1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রুম্পার ‘ধর্ষকদের’ ফাঁসি দাবি

সমীর কুমার দে ঢাকা
৬ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার ‘ধর্ষকদের’ ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা৷ মানববন্ধন শেষে হত্যার বিচার দাবিতে মিছিলও করেন তারা৷

ছবি: A. Goni

গত বুধবার মধ্যরাতে পুলিশ সিদ্ধেশ্বরীর ৬৮ নম্বর বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে৷ অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়৷ সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে দেওয়ার মুহুর্তে রুম্পার পরিবার খবর পায়৷ পরে সেখানে গিয়ে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছ থেকে লাশটি এনে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে দাফন করে৷

রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন পুলিশ পরিদর্শক৷ তিনি হবিগঞ্জ সদরের চৌধুরীবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘পরিবার ঢাকায় থাকে৷ আমি থাকি হবিগঞ্জে৷ ওই দিন কী ঘটেছে সেটা আমি বলতে পারবো না৷ তবে ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কয়েকটি সরকারি কোয়ার্টার আছে৷ সেখানে অনেক ব্যাচেলর ছেলে থাকে৷ ঘটনার পর থেকে কয়েকজন ছেলে পালিয়ে গেছে, তাদের রুমে তালা দেওয়া বলে জেনেছি৷ ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশও সন্দেহ করছে৷ তবে এখনো নিশ্চিত নয়৷ কিন্তু এটা যে হত্যাকাণ্ড সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত আমি৷ পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্তে মূল অপরাধীদের খুঁজে বের করবে বলে আমি আশা করি৷’’

ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশও সন্দেহ করছে: রুম্পার বাবা

This browser does not support the audio element.

রুম্পা মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে ধারণা পুলিশের৷ তবে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মৃত্যুর আগে রুম্পা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত সংগ্রহ করে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে৷ রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে৷ সন্দেহ থেকেই তো ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে৷’’ 

রুম্পা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন৷ বুধবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে লাশটি পাওয়ার পর পুলিশ ধারণা করছিল আশপাশের কোনো ভবন থেকে পড়ে যাওয়াই তার মৃত্যুর কারণ৷ কিন্তু আশপাশের ভবনে খোঁজ নিয়েও ওই তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ৷

রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রুম্পা মালিবাগের শান্তিবাগে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন৷ বুধবার সন্ধ্যার পর রুম্পা বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন৷ সঙ্গে নিজের  মোবাইল ফোনটিও নেননি৷ উঁচু থেকে পড়ে শরীরে যে ধরনের জখম হয়, রুম্পার শরীরে সে ধরনের আঘাতের চিহ্ন আমরা পেয়েছি৷ আমরা ধারণা করছি, রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর  কোনো একটি ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে৷ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তা ধর্ষণের সন্দেহ করেছেন৷’’

তবে রুম্পার মৃত্যুর বিষয়টি এখনো পুলিশের কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার নয়৷ রুম্পার পারিবারিক সূত্র জানায়, রুম্পা দু'টি টিউশনি করে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন৷ পরে তিনি কাজ আছে বলে বাসা  থেকে বের হন৷ বাসা থেকে নীচে নেমে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, আংটি, ঘড়ি ও স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরোনো স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান৷ কিন্তু রাতে আর বাসায় ফিরেননি৷ স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি৷ বৃহস্পতিবার স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন৷

মোবাইল ফোন, আংটি, ঘড়ি খুলে রেখে বাইরে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে রোকন উদ্দিন বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে ওর একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে৷ তাই আমি ওকে বলেছি, সন্ধ্যার পর বাইরে গেলে এগুলো নিয়ো না৷ সে কারণে রেখে যেতে পারে৷’’

প্রধানমন্ত্রী নারী হোন আর যেই হোন, মূল সমস্যা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা: খুশি কবীর

This browser does not support the audio element.

আসলে রুম্পাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করা হয়েছে, নাকি তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ তবে রুম্পার সহপাঠীদের দাবি, রুম্পাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে৷ শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধেশ্বরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের ফটকের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছেন৷ সেখানে প্ল্যাকাডে ‘রুম্পার ধর্ষকদের বিচার চাই’, ‘এরপর কে’, ‘আমি কি নেক্সট’, ‘রুম্পার মতো আর কত মেয়ে, পরবর্তীজন আপনি না তো'- এমন সব স্লোগান লেখা ছিল৷ ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে স্লোগানও দেন তারা৷ 

গত জুনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ৭৩১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৩ জন৷ তাদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ২৭৬ জনকে৷ হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১০ জনকে৷ শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ৫৪ জন নারী ও শিশু৷ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭০ জন৷ আর এ সময়ে মারধরের শিকার হয়েছেন ১৪৭ জন৷ একই সময়ে ২ হাজার ৮৩টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দেশে৷

নারী নির্যাতনের এই সূচক উর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নারী নেত্রী খুশি কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নারী হোন আর যেই হোন, মূল সমস্যা পুরুষতান্ত্রিক মানষিকতা৷ এটা বদলাতে হবে৷ নারী নির্যাতনের বিচার করতে হবে দ্রুত৷ আজ যে পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে মারা গেলেন, সেখানে দেখেন ফেনীতে নুসরাত রাফী থানায় গিয়েও নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ থানাগুলোতে পুলিশের মানসিকতা বদলাতে হবে৷ এই কাজগুলো করা না গেলে দেশে এমন ধষর্ণের ঘটনা কমবে না, বরং দিন দিন বাড়তে থাকবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ