেন, ওই গ্রুপে নয়নের প্রধান সহযোগী হলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার দুই ছেলে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী৷
এমবি/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)