প্রতিশোধমূলক পর্নের শিকার হওয়া ইনেস মরিনিও তার জীবনের লক্ষ্য হিসাবে নিয়েছেন এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন ডিজিটাল আইন কি অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে?
রিভেঞ্জ পর্নের ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে ছবি: Jean François Ottonello/MAXPPP/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ইনেস মরিনিও পর্তুগালের লিসবনে নিজের দিনের কাজ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ তখনই তার ফোন বেজে ওঠে৷ তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সম্বলিত একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন একটি ম্যাসেজ আসে তার ফোনে৷
তারকাদের গোপন ভিডিও ফাঁসের ১৬ ঘটনা
তারকাদের ছবি বা ভিডিও ফাঁসের ঘটনা মাঝেমাঝেই আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ সাধারণত কোন হ্যাকার বা প্রতিহিংসার বশে কেউ সেগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়৷ ছবিঘরে থাকছে অস্ট্রেলিয়ার ‘হু’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এরকম ঘটনার শিকার ১৬ তারকার কথা৷
ছবি: picture-alliance/empics/Y. Mok
কিম কার্দেশিয়ান
সোশ্যাল মিডিয়া তারকা কিম কার্দেশিয়ানের সেক্স টেপ প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে৷ ভিডিওটিতে তাঁর সঙ্গী ছিলেন তাঁর সাবেক ছেলেবন্ধু রেই জে৷ ভিভিড এন্টারটেইনমেন্ট সেই ভিডিও প্রকাশ করলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেন কিম৷ ফলে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পান তিনি৷
ছবি: Getty Images/D. Becker
প্যারিস হিল্টন
প্যারিস হিল্টনের সঙ্গে তাঁর ছেলেবন্ধু রিক সালেমানের যৌন মিলনের কিছু দৃশ্য নিয়ে ‘ওয়ান নাইট ইন প্যারিস’ নামে একটি পর্ন ফিল্ম মুক্তি পায় ২০০৪ সালে৷ হিল্টন দাবি করেছেন, তাঁর অনুমতি ছাড়াই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছিল৷ এমনকি ভিডিও ধারণের সময়ও তিনি সেই বিষয়ে সচেতন ছিলেন না বলে জানিয়েছেন এই তারকা৷ বিষয়টি নিয়ে আদালতে গেলে চার লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
পামেলা এন্ডারসন
হানিমুনে গিয়ে স্বামী টমি লিয়ের সঙ্গে শখের বশে একটি সেক্স টেপ তৈরি করেছিলেন বেওয়াচ তারকা পামেলা এন্ডারসন৷ কিন্তু পরবর্তীতে কেউ একজন তাঁর বাড়ি থেকে সেই ভিডিও চুরি করেন এবং ‘ইন্টারনেট এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপের’ কাছে বিক্রি করে দেন৷ এই তারকার আরো একটি একই ধরনের ভিডিও ইন্টারনেটে ফাঁস হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Bruna
ফারাহ আব্রাহাম
যখন জানাজানি হয় যে ফারাহ আব্রাহাম এবং জেমস ডিনের একটি সেক্স টেপ আছে তখন বাধ্য হয়েই সেটি প্রকাশে সম্মতি দেন তিনি৷ আব্রাহাম জানিয়েছেন ভিডিও প্রকাশের ফলে তাঁর ক্যারিয়ারে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি৷ তবে ডিন সেটির কথা মানুষকে জানিয়ে বিশ্বাসভঙ্গ করেছিলেন বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/M. Winkelmeyer
কেট রিচি
২০০০ সালে গুজব ছড়িয়েছিল যে কেট রিচির সঙ্গে তাঁর এক সাবেক ছেলেবন্ধুর একটি সেক্স ভিডিও রয়েছে৷ তবে, সেই খবর কখনো নিশ্চিত করেননি কিংবা প্রকাশ্যে সেই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি এই সোপ অপেরা তারকা৷ ইন্টারনেটে তাঁর নাম সার্চ করলে অবশ্য ভিডিওটির স্ক্রিনশট এখনো দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/L. M. Williams
ব্লাক সায়না
প্রাক্তন এক ছেলেবন্ধু তাঁকে না জানিয়েই তাদের এক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ভিডিও করেছিলেন৷ পরবর্তীতে সেই ঘটনাকে ‘অপমানকর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ব্লাক সায়না৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Weiss
জেনিফার লরেন্স
২০১৪ সালে একশোর বেশি তারকার আইক্লাউড একাউন্ট হ্যাকড হয়েছিল৷ তাদের একজন জেনিফার লরেন্স৷ তাঁর নগ্ন ছবি ফাঁস হয় তখন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Close
ম্যাল বি
প্রাক্তন স্বামী স্টেফেন বেলাফন্টের এক কুকীর্তির কথা জেনে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন মেল বি৷ তিনি নাকি তাঁকে না জানিয়েই তাদের যৌন জীবনের ৬০টি ভিডিও তৈরি করেছিলেন৷ সেসব ভিডিও যাতে ফাঁস না হয় সেজন্য স্বামীর বিরুদ্ধে আনা গৃহ নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন সাবেক এই স্পাইস গার্ল৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Pizzoli
বেলা থর্নে
এক হ্যাকার বেলা থর্নের নগ্ন ছবি ফাঁসের হুমকি দিয়েছিলেন৷ সেই হুমকিতে ভয় না পেয়ে নিজেই সেসব ছবি প্রকাশ করেন বেলা৷ অনেকে তাঁর এই উদ্যোগকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ তবে, হুপি গোল্ডবার্গ এমন ছবি তোলাই উচিত নয় বলে বেলা থর্নের সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Pizzoli
রব লো
১৬ বছর বয়সি এক মেয়ের সঙ্গে যৌন মিলনের ভিডিও টেপ প্রকাশের পর ভালোই বিপাকে পড়েছিলেন রব লো৷ ১৯৮৮ সালের ঘটনা সেটা৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ২৪ বছর৷ জর্জিয়ায় সেই ভিডিওটি করা হয়েছিল৷ সেখানকার আইনে একটি মেয়ে ১৪ বছর বয়সেই যৌন সঙ্গমে সম্মতি দিতে পারতো৷ কিন্তু, কোন ভিডিওতে নিজের উপস্থিতির সম্মতি দেয়ার বয়স ছিল ১৮৷ সেই ঘটনা রবের ক্যারিয়ারের মারাত্মক ক্ষতি করেছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images/V. Hache
আম্বার রোস
আম্বার রোসের আসলেই কোন সেক্স টেপ আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ তবে, অসংখ্য ভিডিও ইন্টারনেটে রয়েছে যেগুলোতে তাঁকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় অন্য কারো সঙ্গে দেখা গেছে৷ নগ্ন ছবি প্রকাশেরক্ষেত্রে তিনি অবশ্য বেশ উদার হিসেবেই পরিচিত৷
ছবি: Getty Images/F. Harrison
জেনিফার লোপেজ
জেনিফার লোপেজের প্রাক্তন স্বামী ওজানি নোয়া ২০০০ সালের দিকে তাদের একটি সেক্স ভিডিও ফাঁস করে স্ত্রীর উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু লোপেজ তাঁর প্রাক্তন স্বামীকে এই কাজ করা থেকে রুখতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ তাসত্ত্বেও কয়েকটি ওয়েবসাইট দাবি করেছে তাদের কাছে সেই ভিডিওর কপি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
নিকোল শেরজিঞ্জার
নিকোল শেরজিঞ্জার এবং তাঁর প্রাক্তন ছেলেবন্ধু লুইস হ্যামিল্টনের ফাঁস হওয়া ভিডিওটিতে দু’জনের আলিঙ্গন ও চুম্বন দৃশ্য ছাড়া আর কিছু ছিল না৷ তাসত্ত্বেও সেই ভিডিও প্রকাশের পর বেজায় ক্ষেপেছিলেন নিকোল৷ তিনি সেই ঘটনাকে ‘যৌন সহিংসতা’ আখ্যা দিয়ে তাঁর ব্যক্তি গোপনীয়তা এবং সম্মতির অধিকারের চরম লঙ্ঘন আখ্যা দিয়েছিলেন৷ নিকোলের ভয় ছিল ভবিষ্যতে তাদের অন্য কোন ভিডিও ফাঁস হতে পারে যা আরো বেশি অন্তরঙ্গ৷
ছবি: Imago/Zumapress
কেন্ড্র উইলকিনসন
মাত্র ১৮ বছর বয়সে এক এডাল্ট ভিডিও বানিয়েছিলেন কেন্ড্র উইলকিনসন৷ তবে সেটি ২০১০ সালের আগ অবধি প্রচার করেনি ভিভিড এন্টারটেইমেন্ট৷ আর যখন সেটি প্রকাশ হয় তখন কেন্ড্র বিবাহিত এবং এক সন্তানের মা৷ এই ঘটনাকে অত্যন্ত বিব্রতকর আখ্যা দিয়েছন কেন্ড্র৷ এমনকি ভিডিওটির প্রকাশ রুখতে আদালতেও গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে সফল হননি৷
ছবি: Getty Images/G. Olsen
স্কারলেট ইয়োহানসন
যদি কোন ওয়েবসাইট দাবি করে যে সেটির কাছে স্কারলেট ইয়োহানসনের সেক্স ভিডিও রয়েছে, তবে তা বিশ্বাস না করাই ভালো৷ কেননা, স্কারলেট নিজে জানিয়েছেন সেগুলো ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভুয়া ভিডিও৷ ২০১১ সালে এক হ্যাকার অবশ্য তাঁর ফান থেকে একটি নগ্ন ছবি চুরি করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছিল৷ স্কারলেট সফলভাবে সেই হ্যাকারকে বিচারের মুখোমুখি করতে পরেছেন৷ এবং হ্যাকারের এক দশক কারাবাসের শাস্তি হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
মাইলি সাইরাস
স্টেজে এবং ক্যামেরার সামনে প্রায়ই নানা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করেন মাইলি সাইরাস৷ ২০১৭ সালে তাঁর কিছু অন্তরঙ্গ ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করে একটি পর্ন ওয়েবসাইট৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Riley
রিহানা
অজ্ঞাতপরিচয়ের এক হ্যাকার ২০০৯ সালে রিহানার নগ্ন ছবি ফাঁস করে৷ এটাকে তাঁর সঙ্গে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিলেও ক্যারিয়ারের উপর তার যেন কোন প্রভাব না পড়ে সচেষ্ট ছিলেন এই সঙ্গীতশিল্পী৷ তবে নিজের নগ্ন ছবি তোলাকে কোন অপরাধ হিসেবে মানতে রাজি নন রিহানা৷ বরং যেসব ছেলেবন্ধুদের তাদের বান্ধবীরা নগ্ন ছবি পাঠায় না তাদের জন্য তাঁর খারাপ লাগে বলে জানিয়েছেন রিহানা৷
ছবি: Getty Images/C.Jackson
17 ছবি1 | 17
ঘটনাটি যখন ঘটে তখন তার বয়স কেবল ২১৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি অসাড় বোধ করতে শুরু করি এবং পরিবারের কাছে ছুটে যাই৷ যাকে আমি বিশ্বাস করতাম এমন একজন আমার নাম উল্লেখ করে ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে৷ পর্ন প্লাটফর্মে এবং টুইটার ও টেলিগ্রামেও এটি ভাইরাল হয়ে পড়ে৷ ঘটনাটা আমাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল৷''
মরিনিওর মতো অনেক নারীই ছবি-ভিত্তিক এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ এদের সাবেক প্রেমিকেরা বিচ্ছেদের পর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছেন৷ বিনা সম্মতিতে এমন পর্নোগ্রাফি আইনত দণ্ডনীয়৷
তিনি বলেন, ‘‘অনলাইনে ভিডিওটি দেখার পরপরই আমি পুলিশের কাছে যাই৷ তারা আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে এমন একই ধরনের আরো ঘটনার সন্ধান পান৷ ২০২২ সালেও এই মামলা চলছে৷'' মরিনিওর বয়স এখন ২৪ এবং এমন যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের সহায়তার জন্য ‘নো পারচিলিস' নামের একটি সংগঠন চালান৷
তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় যখন হাঁটছি, তখনও মাঝেমধ্যে মনে হয় যে কেউ হয়তো আমাকে ভিডিও করছে৷ আমি ক্যান্সার থেকে সেরে উঠেছি এবং নিজেকে সবসময় মনে করিয়ে দেই যে এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতেছি, মামলাটিতেও জিতবো৷''
রিভেঞ্জ পর্নের বিরুদ্ধে লড়ছেন ইনেস মরিনিওছবি: Mariana Branco
ইউরোপে নতুন আইন
জীবনযাপনের নানা দিকই এখন ক্রমশ ডিজিটাল হয়ে উঠছে৷ অনলাইনে রিভেঞ্জ পর্নের মতো ঘটনাও বেড়ে চলেছে৷ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেইটএইড এবং ল্যান্ডেকার ডিজিটাল জাস্টিস মুভমেন্টের জরিপে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ নারীই অনলাইনে আক্রমণের শিকার হওয়ার ভয় পান৷ এদের অন্তত ৩০ শতাংশ ভুয়া নগ্ন ছবি বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার ভয় পান৷
ডারহাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক নারী জানতেও পারেন না যে তারা অনলাইনে এমন অপরাধের শিকার হচ্ছেন৷ দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশে টয়লেটে বা কাপড় বদলানোর স্থানে তাদের অজ্ঞাতে তোলা ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ ফলে অজানা একটি ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করে৷''
অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপের অইনপ্রণেতারা বৃহস্পতিবার ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট নামে একটি আইন পাসে সম্মত হয়েছেন৷ অনলাইনে অবৈধভাবে থাকা যেকোনো কিছুর ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে বাধ্য করাটাই এর লক্ষ্য৷
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে যে দশটি কাজ করতে পারেন
বিশ্বের সবদেশেই কমবেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইম্যান নারীদের সুরক্ষায় সহায়তার দশটি উপায়ের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: Daniel Mihaulescu/AFP/Getty Images
ভুক্তভোগীর কথা শুনুন
একজন নারী সহিংসতার শিকার হওয়ার পর মুখ খোলার অর্থ হচ্ছে, তিনি সেই সহিংস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছেন৷ তখন সমাজের সবার উচিত তিনি যাতে তার কথা বলতে পারেন, সেরকম নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তার কথা শোনা৷ এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারীর পোশাক, যৌন পরিচয় বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করার চেষ্টার বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে৷
ছবি: Maurizio Gambarini/dpa/picture alliance
পরবর্তী প্রজন্মকে শেখান
আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সামনে যে উদাহরণগুলো তৈরি করবো সেগুলো ভবিষ্যতে লিঙ্গ, সম্মান এবং মানবাধিকার বিষয়ে তাদের মনোভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে৷ যেসব প্রচলিত ধ্যানধারণায় ভুল আছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করতে হবে৷ তাদের মধ্যে যে যেমন, তাকে সেভাবে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ পাশাপাশি পৃথিবী সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের মতামতও শুনতে হবে৷
ছবি: Aref Karimi/DW
ভুক্তভোগীর সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করুন
সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি যাতে দ্রুত সহায়তা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্রুত সহায়তা বলতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, হটলাইন, পরামর্শের মতো বিষয়গুলো, যাতে ভুক্তভোগীর নাগালের মধ্যে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. May
সম্মতির বিষয়টি বুঝতে হবে
একজন মানুষ মুক্তভাবে এবং উৎসাহের সাথে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ যৌনতায় একজন নারী সম্মতি দিচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে৷ ‘‘সে এটা চেয়েছিল’’ বা ‘‘ছেলেরা এমনই’’ এ ধরনের কথাবার্তা বলে একজন নারীর সম্মতি প্রদানের বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ তৈরি করা যাবে না৷
নিগ্রহের নানা রূপ আছে এবং নির্যাতনের কারণে ভুক্তভোগীর উপর মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়তে পারে৷ আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার কোনো বন্ধু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাহলে তাকে সহায়তার চেষ্টা করুন৷ আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে নিপীড়ন করছে, তাহলে তা প্রতিরোধে সহায়তা নিন৷
ছবি: Imago Images/Panthermedia
আলোচনা করুন
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা দশকের পর দশক ধরে ঘটছে৷ এই চর্চা বিস্তৃত হলেও অবধারিত নয়, যদি আমরা চুপ না থাকি৷ ফলে নারীর প্রতি সহিংতার বিপরীতে শক্তভাবে অবস্থান নিন৷
ছবি: Frank Hoermann/Sven Simon/imago images
প্রতিবাদ করুন
ধর্ষণ সংস্কৃতি হচ্ছে এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে যৌন সহিংসতাকে স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যুগ যুগ ধরে চলে আসা লিঙ্গ-বৈষম্য আর লিঙ্গ ও যৌনতা বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণার কারণে বিষয়টি এমন হয়েছে৷ ধর্ষণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে সবার উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Christin Klos/dpa/picture alliance
নারী বিষয়ক সংগঠনগুলোকে সহায়তা করুন
নারী অধিকার এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করা স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা করতে পারেন৷ জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এই বিষয়ক স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন
কর্মক্ষেত্রে বা জনপরিসরে যৌন নিপীড়নসহ সহিংসতা নানাভাবে ঘটতে পারে৷ আপনার সামনে আপত্তিকর কিছু ঘটলে প্রতিবাদ করুন৷ এভাবে সবার জন্য নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারেন আপনি৷
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
পরিসংখ্যান দেখুন এবং আরো দাবি করুন
লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হলে বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে৷ আর এজন্য এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানলে সে অনুযায়ী উদ্যোগী হওয়া সম্ভব
ছবি: Michael McCoy/Reuters
10 ছবি1 | 10
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আলেক্সান্দ্রা গিজ এই আইন পাসের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই আইনের ফলে হয়রানির শিকার নারীরা অনলাইনে থাকা এসব ছবি সহজে সরিয়ে ফেলতে পারবেন৷ কারণ নাম প্রকাশ না করে পরিচয় নিশ্চিত করার একটি পদ্ধতি এক্ষেত্রে রয়েছে৷ এর ফলে অনলাইনে গিয়ে কেবল নিজেদের চেহারা দেখিয়েই এইসব সরিয়ে ফেলার দাবি জানানো যাবে৷''
তিনি জানান, বড় পর্ন প্লাটফর্মগুলোর জন্যও ফোন নাম্বার নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং কনটেন্ট ব্যবস্থাপনা টিমকেও সম্ভাব্য অবৈধ ছবি চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে৷
ইউরোপের যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ইউরোপিয়ান সেক্স ওয়ার্কার্স রাইটস অ্যালায়েন্স অবশ্য ফোন নাম্বার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে তা তাদের অধিকারের পরিপন্থি হবে বলে আপত্তি জানিয়েছে৷ কিন্তু অধ্যাপক ম্যাকগ্লিন মনে করেন, এই আইনের ফলে আদতে তাদের লাভই হবে৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যৌন কর্মীদের সম্মতি ছাড়াই তাদের নানাভাবে ব্যবহার করে আসছিল বড় পর্ন ওয়েবসাইটগুলো৷ এসব থেকে তারা লাভবানও হচ্ছিলেন না৷ বরং এখন প্লাটফর্মগুলো যৌনকর্মীরা নিজেদের আয় ও নিরাপত্তা বজায় রেখেই কাজ করতে পারবেন৷''