এই প্রথম আদালতে পেশ করা হয়েছিল রুশদির উপর আক্রমণ চালানো যুবককে। নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে সে।
বিজ্ঞাপন
ভাবলেশহীন মুখে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছে রুশদির উপর হামলা চালানো যুবক। এর আগে মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক পোস্টকে একটি ছোট সাক্ষাৎকার দিয়েছিল সে। তাতে দাবি করেছিল, সালমান রুশদি ইসলামকে আক্রমণ করেছেন। যদিও এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রশ্ন করা হয় রুশদির লেখা সে পড়েছে কি না। আক্রমণকারী জানায়, স্যাটানিক ভার্সের দুই পাতা পড়েছে সে।
এদিন তাকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন। সেখানেই সে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে। তার বিরুদ্ধে দুই নম্বর ডিগ্রিতে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
বুদ্ধির চর্চা করে নিষিদ্ধ হয়েছেন যারা
বিশ্ব ইতিহাসের অতীত-বর্তমানে রয়েছে এমন বহু চর্চিত নাম, যারা এক সময় তাদের চিন্তার জন্য, লেখার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হন। ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের কথা…
ছবি: Terranoa
সক্রেটিস
পশ্চিমা দর্শনের উদ্ভাবক হিসাবে পরিচিত গ্রিক চিন্তাবিদ সক্রেটিসকে রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতা করা, তরুণদের ভুল পথে চালিত করা ও নকল ঈশ্বরের উপাসনা করার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড শুনিয়েছিল চতুর্থ শতাব্দীর এথেন্স সরকার। বিচার চলাকালীন নিজের মতের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরলে শেষ পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থার পক্ষে থাকা সক্রেটিস রায় মেনে নিয়ে বিষপান করেন।
ছবি: imago/A. Neumeier
গ্যালিলিও
আধুনিক পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার পথিকৃৎ ইটালিয়ান চিন্তক গ্যালিলিও গ্যালিলেই প্রচলিত বিশ্বাসকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলেন যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে নয়, বরং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে। এই তথ্য, যা সেই সময় ধর্ম অবমাননার সমান অপরাধ হিসাবে গণ্য হতো, উন্মোচন করার ফলে ধর্মবিরোধিতার দায় ওঠে তার বিরুদ্ধে।
ছবি: Imago/United Archives
জিওর্দানো ব্রুনো
শুধু গ্যালিলিওই নন, আরেক ইটালিয়ান জিওর্দানো ব্রুনো, যিনি ধর্মগুরুও ছিলেন, প্রশ্ন তোলেন কোপারনিকাসের দেখানো হিলিওসেন্ট্রিসিটি বা মহাকাশের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থানের পক্ষে। এই 'অপরাধে' তাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
ছবি: rigomiz/Fotolia
আলবের্ট আইনস্টাইন
আইনস্টাইনের ইহুদি পরিচিতির কারণে নাৎসি আমলে জার্মানি, অস্ট্রিয়াসহ নাৎসি-শাসিত সব অঞ্চলেই তার লেখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, তার ও তার পরিবারের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার করা হলে আইনস্টাইন বাধ্য হন দেশ ও জার্মান নাগরিকত্ব ছাড়তে।১৯৪০ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণের আগে পর্যন্ত তিনি প্রায় আট বছর শরণার্থী হিসাবে ছিলেন।
ছবি: akg-images/NordicPhotos/picture alliance
নাদিন গোরদিমার
সাহিত্যে নোবেলজয়ী এই লেখক তার দেশ সাউথ আফ্রিকায় তৎকালীন বর্ণবাদী অ্যাপারথাইডপন্থি সরকারের সমালোচনা করেন 'বুরগারস ডটার' ও 'জুলাইস পিপল' বইয়ে। একারণে তার দুটি বোই নিষিদ্ধ করা হয়।
ছবি: Imago Images/Leemage
সালমান রুশদি
১৯৮৮ সালে প্রকাশ পাওয়া এই ভারতীয়-ব্রিটিশ লেখকের 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' বইটি বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয় ইসলামবিদ্বেষী অভিযোগে। ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের ও মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই বইটি নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, এই বই লেখার কারণে বেশ কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি ও ফতোয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে লেখক সালমান রুশদির।
ছবি: picture-alliance/Photoshot
হুমায়ূন আজাদ
১৯৯২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশি লেখক হুমায়ূন আজাদের 'নারী' বইটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। আইনি লড়াইয়ের পর ২০০০ সালে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সরকার। এরপর ২০০৪ সালে তার আরেকটি নভেল 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' লিখে নতুন করে সমালোচিত হন তিনি। তাকে মেরে ফেলার চেষ্টাও চালানো হয়।
ছবি: Getty Images/AFP
7 ছবি1 | 7
গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের এক সভায় বক্তৃতা করার কথা ছিল রুশদির। সেখানে তিনি মঞ্চে ওঠার পরেই আক্রমণকারী দৌড়ে গিয়ে তাকে একাধিকবার ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে। আহত রুশদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। এখন অবশ্য তিনি কিছুটা সুস্থ। শুক্রবার রুশদির সমর্থনে নিউ ইয়র্কের লাইব্রেরির সিঁড়িতে বসে তার লেখা পাঠ করবেন অ্যামেরিকার একাধিক লেখক।
স্যাটানিক ভার্স প্রকাশিত হওয়ার পর রুশদির উপর একাধিক আক্রমণের চেষ্টা হয়। ইরানের প্রধান নেতা রুশদিকে হত্যার ফতোয়া জারি করেন। যদিও ১৯৯৮ সালে ইরান সেই ফতোয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। জাপানে রুশদির লেখা অনুবাদ করার অপরাধে খুন হতে হয় এক অনুবাদককে।
এবার রুশদিরউপর হামলা হওয়ার পর ইরান জানিয়ে দিয়েছে, এর সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। বস্তুত, ২৪ বছরের যে যুবক আক্রমণ চালিয়েছে, সে ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। লেবাননের শরণার্থী পরিবারের সদস্য। নিউ ইয়র্কে গিয়ে রুশদির অনুষ্ঠানের পাস সংগ্রহ করে সে ভিতরে গেছিল।