রুশ বাহিনী থেকে ভারতীয়দের প্রত্য়াহারের অনুরোধ মোদীর
৯ জুলাই ২০২৪
রাশিয়া সফরে গিয়ে পুটিনের কাছে এই আবেদন জানান মোদী। পুটিন সম্মত হয়েছেন বলে খবর।
বিজ্ঞাপন
দুইদিনের সফরে রাশিয়া গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে তার নৈশভোজ ছিল। সেখানে তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য় নরেন্দ্র মোদীকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওই নৈশভোজেই ভ্লাদিমির পুটিনের কাছে একটি আবেদন জানান মোদী। বলেন, রাশিয়ায় যে ভারতীয়রাআছেন, বাধ্য হয়েই তাদের অনেককে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়েছে। পুটিন যেন যুদ্ধ থেকে ভারতীয়দের অব্য়াহতি দেন। সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, নৈশভোজেই পুটিন মোদীর এই আবেদনে সম্মতি জানিয়েছেন।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহী কেন ভারত?
ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ‘এস-৪০০ মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত৷ রুশ প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
গত সপ্তাহে ‘মিশাইল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এক যৌথ বিবৃতিতে নতুন দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ আরো মজবুত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন৷ চলতি বছর মোদী এবং পুটিনের এই নিয়ে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Y. Kadobnov
এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম আসলে কী?
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০০ সার্ফেস-টু-এয়ার মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম মূলত ধেয়ে আসা ‘ব্যালেস্টিক মিশাইল’ প্রতিরোধ করে৷ এটাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধুনিক এবং মোক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
ভারতের আগ্রহ
মূলত চীন এবং পাকিস্তান থেকে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে নিক্ষেপ করা হলে, তা যাতে প্রতিরোধ সম্ভব হয়, সেজন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাচ্ছে ভারতের সামরিক বাহিনী৷ এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভারতের পক্ষে অনেক দূরে অবস্থান করা যুদ্ধবিমান, এমনকি রাডার সোনার সিস্টেম সনাক্ত করতে অক্ষম বিমানও ধ্বংস করে দিতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo
আরো চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায়
রাশিয়ার কাছ থেকে চারটি ‘ক্রিভেক-ক্লাস ফ্রিগেট’ কেনারও পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এগুলোর মধ্যে দু’টি যুদ্ধজাহাজ গোয়ার শিপইয়ার্ডে জোড়া দেয়া হবে৷ অন্য দু’টো একেবারে তৈরি অবস্থায় রাশিয়া থেকে আনা হবে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্কিন সতর্কবার্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা খাতের জন্য সমরাস্ত্র কিনবে, সেসব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে৷ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় সিএএটিএসএ আইন গতবছর অনুমোদন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মার্কিন সমরাস্ত্রও কেনে ভারত
শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের সামরিক সমরাস্ত্রের আশি শতাংশই এসেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে৷ তবে নব্বইয়ের দশক থেকে আরো কয়েকটি উৎস থেকে সমরাস্ত্র কিনতে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ গত দশ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পনের বিলিয়ন মূল্যমানের সমরাস্ত্র কিনেছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ভারত কি ছাড় পাবে?
রাশিয়ার কাছ থেকে ‘এস-৪০০ মিশাইল সিস্টেম’ কেনায় চীনের সামরিক বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যদিও ভারত আশা করছে, মার্কিন মিত্র দেশ হিসেবে তাদের এ ধরনের নিষেধজ্ঞায় পড়তে হবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন ছাড় দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Dufour
7 ছবি1 | 7
২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এরপর লাগাতার সেই যুদ্ধ চলছে। কর্মসূত্রে বহু ভারতীয় রাশিয়ায় বসবাস করেন। মোদীর অভিযোগ, এমন বহু ভারতীয়কে বাধ্য হয়ে রাশিয়ার সেনায় যোগ দিতে হয়েছে। লড়াইয়ে এখনো পর্যন্ত দুইজন ভারতীয়ের মৃত্য়ুর খবরও মিলেছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বহু ভারতীয় রাশিয়ায় আটকে পড়েছেন। তারা বড় বেতনের কাজের আশায় রাশিয়ায় গেছিলেন। এখন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মোদী ওই সমস্ত ভারতীয় যাতে দেশে ফিরে আসতে পারেন, সেই আবেদন জানিয়েছেন। সূত্রের দাবি, পুটিন আবেদনে সারা দিয়েছেন। ভারতীয়দের সেনা বাহিনী থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তারা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারেন, সেই ব্য়বস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন পুটিন।
ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা রাশিয়া-বিরোধী মঞ্চ তৈরি করলেও ভারত কোনোপক্ষেই যোগ দেয়নি। তারা এখনো পর্যন্ত জাতিসংঘে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কও অটুট রেখেছে ভারত। রাশিয়া থেকে তেল কিনছে মোদীর সরকার। যা নিয়ে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের চাপের মুখেও পড়তে হয়েছে ভারতকে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়াও ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। মোদীর রাশিয়া সফরও এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়া থেকে অস্ট্রিয়ায় যাবেন মোদী। ৪১ বছর পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রিয়ায় যাবেন।