রোগব্যাধি মানেই ডাক্তারের কাছে দৌড়ানো এবং সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ল্যাবে পরীক্ষা করানো৷ কিন্তু চটজলদি নিশ্চিত হতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা এক সহজ উপায়ে সেই সমস্যার সমাধান করতে চলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
কারও শরীরে মাল্টিরেজিস্টেন্ট জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কিনা, ল্যাবে পরীক্ষা করলেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়৷ অথবা সালমোনেলা, হুপিং কাশি, কলেরার মতো রোগ৷ তবে পরীক্ষার ফল পেতে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে৷ অর্থাৎ এই সময়কালে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা স্থগিত থাকে৷
সেই পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টটিটিউটের বিজ্ঞানীরা এমন এক দ্রুত পরীক্ষার পদ্ধতি সৃষ্টি করার কাজ করছেন, যার সাহায্যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিপজ্জনক প্যাথোজেন শনাক্ত করা সম্ভব৷ প্রোফেসর ফ্রাংক বিয়ার বলেন, ‘‘রুমালের মধ্যে এই ল্যাবের পেছনে প্রৃকৃতিকে নকল করার একটা তাগিদ কাজ করেছে৷ শরীরে কোনো শত্রু প্রবেশ করলে অ্যান্টিবডি তৈরি করে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার যে ব্যবস্থা রয়েছে, আমরা সেটাই নকল করতে চেয়েছিলাম৷''
এর জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে রোগের প্যাথোজেনের সারফেস খতিয়ে দেখেন৷ কারণ প্রত্যেক প্যাথোজেনের নির্দিষ্ট এক সারফেস রয়েছে, অনেকটা আঙুলের ছাপের মতো৷ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির মাধ্যমে জীবাণু শনাক্ত করা সম্ভব৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের প্রোফেসর ফ্রাংক বিয়ার বলেন, ‘‘এখানে আমরা একটি ভাইরাসের সঙ্গে এক বাইন্ডিং মলিকিউলের সংযোগ দেখতে পাচ্ছি৷ এই বাইন্ডিং মলিকিউল আমরা নকল করতে চাই৷ এর জন্য আমাদের সংযোগের সুনির্দিষ্ট মাপের প্রয়োজন, যাতে তালাচাবির মতো নিখুঁতভাবে খাপ খেয়ে যায়৷''
শরীরের নানা সমস্যায় সেরা ঘরোয়া টিপস
আপনি কি নার্ভাস অথবা পেটের সমস্যায় ভোগেন? ঘাড়, কোমর, মাথাব্যথা বা জ্বর ? চিন্তা নেই৷ কিছু ঘরোয়া টিপস আপনাকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই সুস্থ করে তুলবে৷ শুধু লাগবে গরম পানি, তোয়ালে, লেবু, আলু ,লবণের মতো কিছু জিনিস৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেটকে শান্ত করে ভেজা গরম চাদর
যে কোনো অস্থিরতা বা ‘নার্ভাসনেস’ কিন্তু প্রথম পেটেই ধরা পড়ে৷ অর্থাৎ পেট হয় অশান্ত, হয় বদহজম৷ এই অবস্থায় একটি সাধারণ চাদর ৪০ সেন্টিমিটার চওড়া করে ভাঁজ করে গরম পানিতে ডুবিয়ে নিন৷ তারপর পানি চিপে ফেলে পুরো পেটে ভাঁজকরা চাদরটা ভালো করে পেচিয়ে নিন৷ তার ওপর একটি নরমাল চাদর এবং তার ওপর কম্বল দিয়ে পেচিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন, দেখবেন পেট একেবারে শান্ত!
ছবি: Colourbox/J. Sapic
মাথা ব্যথায় সর্ষে
কাজের চাপ বা অস্থিরতা থেকে যে মাথাব্যথা হয় এমন ব্যথায় সর্ষে থেকে তৈরি পাঁচ চামচ আটা ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন৷ তারপর একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে ভেজা আটা সুন্দর করে ভরে ঠিক ঘাড়ের ওপর দিয়ে রাখুন এবং তার ওপর অন্য একটি শুকনো কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ১৫ মিনিট পেচিয়ে রাখুন৷ এভাবে দিনে একবার করলেই চাপ বা স্ট্রেসের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জ্বর কমায় পায়ে ভেজা গরম কাপড়
শরীরের তামপাত্রা ৩৭.৮-এর বেশি হলে তা কমাতে পাতলা কাপড় কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে নিন৷ তা পায়ে, অর্থাৎ হাটুর নীচ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ভালো করে পেচিয়ে নিন৷ এরপর তার ওপর একটি গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন৷ দেখবেন জ্বর কমে যাবে৷ শিশুদের অল্প জ্বর হলে জার্মানরা এই নিয়মটি মেনে ওষুধ ছাড়াই জ্বর কমিয়ে থাকেন৷
ছবি: Fotolia/photophonie
কাশিতে গরম আলুর ভাপ
আলু অনেকক্ষণ গরম ধরে রাখতে পারে৷ তাই কাশির ক্ষেত্রে আলুই বেছে নেন জার্মানরা৷ ৫-৬টা আলু খোসাশুদ্ধ সেদ্ধ করে নিন৷ তারপর একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে আলুগুলো খানিকটা চটকে কাপড়ে মুড়িয়ে নিন৷ মোড়ানো আলু বুকের ওপর রেখে তার ওপর একটি কম্বল বা মোটা কাপড় পেচিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট৷ আলুর গরম ভাপ নিঃসন্দেহে বুকে আরাম দেবে৷
ছবি: picture-alliance/Lars Halbauer
পায়ের ব্যথায় গরম লবণ
অনেকক্ষণ দাড়িয়ে বা বসে কাজ করার পর পায়ে কেমন যেন ব্যথা হয়৷ আর সেই ব্যথার উপকার করবে গরম লবণ৷ ২০০ গ্রাম লবণ হাড়িতে খুব সাবধাণভাবে গরম করুন, যেন কোনোভাবেই না গলে যায়৷ গরম হলে একটি লম্বা কাপড়ে মুড়িয়ে পায়ে পেচিয়ে নিন এবং তার ওপর অন্য একটি তোয়ালে দিয়ে বেধে রাখুন৷ এভাবে ৪-৫ বার করলেই দেখবেন অনেকটা আরাম হচ্ছে৷
গলা ব্যথায় লেবু
ঋতু পরিবর্তন বা শীতকালের হঠাৎ গরম বা ঠান্ডায় গলা ব্যথা খুবই স্বাভাবিক৷ এই ব্যথা লাঘবের জন্য এক টেবিল চামচ লেবুর রস এক কাপ ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নিন৷ এতে একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় ডুবিয়ে এবার পানিটুকু চিপে নিন৷ তারপর গলায় ভেজা কাপড়টি পেচিয়ে তার ওপর একটি গরম মাফলার জড়িয়ে ৩০ মিনিট রাখুন৷ ফলাফল নিজেই দেখবেন!
ছবি: Dave Keating
ঘাড় ব্যথা কমায় বাঁধাকপির পাতা
বাঁধাকপির একটি বড় পাতা ধুয়ে সেটাকে বেলে নিন, যতক্ষণ না পাতা থেকে রস বের হয়৷ তারপর পাতাটি ঠিক ব্যথার জায়গায় দিয়ে একটি কাপড় দিয়ে জড়িয়ে নিন৷ তার ওপর একই নিয়মে গরম একটি কাপড় দিয়ে ভালো করে সারা রাত জড়িয়ে রাখুন৷ ব্যথা কতটা কমেছে তা সকালে অবশ্যই টের পাবেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
গবেষকরা তাই বাইন্ডিং মলিকিউল খুঁজছেন, অথবা নিজেরাই তৈরি করছেন৷ প্যাথোজেনের সারফেস খতিয়ে দেখে তাঁরা সংযোগের সঠিক স্থানটি খোঁজেন৷ বাইন্ডিং মলিকিউল যথেষ্ট শক্তিশালী কি না এবং প্যাথোজেনের জন্য বায়ো-সেন্সর হিসেবে উপযুক্ত কিনা, পরের পরীক্ষাগুলিতে তা বোঝা যায়৷ সঠিক পার্টনার পেতে ল্যাবে হাজার-হাজার মলিকিউল-প্যাথোজেন কম্বিনেশন পরীক্ষা করতে হয়৷ বায়ো-সেন্সর ও প্যাথোজেনের মধ্যে সংযোগ রংয়ের মাধ্যমে বোঝা যায়৷ প্যাথোজেন-এর অস্তিত্বের প্রমাণ হলে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে৷
এই সব বায়ো-সেন্সর অণুগুলিকে এবার রুমালের তন্তুর উপর বসাতে হবে৷ সেটা করতে অণুগুলিকে অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর মধ্যে পুরে ফেলতে হয় এবং সূক্ষ্ম টিউবের মাধ্যমে সেকেন্ডে ৫০০ বিন্দু তন্তুর উপর ছড়িয়ে দিতে হয়৷ ব্যস, রুমালের মধ্যে ল্যাব প্রস্তুত৷
বাস্তবে রুমাল কীভাবে রোগ শনাক্ত করতে পারে, মলিকিউলার বায়োলজিস্টরা তা দেখিয়ে দিতে পারেন৷ পরীক্ষার খাতিরে প্যাথোজেনের এক মিশ্রণ টেবিলের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ রুমাল দিয়ে সেই জায়গাটি মুছে দিলে রং বদলে যায়৷ অর্থাৎ প্যাথোজেনের অস্তিত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়৷ প্রোফেসর বিয়ার বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ার সুবিধা হলো, কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই দ্রুত কাজে লাগানো যায়৷ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ল্যাব-কর্মী – এমনকি ল্যাব-এরও প্রয়োজন নেই৷ ঠিক কী ধরনের সংক্রমণ ঘটেছে, প্রায়ই দ্রুত সেটা জানার প্রয়োজন পড়ে৷ যেমন হাসপাতালে হাইজিন ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে, অথবা ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক-এর প্রেসক্রিপশন দেবার সময়৷ তখন দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজন পড়ে৷''
যক্ষ্মার সঙ্গে লড়তে ‘নায়ক ইঁদুর’!
ফসলের ক্ষতি করে বলে ‘ইঁদুর নিধন অভিযান’-এর কথা আমরা হামেশাই শুনি৷ কিন্তু মানুষের যক্ষ্মা রোগ সারাতে ইঁদুরের সহায়তা নেয়া হয়, তা কি শুনেছেন? তানজানিয়ায় কিন্তু এমন কাণ্ডই চলছে৷
ছবি: APOPO
চিনে নিন নায়ক ইঁদুরকে
টিউবারকুলোসিস, অর্থাৎ টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে সহায়তার জন্য বেলজিয়ান বেসরকারি সংস্থা আপোপো বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরের প্রজনন করাচ্ছে৷ আফ্রিকার এই ধরনের ইঁদুরের নাম দেয়া হয়েছে ‘গিলবার্ট’৷ তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের পরীক্ষাগারে এক চৌকোনা খাঁচায় মানুষের থুথুর নমুনা রাখা হয়৷ গিলবার্টরা গন্ধ শুঁকেই জানিয়ে দেয় থুথুতে সংক্রমণ হয়েছে কিনা৷ এমন চল্লিশটি ‘নায়ক ইঁদুর’ আছে সেই পরীক্ষাগারে৷
ছবি: Jeroen van Loon
ইঁদুরেরও চাই প্রেরণা
সংক্রমণ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে এমন থুথুর নমুনায় গিলবার্ট যতবার তার সামনের থাবা দিয়ে আঁচড় কাটে, ততবারই তাকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় কলা আর মটরশুঁটি মেশানো খাবার৷ খাবার পেলে নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করে গিলবার্ট৷
ছবি: Jeroen van Loon
গিলবার্টরা আরো জানে...
শুধু যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়েই নয়, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশে ভূমি মাইন খুঁজে বের করায় সহায়তার জন্যও গিলবার্টদের কাজে লাগায় আপোপো৷ সামান্য এক ইঁদুরের সহায়তা নিয়ে শুধু মোজাম্বিকেই ২ হাজার ৫৮৭টি ভূমি মাইন খুঁজে বের করে ধ্বংস করা হয়েছে৷ এছাড়া এক হাজারেরও বেশি এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস আর প্রায় ১৩শ আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদেরও সন্ধান দিয়েছে এই ইঁদুর৷
ছবি: Jeroen van Loon
পয়সা উসুল...
আফ্রিকার এই ইঁদুরের ঘ্রাণশক্তি ভীষণ তীক্ষ্ম৷ অন্যান্য ইঁদুরের তুলনায় এরা বেশ শান্ত স্বভাবের৷ প্রতিটি ইঁদুরের প্রশিক্ষণের পেছনে গড়ে ৬শ ইউরোর মতো খরচ হয়৷ তাতে কী! এ ইঁদুর আট বছর বাঁচে৷ এদের পোষ মানানো সহজ, পুষতে তেমন কোনো ঝামেলাও নেই৷ সবচেয়ে বড় কথা, কুকুরকে যেমন একজন প্রশিক্ষক দিয়েই সব শেখাতে হয়, গিলবার্টদের তেমন বায়নাক্কাও নেই৷
ছবি: Jeroen van Loon
জন্ম থেকেই শুরু
আপোপো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের জায়গাতেই ইঁদুরের প্রজনন করায়৷ সংস্থাটি বুনো ইঁদুর পেলেই তাদের দিয়ে শুরু করে বংশ বৃদ্ধির কাজ৷ বাচ্চা ইঁদুর জন্মের পর চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় প্রশিক্ষণ৷
ছবি: Jeroen van Loon
গিলবার্ট যেভাবে বাঁচায়
সাভেরা কম্বা-র কাশি আর সারছিলই না৷ শরীরের ওজন কমে যাচ্ছিল৷ সবসময় ক্লান্ত লাগতো৷ হাসপাতালে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, যক্ষ্মা হয়নি৷ অগত্যা থুথুর নমুনা পাঠানো হলো৷ গিলবার্ট শুঁকেই জানিয়ে দিল, যক্ষ্মা হয়েছে৷ যেন নতুন জীবন পেলেন তিনি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র এক সমীক্ষা অনুযায়ী শুধু ২০১২ সালেই সারা বিশ্বে যক্ষ্মায় মারা গেছে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ৷সাভেরাকে বাঁচিয়েছৈ ইঁদুর৷
ছবি: Jeroen van Loon
নিশ্চিত হওয়া
হাসপাতালের পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়েনি, কিন্তু ইঁদুরের নাসিকায় ধরা পড়েছে, রোগীদের এমন থুথু আবার পরীক্ষা করে দেখছেন আপোপো ল্যাব-এর প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে বলা হবে৷
ছবি: Jeroen van Loon
চটপটে গিলবার্ট
আপোপো-র ইঁদুরগুলোর বিশেষত্ব কী জানেন? ওরা খুব দ্রুত কাজ করে৷ ল্যাবরেটরিতে একজন মানুষ সারাদিনে যতগুলো থুথুর নমুনা পরীক্ষা করতে পারে গিলবার্ট তা করে ফেলে মাত্র সাত মিনিটে৷ যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি এমন সব জায়গা, যেমন শরণার্থী শিবির বা কয়েদখানায় ইঁদুর দিয়ে পরীক্ষা করালে মন্দ কি!
ছবি: Jeroen van Loon
চিকিৎসা শুরু
সাভেরা কম্বার ওজন এখনো মাত্র ৩৯ কেজি৷ তবে ওষুধ খেতে শুরু করার পর থেকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিজেই বুঝতে পারছেন, তাই খুব খুশি মনেই ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ইঁদুর না থাকলে আমি হয়ত মারাই যেতাম!’’
ছবি: Jeroen van Loon
তবু স্বীকৃতি নেই
ইঁদুর দিয়ে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি৷ গত বছর তানজানিয়ায় মোট ১৭শ রোগীর সুচিকিৎসা সম্ভব হয়েছে প্রশিক্ষিত ইঁদুরদের কল্যাণে৷ আপোপো তাই ডাব্লিউএইচও-র স্বীকৃতির আশায় বসে নেই৷ তানজানিয়ার পর মোজাম্বিকেও একটি যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় কেন্দ্র খুলেছে৷ ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এমন পরীক্ষাগার চালু করার পরিকল্পনা আছে আপোপোর৷
ছবি: Jeroen van Loon
10 ছবি1 | 10
আমাদের শরীরের মধ্যে যেমনটা ঘটে, এ ক্ষেত্রেও ঠিক সেভাবেই প্রমাণ পাওয়া যায়৷ টেবিলের উপর যে প্যাথোজেন রুমাল দিয়ে মোছা হলো, তা বায়ো-সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেখানে লেগে থাকে৷ তার ফলে যে ‘ক্যাসকেড রিয়্যাকশন' হয়, তার ফলে রুমালের রং নীল হয়ে যায়৷ প্রোফেসর ফ্রাংক বিয়ার বলেন, ‘‘অন্য অনেক ধরনের প্রমাণও দ্রুত পাওয়া যেতে পারে৷ যেমন মাদক দ্রব্য শনাক্ত করা অথবা খাদ্যের ক্ষেত্রে হাইজিনের মান নিশ্চিত করা ইত্যাদি৷ পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়লে সত্যি পরিষ্কার হয়েছে কিনা, তা জানতে হয়৷ কোনো সারফেসের উপর রুমাল চালিয়ে তখন দেখা যাবে পরিষ্কার হয়েছে কিনা৷''
এমন রুমাল-ল্যাব সবার নাগালে আসতে অবশ্যই বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে৷ তবে কাগজ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি এখন থেকেই এমন ডায়াগোনিস্টিক পেপার তৈরির ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে৷
ক্যানসার চিকিৎসা ও তার সাফল্যের গল্প
কোথাও অক্সিজেন প্রয়োগ করে, কোথাও লেবুর রস, কোথাও বা বিশেষ ধরণের থেরাপি দিয়ে চলছে ক্যানসার থেকে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা৷ অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা সফল৷ রোগীর পরিবারের কাছ থেকে সাফল্যের পুরস্কারও পাচ্ছেন ডাক্তাররা৷
ছবি: Fotolia/S. Bähren
অক্সিজেন দিন...
টিউমার বড় হলে অনেকক্ষেত্রে ভেতর থেকে অক্সিজেন বের করে নিয়ে টিউমারটিকে ছোট রাখেন ডাক্তাররা৷ তবে জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপতালে ক্যানসারের চিকিৎসার একটি পর্যায়ে নেয়া হয় ঠিক উল্টো ব্যবস্থা৷ দেখা গেছে ক্যানসারে রূপ নেয়া টিউমারে অক্সিজেন প্রবেশ করালে কেমোথেরাপির কার্যকারীতা বেড়ে যায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা ইঁদুরের দেহে এভাবে অক্সিজেন প্রয়োগ করে এর কার্যকারীতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷
লেবু যখন মহৌষধ
জার্মানির রুহর বিশ্ববিদ্যালয় বোখুমে গবেষকরা ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছেন লেবু! ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোতে লেবুর রস ব্যবহার করে দেখা গেছে, এর ফলে ক্যানসারের বিস্তার কমে, অনেক ক্ষেত্রে থেমেও যায়৷
ছবি: picture alliance/David Ebener
প্রতিরোধথেরাপি
‘ইমিউনোথেরাপি’ অর্থাৎ প্রতিরোধথেরাপি নামের একটা বিশেষ থেরাপিও অদূর ভবিষ্যতে খুব কাজে আসবে৷ বলা হয়ে থাকে, মানবদেহের প্রায় ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ প্রোটিনই ক্যানসার নিরোধক৷ গবেষকরা সেই প্রোটিনগুলোকে সক্রিয় করে দেহকে ক্যানসার প্রতিরোধী করার চেষ্টা করছেন৷ এই গবেষণায় সাফল্য এলে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে গন্য হবে৷
ছবি: bzga
নীরব, নিষ্ক্রিয় প্রোটিন
অনেক সময় প্রোটিন জমে জমে মস্তিষ্কে টিউমার হয় আর সেই টিউমারে হয় ক্যানসার৷ জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিশায়েল প্লাটেন জানালেন, তাঁরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়েই মস্তিষ্কের টিউমারকে ছোট করতে সক্ষম হয়েছেন৷ ইঁদুরের মস্তিষ্কে এই পরীক্ষা সফল হয়েছে, এ বছর ৩৯ জন মানুষের ওপরও এর পরীক্ষা চালানো হবে৷
ছবি: Forschungszentrum Jülich
সাত শরীরে অ্যান্টিবডি
ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টিবডি ব্যবহার করেই চলছে ক্যানসার প্রতিরোধের চেষ্টা৷ অ্যান্টিবডির কাজই হলো, শরীরের ভালো কোষগুলোকে ক্যানসার সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো৷ ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. হেলমুট সালিহ জানালেন, তাঁরা এখন সাতজন ক্যানসার রোগীকে অ্যান্টিবডি দিয়েই সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন৷ প্রথমে ক্যানসার সেলগুলোকে ফিরে আসতে দেখা গেলেও পরে সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়৷
ছবি: Universität Tübingen
পোস্টকার্ড উপহার
অ্যান্টিবডি থেরাপিতে ফ্রান্সের ৫৯ বছর বয়সি এক রোগী পুরোপুরি সুস্থ৷ লিউকোমিয়ায় ভুগছিলেন তিনি৷ ডা. হেলমুট সালিহ জানালেন সুস্থ হয়ে ফেরার পর থেকে ফ্রান্সের ওই রোগীর স্ত্রী প্রায়ই তাঁকে পোস্টকার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান৷