1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রুশ ছেড়ে ইংরেজিতে ঝুঁকছে জর্জিয়ার তরুণরা

২৫ নভেম্বর ২০১০

এক সময় সোভিয়েতের অংশ ছিলো, অর্থাৎ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল এমন কোন ছোট রাষ্ট্র কি আপাদমস্তক ইংরেজিভাষীদের দেশ হয়ে উঠতে পারে? জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাসভিলি কিন্তু এমন এক পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই হাত লাগিয়েছেন৷

রুশ বিরোধী মনোভাব তীব্র হচ্ছে জর্জিয়ায়ছবি: AP

সম্প্রতি জর্জিয়ার প্রেসিডেন্টের নেওয়া এই উদ্যোগটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৪ সালের মধ্যে জর্জিয়ার স্কুলের বাচ্চারা তাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গড়গড় করে ইংরেজিতে কথা বলবে৷ অবশ্য এমনিতেও মস্কোর সঙ্গে জর্জিয়ার মন কষাকষি আর সম্পর্কের অবনতির প্রভাবে তরুণ প্রজন্ম রুশ ছেড়ে নাকি ইংরেজির প্রতিই ইদানিং ঝুঁকেছে৷

জানা গেছে, জর্জিয়ান প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাসভিলি'র সাম্প্রতিক এই ভাষা শিক্ষণ বিপ্লবের আশু কর্মসূচি হিসেবে আর ইংরেজি শেখার লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে হাজারো ইংরেজীভাষীদের স্কুলের এই কর্মসূচির আওতায় জন্য নেওয়া হচ্ছে৷

সাবেক সোভিয়েতের অংশ জর্জিয়ার নতুন এই ‘ভাষা বিপ্লবে' অংশ নিতে এদের কেউ এসেছেন সূদুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, কেউ আয়ারল্যান্ড কিম্বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে৷ জর্জিয়ার স্কুলগুলোতে এরা ইংরেজি ভাষা শিক্ষা সহকারী হিসেবে কাজ করবেন৷ এদেশের শিশুদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তুলবেন৷ এদের অনেকে জর্জিয়ার স্থানীয় বিমানবন্দর পৌঁছেও গিয়েছেন৷ অনেকেই এই ভিন্নধরণের প্রকল্পে কাজ করার জন্য উন্মুখ, অনেকেই এখানে খুব আগ্রহ নিয়ে এসেছেন৷

রুশ ভাষার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত জর্জিয়ার তরুণ সমাজছবি: picture-alliance/ dpa

জর্জিয়ার বিমানবন্দরে উপস্থিত এইসব ভাষা শিক্ষা সহকারীদের একজন বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভালো লাগবে এ'কাজটি করতে৷ এর ফলে আমি এইসব শিশুদের নতুন একটা কিছু শেখাতে পারছি৷ এটি পৃথিবীর সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে একেবারেই ভিন্নতর কিছু৷'

স্থানীয় এক জর্জিয়ান তরুণ যে তার মার্কিন মুলুক থেকে আসা ইংরেজি শিক্ষকের কাছে ইংরেজিতে তার জ্ঞানগম্যি প্রকাশের জন্য বলেছে, ‘আপনি নিশ্চয়ই জানেন, এটা ঘটছে জর্জিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের কুড়ি বছর পর৷ এখানকার মানুষ বাইরের বিশ্বে উঁকি দেওয়ার জন্য একেবারে মুখিয়ে রয়েছে৷ আর কে না জানে, ইংরেজি হচ্ছে দ্রুততম সময়ে সব পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ৷'

ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এই ‘ইংরেজি শিক্ষক'রা জর্জিয়ার বিস্তৃত স্কুলগুলোতে ইংরেজি শেখানোর এই বিপ্লবের মাঠেও নেমে পড়েছেন৷ মানে রীতিমতো ক্লাশ নিতেও শুরু করেছেন তারা৷ উল্লেখ্য, সোভিয়েত শাসনামলে, জর্জিয়ার স্বাধীনতা লাভের আগে রুশ ভাষাই শেখানো হতো৷ কিন্তু জর্জিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের পরপর, এমনকি রুশ সৈন্যরা জর্জিয়া ছেড়ে ক্রেমলিনের পথে পাড়ি দেওয়ারও অনেক আগে, বিশেষ করে জর্জিয়ার টিবলিসি আর মস্কো'র মধ্যে উত্তেজনা, দূরত্ব এ'সব বাড়ার সময় থেকেই জর্জিয়ান তরুণরা রুশ ভাষা পরিত্যাগ করা শুরু করে দিয়েছিল৷ এখন বছর এগারো'র সানন্ড্রো গ্রাব্রিশদ্জেও দেখছে তার ভবিষ্যতের জন্য, তার জীবনের সমৃদ্ধির জন্য ইংরেজি শেখাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে৷ অর্থাৎ সোজা কথায় জীবনে উন্নতি করতে হলে ইংরেজি আর ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোর অন্যান্য প্রধান ভাষা শেখা যে খুব জরুরি, সে'বিষয়টি জর্জিয়ার তরুণ প্রজন্ম ভালোমতনই বুঝেছে৷

কাঁচা ইংরেজিতে নব্য ইংরেজি পড়ুয়া বছর এগারো'র গ্রাব্রিশদ্জে যখন বলে ওঠে, ‘যদি আমি ইংরেজি না জানি, না বলতে পারি - তাহলে আমি তো কোন কাজই পাবো না৷ কেননা, এখন জর্জিয়ায় ইংরেজিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষা৷' এখানে জর্জিয়ান ভাষার পরপরই এটি গুরুত্বপূর্ণ৷ তখন প্রেসিডেন্টের এই বিপ্লব যে সফল হবে তা স্পষ্ট বোঝা যায়৷

এই উদ্যোগটি যেন জর্জিয়ায় গৃহীত হয়েছে সময়ের প্রয়োজনেই৷ ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে যে ‘ভাষা বিপ্লব'-এর ডাক দিয়েছেন জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট তা আসলে সেদেশের সামগ্রিক পরিবর্তনের প্রয়োজনে, বিশ্বের মানচিত্রে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে জাতি হিসেবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়া জর্জিয়ানদের বৃহত্তর স্বার্থেই৷ এদেশের পাশ্চাত্যমুখীন নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ যারা দেশ পরিচালনা করছেন, শিক্ষামন্ত্রী দিমিত্রি সাসকিন সেই প্রজন্মেরই একজন৷ তিনিও চেষ্টা করছেন এই বিষয়টিকে সফল করতে৷ নতুন এই শিক্ষা কার্যক্রম আসলে জর্জিয়ার সোভিয়েত অতীত ভুলে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ারই একটি আকুলতা৷ যে আকুলতায় বছরের পর বছর কেটে গেছে জর্জিয়ার ৷ তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিদ যারা হাল ধরেছেন তাঁরা এবারে সেই বিষয়টি নিয়ে এগোতে চাইছেন৷ তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের জর্জিয়া যাতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সে চেষ্টাই তাঁরা করছেন৷

শিক্ষামন্ত্রী দিমিত্রি সাসকিন বলেছেন, ‘প্রায়শই আমাদের প্রেসিডেন্ট বলেন যে, যুদ্ধের বিপরীতে, সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের জবাব হচ্ছে - জর্জিয়ার ইতিবাচক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো পরিবর্তন আনা, নিজেদের আরো শিক্ষিত করে তোলা৷ আমাদের খুব একটা প্রাকৃতিক সম্পদ নেই৷ খুব একটা তেল বা গ্যাস আমাদের নেই৷ আমাদের যা আছে, তা হচ্ছে- আমাদের মেধা, দেশের মেধা সম্পদ৷ তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে - আমাদের খুব জোরে-শোরে শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হতে হবে৷' অবশ্য দিমিত্রি মনে করেন শিক্ষা সংস্কারে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রা আনতে সারা দেশের স্কুলগুলোতে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি আদতেই উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প৷ এ'প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এটা ঠিক যে, এটি অবশ্যই একটি উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা, অন্তত আমাদের মতো নবীন একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য তো বটেই৷

অবশ্য জর্জিয়ার কোনো কোনো পরিবারের অভিভাবকদের কাছে রুশ ভাষা এখনো গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে যারা টিনা লাঘিদ্জে'র মতো মস্কোয় বসবাস করছেন৷ আসলে তার মেয়েটি মস্কোতেই জন্ম নিয়েছে৷ টিনা মনে করেন মস্কো আর জর্জিয়ার ভেতরে চলমান অস্থিতিশীলতা কমে আসলে দস্তয়ভস্কি আর টলস্টয়ের ভাষায় তাঁর মেয়ের পারদর্শী হয়ে ওঠাটিই আদতে কাজে আসবে৷

টিনা বলেছেন, যদিও আমি যা বলছি তা শুনে তথাকথিত ‘রুশ দখলদারি'তে থাকা জর্জিয়ার অনেকে রীতিমতো অবাক হবেন, তবুও আমার জন্য এই বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক একটি খেলাই বটে৷ সময় বদলাবে, বিষয়গুলো স্থিতিশীল হবে৷ আমি বিশ্বাস করি, একদিন আমাদের মানুষদের মধ্যে সম্প্রীতি আর উষ্ণতা ফিরে আসবে৷ আরেকটি বিষয় হচ্ছে- আমরা প্রতিবেশী দেশ, এ কথা তো অস্বীকারের কোন উপায়ই নেই৷

যাই হোক, আবারো স্কুলেই ফিরে আসি৷ সেই নব্য ইংরেজি পড়ুয়া বাচ্চাগুলো তাদের ইংরেজি শিক্ষকের জন্য একটি জর্জিয়ান গান গাইছে৷ বাতাসে ভাসছে তার সুর, ইংরেজি গানও হয়তো একদিন তারা গাইবে৷ অবশ্য আজই একথা নিশ্চিৎ করে বলা সম্ভব নয় যে, ঠিক কখন থেকে এই ইংরেজি ভাষা শেখার বিপ্লবটি সাফল্য পেতে শুরু করবে৷ কিন্তু একথা সত্যি যে, জর্জিয়ায় স্কুলের সব বাচ্চারা একটি বড় ধরনের পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে৷ দেখা যাক, জর্জিয়ার সরকারের এই ভাষা বিপ্লব কতখানি সাফল্য পায়৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ