রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন রোববার দেশটির পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এক টেলিভিশন বার্তায় তিনি এই তথ্য জানান৷
বিজ্ঞাপন
পুটিন বলেন, ‘‘আমি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে রুশ পরমাণু প্রতিরোধ বাহিনীকে বিশেষ যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতিতে রাখা হয়৷’’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে একযোগে পশ্চিমাদেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই পদক্ষেপ নিলেন পুটিন৷
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে পুটিন নতুন করে হুমকি তৈরির চেষ্টা করছেন৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি এবিসি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমরা তার এমন কর্মকাণ্ড বরাবরই লক্ষ্য করেছি৷ কোন সময়ই ন্যাটো রাশিয়ার জন্য হুমকি ছিল না৷ এর সবই প্রেসিডেন্ট পুটিনের কর্মপদ্ধতি এবং আমরা এর জন্য তৈরি আছি৷ আমাদের নিজেদের রক্ষার ক্ষমতা রয়েছে৷’’
ন্যাটো প্রধান ইয়েন্স শ্টলটেনব্যার্গ সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে, এগুলো পুটিনের ‘আক্রমণাত্মক কথাবার্তা’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেনও৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেন, পুটিন যদি ইউক্রেনের বিপক্ষে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে সেটা হবে গোটা বিশ্বের জন্য বিপর্যয়৷ কিন্তু এতে ইউক্রেন ভেঙ্গে পড়বে না৷ দুই পক্ষ আলোচনায় রাজি হওয়ার পর পুটিনের এমন বার্তায় ইউক্রেন চাপে পড়ছে না বলেও জানান তিনি৷
বেলারুশে আলোচনায় ইউক্রেন-রাশিয়া
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেলারুশে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন৷ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে ফোনে কথা বলার প্রেক্ষিতে জেলেনস্কি আলোচনার জন্য প্রতিনিধি পাঠাতে রাজি হয়েছেন বলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে৷
রোববার ইউক্রেনের দ্বিতীয় বড় শহর খারকিভে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সময় দুপরে জানিয়েছে শহরটি তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে৷
রাশিয়া-ইউক্রেন, কার কত শক্তি
তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। একনজরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সামরিক শক্তি।
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
যুদ্ধরত সেনা
ইউক্রেনের হাতে আছে দুই লাখ যুদ্ধরত সেনা। যারা সরাসরি লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে। রাশিয়ার হাতে আছে আট লাখ ৫০ হাজার যুদ্ধরত সেনা। যারা যে কোনো সময় লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এদেরই একটি অংশ এখন লড়াইয়ের ময়দানে আছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
সংরক্ষিত সেনা
ইউক্রেনের হাতে সংরক্ষিত বা রিজার্ভড ব্যাটেলিয়ন আছে আড়াই লাখ। যারা প্রয়োজনে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে। রাশিয়ার হাতেও সংরক্ষিত সেনার সংখ্যা আড়াই লাখ।
ছবি: Aris Messinis/AFP
প্যারামিলিটারি বাহিনী
রাশিয়ার প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যা আড়াই লাখ। এর বাইরে স্পেশাল ফোর্স আছে। যারা ইউক্রেন হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউক্রেনের প্যারামিলিটারি বাহিনীর সংখ্যা মাত্র ৫০ হাজার।
ইউক্রেনের হাতে সাজোয়া গাড়ি বা আর্মার্ড ভেহিক্যালের সংখ্যা ১২ হাজার ৩০৩। রাশিয়ার হাতে এই ধরনের গাড়ির সংখ্যা ৩০ হাজার ১২২। বস্তুত, সম্পূর্ণ বুলেটপ্রুফ এই গাড়িগুলিতে করেই সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়। এর সাহায্যে প্রতিপক্ষের উপর আঘাতও হানা যায়।
ইউক্রেনের হাতে ফাইটার জেট বা যুদ্ধবিমান আছে ৬৯টি। রাশিয়ার কাছে সেখানে ফাইটারের সংখ্যা ৭৭২।
ছবি: Erik Romanenko/Tass/imago images
যুদ্ধের হেলিকপ্টার
যুদ্ধ করার মতো হেলিকপ্টার ইউক্রেনের কাছে আছে মাত্র ৩৪টি। রাশিয়ার কাছে সেখানে এই হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৫৪৪। ইউক্রেন হামলার প্রথম দিন রাশিয়া এই হেলিকপ্টার প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেছে। হেলিকপ্টারের সাহায্যে বোমা ফেলা হয়েছে। গুলি চালানো হয়েছে।
ছবি: Efrem Lukatsky/AP Photo/picture alliance
এবং নৌবহর
নৌবহরেও রাশিয়ার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৩৮টি। রাশিয়ার হাতে সেখানে ৬০৫টি যুদ্ধজাহাজ। কৃষ্ণসাগরে যার অনেকগুলিকে স্ট্যান্ডবাই করে রাখা হয়েছে।
ছবি: Iranian Army/AP Photo/picture alliance
পরমাণু শক্তি
ইউক্রেনের হাতে একটিও পরমাণু অস্ত্র নেই। অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ। ছয় হাজার ২৫৫টি পরমাণু অস্ত্র আছে তাদের হাতে।
ছবি: AP Photo/picture-alliance
10 ছবি1 | 10
রাতে গ্যাস পাইপলাইনসহ শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় রুশ বাহিনী৷ সকাল নাগাদ সেখানে রুশ সেনাযানের উপস্থিতির কথাও জানা যায়৷ তবে পরবর্তীতে টেলিগ্রামে সেখানকার গভর্নর দাবি করেন, ইউক্রেনের বাহিনী অভিযান চালিয়ে রুশ সেনাদের বিতাড়িত করেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘খারকিভ আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে৷’’