রুশ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দেখাতেও প্রতিশোধ নেয়া হলো না ইংল্যান্ডের৷ গ্রুপ পর্বের চেয়েও দ্বিগুণ ব্যবধানে ০-২ গোলে হারতে হলো বেলজিয়ামের কাছে৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে গ্রুপ পর্বের দেখায় ০-১ গোলে বেলজিয়ামের কাছে হারতে হয়েছিলো ইংল্যান্ডকে৷ অথচ এই বিশ্বকাপে দেখা হওয়ার আগের ২১ দেখায় মাত্র একবারই হেরেছিলো ইংল্যান্ড৷ এর মধ্যে ১৫টি ছিল জয়, ৫টি ড্র৷
সেইন্ট পিটার্সবার্গে খেলা শুরুর মাত্র ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডেই ইংল্যান্ডকে ব্যাকফুটেঠেলে দেন থমাস মুনিয়ে৷ কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বাম দিকে অনেকখানি জায়গা পেয়ে যান চাদলি৷
ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে দেয়া পাসে পিছলে এসে পা ছোঁয়ান মুনিয়ে৷ এত কাছ থেকে ঝাঁপ দেয়ার চেষ্টাও করতে পারেননি ইংলিশ গোলকিপার৷
বিশ্বকাপ ইতিহাসে বেলজিয়ামের করা দ্রুততম গোল এটি৷
রোড টু ফাইনাল: ফ্রান্স
বিদগ্ধ কোচ দিদিয়ে দেশঁ মহামঞ্চে হাজির হলেন একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়ে৷ তারুণ্যনির্ভর, তারকাখচিত দল ফ্রান্স৷ তাঁরা এলেন, খেললেন, জয় করলেন৷ অথচ খেলায়, অভিব্যক্তিতে কোথাও ছিল না কোনো বাগাড়ম্বর৷
ছবি: picture alliance/abaca/A. Apaydin
যাত্রা শুরু সকারুদের বিপক্ষে
কাজানে লে ব্ল্যু’দের বিশ্বকাপ শুরু হয় গ্রুপ সি’তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে৷ এই ম্যাচটি ইতিহাস হয়ে থাকবে অন্য এক কারণে৷ এখানেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার ব্যবহৃত হয় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর প্রযু্ক্তি৷ ফ্রান্সের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড গ্রিসমানকে ফাউল করেন প্রতিপক্ষের জসুয়া রিসডন৷ এতেই দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি পেয়ে এগিয়ে যায় ফ্রান্স৷ শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জয় নিশ্চিত করেন ফ্রেঞ্চরা৷
ছবি: Reuters/J. Sibley
পেরুভিয়ান নার্ভ পরীক্ষা
গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে ইয়েকাটেরিনবুর্গের সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে নার্ভের পরীক্ষা দিয়েছে ৯৮-এর চ্যাম্পিয়ন দল৷ পেরুর বিপক্ষে এই ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না৷ পেরুর জন্য ছিল বাঁচা-মরার লড়াই৷ সেখানে পিএসজি স্ট্রাইকার এমবাপ্পের গোলে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ফ্রান্স৷
ছবি: Reuters/J. Cairnduff
ভুলে যাবে লুঝনিকি
লুঝনিকি স্টেডিয়ামের ফ্রান্স-ডেনমার্কের এই ম্যাচটিকে কেউ মনে রাখবে না৷ ততদিনে দু’দলই নিশ্চিত করে ফেলেছে পরের রাউন্ড৷ গোলশূন্য ড্র এই ম্যাচে ফ্রেঞ্চ বস দিদিয়ে দেশঁ তাঁর তুরুপের তাস এমবাপ্পে ও পগবাকে বিশ্রাম দেন৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
আকাশে নীলের দাপট
কাজানে এমবাপ্পে এদিন ছিলেন পুরোপুরি ক্লিনিক্যাল৷ কী ক্ষিপ্র গতি, কী অসাধারণ ফিনিশিং! অন্যপ্রান্তে মেসি, ডি মারিয়ার মতো মহারথিদের ছাপিয়ে এদিন তিনি সত্যিকারের তারকা৷ ম্যাচের এক ঘণ্টা পার হয়েছে, এরই মধ্যে দু’ দলই দু’টি করে গোল করেছে৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরো দু’টি বল আর্জেন্টাইন জালে প্রবেশ করিয়ে ক্যারিয়ারের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আভাস দিলেন তিনি৷ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Bogodvid
অপ্রতিরোধ্য ফ্রান্স
নিঝনি নভোগরোদে শেষ চারের টিকেট পাবার লড়াইয়ে এদিন উরুগুয়ের মুখোমুখি ফ্রান্স৷ প্রথমার্ধের ৩৯ মিনিটে গ্রিসমানের ফ্রি-কিককে স্লাইডিং হেডে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক মুসলেরার ডান দিক দিয়ে পার করে দেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার রাফায়েল ফারানে৷ দ্বিতীয়ার্ধে গ্রিসমানের শট মুসলেরা হাতে লাগাতে পারলেও ঠেকাতে পারেননি৷ ২-০ গোলের জয় নিয়ে ২০০৬ সালের পর প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি পেরোয় ফ্রান্স৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo/Maxppp
সামনে উড়ন্ত বেলজিয়াম
বেলজিয়ান গতির চমককে স্থবির করতে পারলো কেবল ফ্রান্সই৷ ৫১ মিনিটে গ্রিজমানের কর্নার থেকে বার্সেলোনার তারকা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার উমতিতি উড়ে এসে হেড করেন৷ আর তাতেই পরাস্ত বেলজিয়ান গোলরক্ষক কোর্টোয়া৷ এক গোলের জয় নিয়ে ২০০৬-এর পর আবারো ফাইনালে ইউরোপের পরাশক্তিরা৷
ছবি: Reuters/M. Rossi
6 ছবি1 | 6
বলের দখলে পুরো ম্যাচেই কিছুটা এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড৷ তবে সেটা শুধুই মধ্যমাঠে৷ মাঝে মধ্যেই ইংলিশ রক্ষণবিভাগে আক্রমণ শানালেও প্রথমার্ধে আর সফলতা পাননি লুকাকুরা৷
কিন্তু বিরতির পর দারুণ এক আক্রমণে যায় ইংল্যান্ড৷ রাশফোর্ডের দেয়া পাস থেকে বল পেয়ে ডিফেন্ডারদের পাশ কাটিয়ে সামনে চলে যান এরিক ডায়ার৷ বল ধরতে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন গোলরক্ষক৷ কিন্তু তাঁকে ফাঁকি দিয়ে তাঁর ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালের দিকে৷
নিশ্চিত গোলের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ডায়ার, কিন্তু বল গোললাইন ক্রস করার ঠিক আগ মুহূর্তে ছুটে এসে পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন টবি আল্ডারভাইরেল্ড৷
এমন দারুণ সুযোগ পরবর্তী সময়ে আর মেলেনি ইংলিশ দলের৷ বরং ৮২ মিনিটে রীতিমতো হাঁটতে হাঁটতেই আরো এক গোল দিয়ে বসে বেলজিয়াম৷ ডে ব্রুইনের পাস থেকে আস্তে করে বল জালে জড়ান হাজার্ড৷
বিশ্বকাপে এটিই বেলজিয়ামের সেরা সাফল্য৷ এর আগে ১৯৮৬ সালে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেললেও তাতে ফ্রান্সের সাথে ৪-২ গোলে হারতে হয়েছিল বেলজিয়ামকে৷
রোড টু ফাইনাল: ক্রোয়েশিয়া
ক্রোয়েশিয়া খেলবে ফাইনাল! যত ধরনের ভবিষ্যৎবাণী ছিল, এর কোনোটিতেই ছিল না ক্রোয়েশিয়ার নাম৷ কিন্তু মদ্রিচ-রাকিটিচরা এখন স্বপ্নের ট্রফি থেকে কেবল ৯০ মিনিট দূরে৷
ছবি: Imago/V. Sharifulin
সুপার ঈগল পরীক্ষা
১৬ই জুন, কালিনিনগ্রাদ৷ ধারণা করা হচ্ছিল, আফ্রিকান দলটির পাওয়ার ফুটবলের সামনে ক্রোয়েশিয়াকে জয় আদায় করতে বেশ ঘাম ঝরাতে হবে৷ কিন্তু হলো ঠিক তার উলটো৷ প্রথমার্ধেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়াটরা৷ দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ১৯ মিনিট বাকি থাকতে পেনাল্টি থেকে গোল করে ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত করেন অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
আর্জেন্টিনাবধ মহাকাব্য
ক্রোয়েশিয়া যে বিশ্বকাপ কাঁপাতে যাচ্ছে, তার প্রমাণ মিললো গ্রুপপর্বে দলটির দ্বিতীয় ম্যাচে৷ পরিসংখ্যান, পারফরম্যান্স, তারকাখ্যাতি, সব দিকেই এগিয়ে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা৷ কিন্তু মাঠে যে পরিসংখ্যানের বদলে ৯০ মিনিটে পায়ের জাদুই বড় নির্ধারক, তা মেসি-হিগুয়েইনদের ভালোমতো বুঝিয়ে দিলো ক্রোয়েশিয়া৷ ৩-০ গোলে হেরে রীতিমতো প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে যায় আর্জেন্টিনা৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন
গ্রুপের অন্য দলগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বীতার কোনো সুযোগই দেয়নি ক্রোয়েশিয়া৷ গ্রুপপর্বের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দাপটের সাথে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়েই হয় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন৷
ছবি: Getty Images/C. Brunskill
দানবীয় সুবাসিচ
শেষ ষোলতে ডেনমার্কের সাথে ১-১ গোলেই শেষ হয় খেলার মূল সময়ের ৯০ মিনিট৷ অতিরিক্ত সময়েও কেউ সমতা ভাঙতে পারেনি৷ ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে৷ আর সেখানেই বিশ্বকাপের সেরা নৈপুণ্য দেখালেন ক্রোয়াট গোলকিপার ডানিয়েল সুবাসিচ৷ প্রতিপক্ষের তিন তিনটি শট অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় ঠেকিয়ে একাই দলকে তুলে দেন কোয়ার্টারফাইনালে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
রুশ বিশ্বকাপে রাশিয়াই বিদায়
সোচির মাঠে গ্যালারিভর্তি দর্শক৷ পুরো সমর্থন রাশিয়ার পক্ষে৷ কোনোরকমে জায়গা খুঁজে বসেছেন ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকেরা৷ রাশিয়া একটু আক্রমণে গেলেই সমর্থকদের চিৎকারে কান পাতা দায়৷ প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও সমানে লড়াই করে ২-২ গোলে ড্র করে ক্রোয়েশিয়া৷ পর পর দুই ম্যাচে আবার টাইব্রেকারে যেতে হয় ক্রোয়েশিয়াকে৷ আবার সুবাসিচের ঝলক৷ ফার্নান্দেজের মিসের পর স্মোলভের শট ঠেকিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিতে তুলে দেন ক্রোয়েশিয়াকে৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
দ্বিতীয়বারেই বাজিমাত, বাড়ি গেল ইংল্যান্ড
১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া৷ বিদায় নিতে হয় সেবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে হেরে৷ এবারও সেই ভয় দেখা দিয়েছিল৷ খেলা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যেই প্রথম গোল করে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড৷ কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধ করে এবং অতিরিক্ত সময়ে আরেক গোল করে স্বপ্নের ফাইনালে পৌঁছে যায় ক্রোয়েশিয়া৷ সমর্থকেরা ততক্ষণে ভাসছেন আনন্দের অশ্রুতে৷