জার্মানিতে শুরু হয়েছে নতুন এক ওয়েব রিয়েলিটি সিরিজ৷ ধারাবাহিকটি সেনাবাহিনীকে নিয়ে তৈরি৷ ১৭ লাখ ইউরো ব্যয়ে এই রিয়েলিটি শো করে জার্মান সেনাবাহিনী এখন তীব্র সমালোচনার মুখে৷
বিজ্ঞাপন
সমালোচকরা বলছেন, এটা স্রেফ অর্থের অপচয়৷ তাঁদের মতে, এই টাকা দিয়ে অনেক ভালো কিছু করা যেতো৷
চলতি নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়েছে জার্মান সেনাবাহিনীর তৈরি ওয়েব রিয়েলিটি শো ‘দ্য রিক্রুটস'৷ প্রচার শুরুর আগে ট্যাগলাইনে বলা হয়েছে, ‘‘নভেম্বরে শুরু হচ্ছে, দিনগুলো দীর্ঘ হবে৷'' ধারবাহিকটি যে শিগগিরই শেষ হচ্ছে না, সেটাই বোঝানো হয়েছে এভাবে৷ ১৭ লাখ ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ১৯ লাখ ডলার খরচ করে তৈরি করা হয়েছে এই ধারাবাহিক৷ এত ব্যয়বহুল ধারাবাহিক শুরু হয়েই শেষ হয়ে গেলে কি চলে? সুতরাং ইউটিউবে বেশ কিছুদিনই দেখা যাবে এই ধারাবাহিক৷
ধারাবাহিকটিতে কাজ করেছেন ১০ জন তরুণ আর দু'জন তরুণী৷ তাঁরা জার্মানির উত্তরের একটি জায়গায় গিয়ে তিন মাস ধরে সেনা প্রশিক্ষনের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়েছেন৷ নানা ঘটনার ফাঁকে ফাঁকে ভীষণ কষ্টদায়ক সেই প্রশিক্ষণপর্বই ধারণ করা হয়েছে ক্যামেরায়৷ সম্প্রতি প্রিমিয়ারও হয়েছে ধারাবাহিকটির৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘তরুণরা যেভাবে সেনাসদস্য হয়' তা দেখানোর জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে এই ওয়েব রিয়েলিটি সিরিজ৷
‘তরুণরা যেভাবে সেনাসদস্য হয়' তা দেখানোর আসল উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীর প্রতি তরুণ সমাজকে আরো আগ্রহী করে তোলা৷ সম্প্রতি জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে জার্মান সেনাবাহিনীতে আরো অন্তত ১৪,৩০০ সৈন্য বাড়াবে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও মনে করেন, জার্মানির এখন সেনাবাহিনীর দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে৷ তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে কিছুদিন আগে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, জার্মানির সামরিক খাতের বাজেট ৩৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো থেকে বাড়িয়ে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ইউরো করা হবে৷
তাই বলে সামরিক বাহিনীর এমন একটি ওয়েব রিয়েলিটি সিরিজকে জার্মানির অনেক রাজনীতিবিদই মেনে নিতে পারছেন না৷ সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতা হান্স-পেটার বার্টেলস মনে করেন, সেনাবাহিনীতে অনেক সামরিক সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো না কিনে রিয়েলিটি শো করার কোনো মানেই হয় না৷
বামপন্থি দলের পেটার রিটনার বলেছেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে মৃত্যুবরণ করার জন্য বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো দরকার নেই আমাদের৷''
ব্রান্ডন কনরাডিস/এসিবি
সেনাবাহিনীতে জন্তু-জানোয়ার
১৯৪৪ সালের ৬ জুন পায়রার মাধ্যমে প্রথম মিত্রশক্তির কাছে খবর পাঠিয়েছিল ব্রিটেন৷ সেই শুরু৷ এরপর পাখি থেকে শুশুক, বাদুড় থেকে মৌমাছি – এমন নানা প্রাণী বিভিন্ন যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বযুদ্ধে পত্রবাহক
গত কয়েক দশকে পাখি থেকে শুশুক, বাদুড় থেকে মৌমাছি – এমন নানা প্রাণী সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে৷ পায়রাদের গতি এবং দিক নির্ণয়ের ক্ষমতা অসাধারণ৷ এ কারণে দুটি বিশ্বযুদ্ধেই তাদের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছে খবর আদান-প্রদানের জন্য৷ তাদের কারণে বেঁচেছে বহু মানুষের প্রাণ৷ তাই এই মহান কর্মের জন্য ‘ডিকিন মেডেল’ দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে৷ এই পুরস্কারটি কিন্তু ভিক্টোরিয়া ক্রসের সমমানের!
ছবি: Getty Images
ক্যামেরাবাহী পায়রা
পায়রাগুলো কেবল যে পত্রবাহক ছিল, তা কিন্তু নয়৷ জার্মানির জুলিয়ুস গুস্তাভ নয়ব্রোনার যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পায়রাদের গলায় ছোট্ট একটি ক্যামেরা বেঁধে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন৷ এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পায়রার মাধ্যমে শত্রু ঘাঁটিতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করে তৈরি করেছিল ‘প্রজেক্ট পিজন’৷
ছবি: picture-alliance/akg
মানুষের প্রাণের বন্ধু
মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন অথবা বোমা খুঁজতে সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কুকুর৷ ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র ৪,০০০ যুদ্ধ কুকুর ব্যবহার করেছিল৷ এছাড়া ফাঁদ খুঁজে বের করতেও কুকুরের জুরি নেই৷
ছবি: Getty Images
বোমা ফেলা বাদুড়
৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বাদুড়ের গলায় বোমা বেঁধে শত্রু ঘাঁটিতে তা ফেলার পরীক্ষা করে৷ সেই থেকে বোমা ফেলতে বাদুড়ের ব্যবহার শুরু হয়৷
ছবি: imago
গুপ্তচর বিড়াল
৬০-এর দশকে ‘আকুস্টিক কিটি’ নামে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ একটি প্রকল্প হাতে নেয়৷ উদ্দেশ্য সোভিয়েত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কথায় আড়িপাতা৷ অস্ত্রপচার করে একটি বাড়ালের দেহে একটি মাইক্রোফোন, ব্যাটারি এবং অ্যান্টেনা লাগানো হয়েছিল৷ তারপর সোভিয়েত কর্মকর্তা যে পার্কে বৈঠক করছিলেন, সেখানে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সেই বেড়ালকে৷ ১৯৬৭ সালে অবশ্য এই প্রকল্প বাতিল করা হয়৷
ছবি: Peyman
পানির চর
১৯৬০ সাল থেকে ‘নেভি মেরিন ম্যামল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে সিন্ধু ঘোটক এবং শুশুককে ব্যবহার করা শুরু হয়৷ পানির তলায় শত্রুর চলাফেলার উপর নজরদারি, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্র তলদেশে পুতে রাখা মাইন শনাক্ত করার জন্য এদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হতো সে সময় থেকে৷
ছবি: picture-alliance/PIXSELL
মৌ-বাহিনী
কুকুরা তাদের ঘ্রাণশক্তির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত৷ কিন্তু মৌমাছির ঘ্রাণশক্তি তাদের চেয়েও শক্তিশালী৷ ক্রোয়েশিয়ার গবেষকরা পরীক্ষা করে রেখেছেন যে, বোমা বানানোর উপাদান অনেক বস্তুর সাথে মিশিয়ে দিলেও মৌমাছি ঠিকই সেটা শনাক্ত করতে পারে৷ এমনকি পাঁচ কিলোমিটার দূরে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনও শনাক্ত করতে পারে এরা৷
ছবি: Getty Images
প্রাণরক্ষাকারী ইঁদুর
আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত তানজানিয়ায় বেলজিয়ামের এপিওপিও সংস্থাটি বড় ইঁদুরকে ল্যান্ডমাইন শনাক্ত করার কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে৷ সেখানে ৫৭টি ইদুঁর এই কাজে নিয়োজিত, যাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
নিহতদের স্মরণ
সেনাবাহিনী বরাবরই প্রাণীদের বিশেষ দক্ষতার উপর নির্ভরশীল৷ তবে যুদ্ধের সময় বেশিরভাগ প্রাণীর অবদানই অগোচরে থেকে যায়৷ বিভিন্ন যুদ্ধে যেসব প্রাণী অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, তাদের স্মরণে লন্ডনের হাইড পার্কে প্রথম একটি স্থায়ী স্মারক নির্মাণ হয়, যার নাম ‘অ্যানিমেল্স ইন ওয়ার মেমোরিয়াল’৷ ২০০৪ সালে এটা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল৷