ব্রিটিশ পপ গায়ক রবি উইলিয়ামস-এর সর্বাধুনিক গানটির শীর্ষক হলো ‘পার্টি লাইক এ রাশিয়ান'৷ গানটিতে রাজনৈতিক সমালোচনার আভাস পাচ্ছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার জনগণের মাত্র তিন শতাংশ ইংরেজি বলতে পারেন, নয়ত রবি উইলিয়ামস-এর গান শুনে তাদের প্রতিক্রিয়া যে কি হতো, তা বলা শক্ত৷ তাও তো আবার উইলিয়ামস সাংবাদিকদের বলেছেন যে, রুশ জনগণ যাতে গোঁসা না করেন, সেজন্য তিনি গানটির আদত লিরিক বা কথা অনেকটা নরম করে এনেছেন৷ তা সত্ত্বেও, যা বেঁচেছে, তাতে রাশিয়ান নেতৃত্ব ও তার পারিষদবর্গকে বেশ ভালোমতো এক হাত নেওয়া হয়ে গিয়েছে৷ গানের কথা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়...
‘‘শুধু এক ধরনের বিশেষ নামডাকওয়ালা মানুষই পারে
একটা গোটা জাতির ট্যাঁক খালি করতে
আমার খুচরো পয়সা দিয়ে আমি পারি আমার নিজের মহাকাশকেন্দ্র গড়তে
(যেহেতু তুমি তা করতে পারো)
আপত্তি বা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, আমিই হালের রাসপুটিন...''
ইউক্রেনীয়-রুশি প্রেমকাহিনী
ইউক্রেন আর রাশিয়ার সংঘাত দু’দেশের মানুষকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে৷ তবে দম্পতি আর প্রেমিক-প্রেমিকারা সেতুবন্ধনের কাজ করে চলেছেন ঠিক আগের মতোই৷
ছবি: Oksana Yushko
আর্টুর আর অক্সানা
‘আমি (এই ছবিঘরের স্রষ্টা) নিজে রুশি৷ আর্টুর হলো ইউক্রেনীয়৷ তিন বছর আগে একটা ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপ করার সময় আমাদের বন্ধুত্ব হয়৷ তারপর বিদেশে৷ সবশেষে আর্টুর মস্কোয় এসে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়৷ আজ আমার একসঙ্গে থাকি, বিদেশে যাই, রাশিয়া কিংবা ইউক্রেনে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দেখা করি৷’
ছবি: Oksana Yushko
অল্গা আর ভ্লাদিমির
ভ্লাদিমির একজন আধুনিক শিল্পী, অল্গা ব্যালেরিনা৷ অল্গার জন্ম ইউক্রেনের কিরোভোগ্রাদস্কায়া অঞ্চলে৷ ওরা ওদের সদ্যোজাত শিশুসন্তান নিয়ে রাশিয়ার খিমকিতে থাকে৷ এক বন্ধু ফেসবুকে অক্সানার ছবি পোস্ট করার পর অল্গা আর ভ্লাদিমিরই প্রথম তাদের ছবি তুলতে দিতে রাজি হয়৷
ছবি: Oksana Yushko
ইউলিয়া আর এডিক
ইউলিয়ার জন্ম ইউক্রেনে আর এডিক-এর জন্ম রাশিয়ায়৷ দু’জনেই পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস এলাকা থেকে উদ্বাস্তু৷ আজ ওদের চার বছরের ছেলে দিমাকে নিয়ে ওরা থাকে মস্কোয়৷ দিমার কথা ভেবেই ওরা যুদ্ধ থেকে পালিয়েছে৷ লাইফ লিংকস রিপোর্টার এমিলি #প্রাইডঅ্যান্ডপ্রেজুডিস এপিসোডটির জন্য ওদের ছবি তোলেন ঐ মস্কোতেই৷
ছবি: Oksana Yushko
দিমা আর সাশা
দিমা হল রাশিয়ার, সাশার জন্ম ইউক্রেনে৷ সাশা ‘ফেমেন’ গোষ্ঠীর সদস্য৷ দিমা কিয়েভে এসেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর হয়ে, ফেমেন সম্পর্কে একটা রিপোর্ট করার জন্য৷ ওদের দু’জনের তখনই দেখা – আর বন্ধুত্ব৷ কিছুদিন পরে সাশা ইউক্রেন ছেড়ে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়৷ তখন থেকে দিমা আর সাশা প্যারিসে বাস করছে৷
ছবি: Oksana Yushko
দিমা আর ভ্লাদা
দিমার জন্ম রাশিয়ায়, ভ্লাদা হল কিয়েভের, মানে ইউক্রেনের মেয়ে৷ দুজনের সাক্ষাৎ হয় জর্জিয়ায়, তারপর কিছুদিন দূর থেকে প্রেম৷ শেষমেষ ওরা অ্যামেরিকায় চলে যায়৷ওখানে এক বছর আগে ওদের একটি ছেলে হয়েছে, যার নাম লেভ৷
ছবি: Oksana Yushko
মাক্সিম আর দারিয়া
দারিয়া ইউক্রেনের মেয়ে, মাক্সিম রাশিয়ার ছেলে৷ ওদের প্রেম শুরু হয় গ্রীষ্মের একটি দিনে, রাশিয়ার ভরোনেঝ-এ৷ দু’জনে একই ভাড়াগাড়িতে সাত ঘণ্ঠা কাটায় – একসঙ্গে৷ মাক্সিম নাকি প্রথম সন্দর্শনেই প্রেমে পড়ে৷ ক’দিন দেখা না হলেই ওদের প্রেম যে উথলে ওঠে, সেটা ওদের দেখলেই বোঝা যায়৷
ছবি: Oksana Yushko
ভ্যালেরি আর স্বেতা
ভ্যালেরি হলো ইউক্রেনের ওডেসা থেকে, স্বেতার জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ স্বেতা এসেছিল ওডেসায় এক বন্ধুর কাছে – সেই অবকাশে ভ্যালেরির সঙ্গে দেখা৷ এক বছর পরেই বিয়ে৷ দু’জনেই যোগব্যায়ামের ভক্ত; বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি আর উদ্ভুটে ব্যাপারস্যাপারে আগ্রহী৷
ছবি: Oksana Yushko
সাশা আর লেনা
আলেক্সান্ডার হলো রাশিয়ার ক্রাসনোদার থেকে, লেনার জন্ম ইউক্রেনের কিয়েভে৷ দু’জনের দেখা ২০১৩ সালে, গ্রিসে ছুটি কাটানোর সময়৷ এক বছরের মধ্যেই লেনা মস্কোয় গিয়ে আলেক্সান্ডার-এর সঙ্গে যোগ দেয়৷ দুই দেশের মধ্যে সমস্যা যতো বাড়ে, ততই বাড়ে ওদের প্রেম৷
ছবি: Oksana Yushko
লিনা আর ভিটিয়া
‘‘আমার মা রুশি, বাবা ইউক্রেনের মানুষ৷ ওঁদের দু’জনের সাক্ষাৎ খারকোভ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে৷ আজ ৫০ বছর ধরে দু’জনে একসঙ্গে৷ মানুষ আর মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সূত্রটি আমি পেয়েছি ওঁদের কাছ থেকেই৷’’
ছবি: Oksana Yushko
9 ছবি1 | 9
রবি উইলিয়ামস যে কার দিকে ইঙ্গিত করছেন, তা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকতে পারে না৷
এ তো গেল গানের কথা৷ পটভূমিতে রয়েছে বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত রুশ সুরকার সের্গেই প্রোকোফিয়েফ-এর সৃষ্ট সংগীতের কিছু অংশ: গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট ব্যালে'র জন্য ‘‘ড্যান্স অফ দ্য নাইটস'' শীর্ষকের যে সংগীত রচনা করেছিলেন প্রোকোফিয়েফ, তারই টুকরো৷ রুশ পত্রপত্রিকায় রবি উইলিয়ামসের ভিডিও বাজারে আসা নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, সেই রিপোর্টে প্রোকোফিয়েফের নামও করা হয়েছে, কিন্তু উইলিয়ামসের গানের কথা সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি৷ গানের কথায় রয়েছে...
‘‘গাড়ির ভেতর আমার ব্যাংক, প্লেনের ভেতর, বোটের ভেতর
আমার জাহাজ ভাসিয়ে রাখতে আদ্ধেক পশ্চিমি দুনিয়া কাবার
কিছু প্রোমোট না করার থাকলে আমার মুখে কেউ হাসি দেখে না
দেখে না ভাবলেশ...''
কার টাকা, কোথায় টাকা
গত কয়েক বছরে রাশিয়া থেকে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে, তা বলার উপায় নেই, তবে ডয়চে ব্যাংক ২০১৫ সালে জানিয়েছিল যে, প্রতি মাসে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার যুক্তরাজ্যে গিয়ে জমা হচ্ছে, যদিও কোনো ব্যাংক বা কোনো সরকারি পরিসংখ্যানে তার হদিশ থাকছে না৷ তার মধ্যে প্রায় ৭৫ কোটি ডলার আসছে রাশিয়া থেকে, জানিয়েছে ডয়চে ব্যাংক৷
ময়ূরপঙ্খিরা আজও পাল তোলে
উত্তর জার্মানির উপকূলে অবস্থিত রস্টক শহরে প্রতিবছর পালতোলা জাহাজদের মেলা বসে – জার্মানে যে রেগাটার নাম হানজে সেইল রস্টক৷
‘গর্শ ফক’ জাহাজটি হলো জার্মান নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ জাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
নেদারল্যান্ডস-এর তিন মাস্তুলের ক্লিপার জাহাজ ‘স্টাড আমস্টারডাম’ বন্দর ছেড়ে বেরনোর মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
দর্শকের কোনোদিনই অভাব নেই...
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
অনেক জাহাজের মিউজিয়ামে যাওয়ার দিন এসে গেছে...
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
জার্মানির গর্শ ফক-এর মতো রুশ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ জাহাজ হলো ‘ক্রুজেনস্ট্যার্ন’৷ জাহাজটি ১৯২৬ সালে জার্মানির ব্রেমারহাফেন-এ তৈরি হয়৷ তখন তার নাম ছিল ‘পাদুয়া’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
‘গ্রাইফ’ নামধারী পালতোলা জাহাজটি এসেছে মেকলেনবুর্গ-ফোরপমার্ন রাজ্য থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
‘ব্রিগ’ হলো একটি দুই মাস্তুলের ‘স্কোয়ার-রিগড’ পালতোলা জাহাজ৷ এককালে এগুলো তাদের দ্রুতগতির জন্য খ্যাত ছিল৷ ‘‘আই অফ দ্য উইন্ড’’ ব্রিটিশ ব্রিগটি চলেছে রস্টকের ভার্নোভ নদী বেয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
পালতোলা জাহাজে বালটিক সাগরে চক্কর দিতে কা-র না ভালো লাগে!
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
9 ছবি1 | 9
রাশিয়াতেও টাকা খরচ করা যায়, ও দরাজ হাতে৷ এক রুশি সরকারবিরোধী তথা আইনজীবী রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ-এর ডাচা, অর্থাৎ গাঁয়ের বাড়ির ছ'মিটার উঁচু বেড়ার ওপর দিয়ে ড্রোন পাঠিয়ে দেখেছিলেন, কেমন থাকেন মেদভেদেভ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা৷ ভল্গা নদীর তীরে ৮০ হেক্টার জমি নিয়ে তৈরি সেই ডাচায় স্কি লিফ্ট পর্যন্ত আছে, আছে ইনডোর সুইমিং পুল, দু'টি হেলিপ্যাড, কর্মচারীদের জন্য একটি হোটেল ও প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যে মেরামত করা, তিনশ' বছরের পুরনো একটি প্রাসাদ৷ ডাচার মালিক কিন্তু মেদভেদেভ নন; মালিক হলো ‘দার' নামের একটি নিধি, মেদভেদেভের স্ত্রী যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত৷
রাশিয়ায় বিত্ত ও বিত্তশালীদের জাঁকজমক সর্বত্র৷ বিশ্বের ২৫টি সবচেয়ে দামি ইয়ট বা প্রমোদতরীর মধ্যে ছ'টির মালিক হলেন রাশিয়ান বিলিওনেয়াররা৷ রবি উইলিয়ামস স্বয়ং সম্প্রতি এক রুশ কোটিপতির মেয়ের বিয়েতে গান গেয়ে পেয়েছেন ১৮ লাখ ইউরো৷