রুশদির ওপর হামলা খোমেনির আত্মাকে ডেকে আনছে
২২ আগস্ট ২০২২ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি ফতোয়া দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি বিশ্বের সব সাহসি মুসলমানদের জানাচ্ছি যে, স্যাটানিক ভার্সেসের লেখক [...] এবং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে সচেতন সব সম্পাদক এবং প্রকাশককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে৷ আমি বিশ্বের সব বীর মুসলমানদের, যে যেখানেই থাকুন না কেন, আর দেরি না করে তাদের হত্যা করার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’
এই ফতোয়া দেয়ার ৩৩ বছরেরও বেশি সময় পর গত ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যে রুশদির উপর হামলা হয়েছে৷ তাকে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়৷
হামলার দায়ে ২৪ বছর বয়সি লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হাদি মাতারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে রুশদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
মাতার কি প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন ছিলেন?
এই হামলার জন্য খোমেনির ফতোয়াকে সরাসরি দায়ী করাটা স্বাভাবিক মনে হতে পারে৷ তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে আছে৷ অভিযুক্ত হামলাকারী কি এই জঘন্য ফতোয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট জানতেন? কারণ তিনি খোমেনি মারা যাওয়ার প্রায় ১০ বছর পর জন্মগ্রহণ করেছেন৷
বা আমরা অনুমান করতে পারি না যে মাতার, যিনি একটি সাধারণ মার্কিন মুসলিম পরিবারে উগ্র ইসলামের প্রতি কোনো অনুরাগ ছাড়াই বেড়ে উঠেছেন, তিনি ইসলামি রাষ্ট্রগুলিতে বিতর্কিত এই ফতোয়ার ভঙ্গুর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন৷
খোমেনির ফতোয়া জারির তিন দশক পর এটা স্পষ্ট যে তিনি ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন৷ রুশদির উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের’ বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করে তিনি নিজেকে ইসলামের রক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন - বিশেষ করে শিয়া ইরানের বাইরে৷
সব মুসলমানের নেতা?
খোমেনির রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল তার শিয়া ‘ইসলামি বিপ্লবকে’ বৃহত্তর ইসলামি বিশ্বের বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত করা এবং এই বিপ্লবকে সুন্নিসহ সকল মুসলমানের জন্য একটি বিপ্লবী মডেল হিসেবে সুপারিশ করা৷ সেইসঙ্গে নিজেকে ‘ইসলামি পোপ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা৷ এছাড়া ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে দানা বাঁধা ক্ষোভকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তার নিজস্ব লড়াইয়ে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন৷ যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি ‘অনেক বড় শয়তান’ নামে ডাকতেন৷
রুশদির হামলাকারী সম্ভবত ফতোয়া জারি করা লোকটির ধর্মতাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিচ্ছিন্নতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না৷ অনেক ইসলামি রাষ্ট্র ও পণ্ডিত সব মুসলমানের পক্ষে খোমেনির কথা বলার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল৷
এছাড়া অধিকাংশ ইসলামী কর্তৃপক্ষ খোমেনির ফতোয়া প্রত্যাখ্যান করেছিল এই যুক্তিতে যে, ব্লাসফেমি বা নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে অপমান করার জন্য কোরানে কোনো শাস্তির কথা বলা নেই৷
‘নিউইয়র্ক পোস্ট’এ দেয়া সাক্ষাত্কারে মাতার বলেছিলেন যে, তিনি ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের’ মাত্র ‘দুই পৃষ্ঠা’ পড়েছেন৷ এটি মিশরীয় লেখক এবং নোবেল বিজয়ী নাগিব মাহফুজের উপর হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যাকে ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে কায়রোতে তার বাড়ির সামনে ছুরিকাঘাতে প্রায় মেরে ফেলা হচ্ছিল৷ মাহফুজের হামলাকারীও পরে আদালতে বলেছিলেন যে, মাহফুজের কোনো বই সম্পর্কে তার ধারনা নেই৷
লোয়াই মুধুন/জেডএইচ