মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে৷ সেই রায়েও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে৷ তবে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করার কথা জানিয়েছেন নিজামীর আইনজীবী৷
বিজ্ঞাপন
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মঙ্গলবার রাতেই নিজামীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়৷ এরপর বুধবার সকালে কাশিমপুর কারাগারে নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শুনানো হয়৷ এ সময় নিজামী কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে রিভিউ আবেদন করার কথা জানান৷ নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘‘রায় পর্যালোচনা করে অবশ্যই রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হবে৷ যেসব অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে, আশা করি রিভিউতে সেসব অভিযোগ থেকে নিজামী খালাস পাবেন৷''
রানা দাশগুপ্ত
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের আগের নজির অনুযায়ী রিভিউ আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন নিজামী৷ এই সময়ের মধ্যেই তাকে রিভিউ আবেদন করতে হবে৷ রিভিউ আবেদনে যদি দণ্ড বহাল থাকে তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা বা প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন তিনি৷ তবে রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি পর্যন্ত আদালতের আইনি প্রক্রিয়া শেষ৷ বাকিটা সরকার ও কারা প্রশাসনের কাজ৷''
তিনি বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত যদি প্রাণভিক্ষার আবেদনও খারিজ হয় তাহলে সরকার যে কোনো দিন দণ্ড কার্যকর করতে পারে৷ সাধারণ কারা আইনের নিয়ম হলো, ২১ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হয়৷ কিন্তু মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়৷ এখানে সরকার যখন খুশি দণ্ড কার্যকর করতে পারে৷''
২০১৪ সালে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিনটি অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়৷ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও গত ৬ জানুয়ারি দেয়া এই রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দণ্ড বহাল রাখে৷
বিভিন্ন দেশে যেভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য একেক দেশ একেক রকম পদ্ধতি ব্যবহার করে৷ ছবিঘরে থাকছে তেমন কয়েকটি উপায়ের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইনজেকশন
অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য সোডিয়াম পেন্টোনাল, সম্পূর্ণ অক্ষম করার জন্য প্যানকিউরোনিয়াম ব্রোমাইড আর হৃদযন্ত্র থামিয়ে দেয়ার জন্য পটাশিয়াম ক্লোরাইড নামের তিনটি রাসায়নিক উপাদান ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ঢুকিয়ে অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনামে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: BilderBox
গুলি
ইন্দোনেশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া সহ কয়েকটি দেশে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে তাকে বসিয়ে বা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়৷ এরপর সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য একের পর এক গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন৷
ছবি: Fotolia/Scanrail
বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে
অভিযুক্তকে কাঠের চেয়ারে বসিয়ে তার মাথা ও পায়ের মাধ্যমে শরীরে ৫০০ থেকে ২,০০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড করে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কয়েকবার এভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়৷ এই পদ্ধতিটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফাঁসি
বাংলাদেশ সহ আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, জাপান, মালয়েশিয়া ও কুয়েতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রচলন রয়েছে৷
ছবি: vkara - Fotolia.com
শিরশ্ছেদ
কয়েক হাজার বছর ধরেই শিরশ্ছেদ বিষয়টি রয়েছে৷ তবে বর্তমানে শুধু সৌদি আরবে এই পদ্ধতিটি চালু রয়েছে৷ সাধারণত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গনে শিরশ্ছেদ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
অন্যান্য উপায়
পাথর ছুড়ে মারা, গ্যাস চেম্বারে ফেলে দেয়া, অনেক উঁচু থেকে অভিযুক্তকে নীচে ফেলে দেয়ার মাধ্যমেও কোথাও কোথাও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে নিজামী হলেন ষষ্ঠ ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হলো৷
৭২ বছর বয়সি নিজামী এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন৷ বিগত চার দলীয় জোট সরকারের এই মন্ত্রী চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলারও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি৷
একবিংশ শতাব্দীতে যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করেছে
বাংলাদেশে কোনো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ গত বছর সেদেশে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি, ২০১৩ সালে দুইজন এবং ২০১২ সালে একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Matthias Krüttgen
ভুটান
২০০৪ সালে ভুটানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে নেয়া হয়৷ দেশটিতে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৭৪ সালে৷
ছবি: DW/A. André
আলবেনিয়া
এই দেশে ২০০০ সালে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়া হয়েছে৷ সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে ১৯৯৫ সালে৷
ছবি: Fotolia/Matthias Krüttgen
বুরুন্ডি
২০০৯ সালে দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তুলে নেয়া হয়েছে৷ সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ২০০০ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Philipp Ziser
চিলি
চিলিতে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৮৫ সালে৷ দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে নেয়া হয় ২০০১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিলিপাইন্স
২০০০ সালে এই দেশে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷ ২০০৬ সালে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/P. Hille
কাজাখস্তান
২০০৭ সালে দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি তুলে নেয়া হয়৷ ২০০৩ সালে সেখানে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাদাগাস্কার
এই দেশে সবশেষ ১৯৫৮ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷ অথচ দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে নেয়া হয়েছে গত বছর৷
ছবি: picture alliance / blickwinkel
মন্টেনেগ্রো
২০০২ সালে দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়া হয়৷ ১৯৯২ সালে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল সেখানে৷
ছবি: imago/P. Widmann
সেনেগাল
২০০৪ সালে দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়া হয়৷ শেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৬৭ সালে৷
ছবি: Alexander Joe/AFP/Getty Images
সার্বিয়া
২০০২ সালে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়া হয়৷ সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৯২ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্ক
১৯৮৪ সালে তুরস্কে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল৷ ২০০২ সালে দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP/Getty Images
উজবেকিস্তান
২০০৮ সালে দেশটি থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেয়া হয়৷ ২০০৫ সালে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল সেখানে৷