বিশ্বকাপের শুরুতে প্রতিবারের মতো এবারও ছিল বেশকিছু ফেবারিট দল৷ কিন্তু পয়েন্ট টেবিলটা দেখতে কিন্তু একেবারেই অন্য সব বিশ্বকাপের মতো ছিল না৷
ছবি: Reuters/E. Foudrot
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সম্ভাব্য বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নের তালিকায় ছিল বেশ কিছু দলের নাম৷ গোল ডটকম থেকে শুরু করে শীর্ষ ফুটবল ম্যাগাজিনগুলোর তালিকায় বরাবরের মতোই আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্স, ব্রাজিল এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির নাম ছিল৷
এই তালিকা থেকে ফ্রান্স বেশ দাপটের সাথে খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে৷ কিন্তু মাঠের খেলা আসলে কী বলে?
এবারেরটিই সম্ভবত প্রথম বিশ্বকাপ, যেখানে বড় দল ছোট দলের পার্থক্য এতটাই ঘুচে গেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে কে ফেবারিট আর কে ছোট দল, তা বুঝতেও দর্শক-সমর্থকদের হিমশিম খেতে হয়েছে৷
Saiful Bari Titu Edited - MP3-Stereo
This browser does not support the audio element.
গ্রুপ ‘এ'-র কথাই ধরা যাক৷ উরুগুয়ের পাশাপাশি মোহাম্মদ সালাহ'র মিশরকে ধরা হচ্ছিলো এই গ্রুপের ফেবারিট৷ অথচ সেই মিশরকে একটিও পয়েন্ট না নিয়ে খালিতে হাতে ফেরত যেতে হয়৷ অন্যদিকে প্রথম ম্যাচ থেকেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে রাশিয়া উঠে যায় শেষ ষোলতে৷
গ্রুপ বি থেকে ফেবারিট স্পেন ও পর্তুগাল শেষ ষোলতে উঠে আসে ঠিকই, কিন্তু সে লড়াই ছিল ঘাম ঝরানো৷ ৫ পয়েন্ট করে সংগ্রহ করতে গিয়ে ইরানের সাথে ১-১ গোলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় রোনাল্ডোর পর্তুগালকে৷ অন্যদিকে, স্পেনের সাথে পাল্লা দিয়ে মরক্কো করে ২-২ গোলে ড্র৷
গ্রুপ সি-তে অবশ্য তেমন একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি ফ্রান্স ও ডেনমার্ককে৷ ফ্রান্স এক ম্যাচ এবং ডেনমার্ক দুই ম্যাচে ড্র করলেও শেষ ষোলতে ওঠা পড়েনি হুমকির মুখে৷ তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি পেরু ও অস্ট্রেলিয়া৷
গ্রুপ ডি-তে আর্জেন্টিনাকে ধরা হচ্ছিলো সবচেয়ে ফেবারিট৷ কিন্তু সেই আর্জেন্টিনাই শেষ পর্যন্ত প্রায় বাদ পড়তে বসেছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই৷ শেষ ম্যাচের হিসেব-নিকেষে আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়াকে পেছনে ফেলে মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলতে যেতে পারে আর্জেন্টিনা৷ তবে রীতিমতো দাপট দেখিয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ক্রোয়েশিয়া৷
গ্রুপ ই থেকে শেষ ষোলতে যেতে বেগ পেতে হয়নি ফেবারিট ব্রাজিলকে৷ তবে প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি কোচ তিতের কপালে যথেষ্ট চিন্তার ভাঁজ ফেলতে সক্ষম হয়৷ সুইজারল্যান্ডও শেষ ষোলতে ওঠে, কিন্তু তার আগে হারতে হয় সার্বিয়ার কাছে৷
এবারের বিশ্বকাপের যা কিছু সেরা
আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় একটি মাত্র দল৷ সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও জোটে একজনের ভাগ্যে৷ কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে এর বাইরেও তো স্মরণীয় অনেক কিছু থাকে৷ সেরকম বিষয়গুলো নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
বেশি গোল যে দলের
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি গোল কোন দল করেছে, বলুন তো? বেলজিয়াম৷ হ্যাঁ, সেমি ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার আগে ১৪ গোল করে তারা৷ তারপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারানোয় সংখ্যাটি বেড়ে হয়ে যায় ১৬৷ এত গোল আর কোনো দল করতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল
কোন দল কতটা আক্রমণাত্মক তা নির্ধারণের একটাই উপায় আর তা হলো কোন দল কত বেশি আক্রমণ করেছে সে হিসেবটা দেখা৷ সেই হিসেবে ব্রাজিলই ছিল সবচেয়ে এগিয়ে৷ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে ২৯২টি আক্রমণ শানিয়েছে নেইমারের দল৷ তবে পরে ক্রোয়েশিয়া পেছনে ফেলে তাদের৷ ফাইনাল শেষে, অর্থাৎ ব্রাজিলের চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলায় ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ সংখ্যায় দাঁড়ায় ৩২২৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সবচেয়ে বেশি পাস
এখানে কারা এগিয়ে ইংল্যান্ড৷ মোট সাতটি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৩৩৬টি পাস দিয়েছে তারা৷
ছবি: Reuters/L. Smith
সেরা গোলরক্ষক?
এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক কে? অনেকের নামই হয়ত উঠে আসবে৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচানো যদি মানদণ্ড হয়, তাহলে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন মেক্সিকোর গুইলেরমো ওচোয়া৷ দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত চার ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৫টি গোল বাঁচিয়ৈছিলেন তিনি৷ তবে পরে বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কর্তোই তাঁকেও ছাড়িয়ে যান৷ ৭ ম্যাচে তিনি বাঁচিয়েছেন ২৭টি গোল৷
ছবি: Reuters/S. Perez
সবচেয়ে আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়
নিন্দুকেরা তাঁর মাঠে গড়াগড়ি দেখতে দেখতেই হয়রান, অথচ পরিসংখ্যান বলছে নেইমার জুনিয়রই ছিলেন এবারে বিশ্বকাপের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ফরোয়ার্ড৷ ব্রাজিল তো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে৷ তাই মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন নেইমার৷ ওই পাঁচ ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছেন মোট ২৭টি৷ এত শট আর কোনো ফরোয়ার্ড নিতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
সবচেয়ে পরিশ্রমী পেরিসিচ
ক্রোয়েশিয়া যে এবার বিশ্বকাপ মাতালো, তার মূল কৃতিত্ব যদি একজন খেলোয়াড়কে দিতে চান, কার কথা বলবেন আপনি? নিশ্চয়ই লুকা মদ্রিচ! সেমিফাইনাল পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার ছয়টি ম্যাচে সব মিলিয়ে ৬৩ কিলোমিটার দৌড়েছেন ৩৩ বছর বয়সি এই প্লে-মেকার৷ তবে ফাইনাল শেষে দেখা যায় তাঁকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন পেরিসিচ৷ ৭ ম্যাচে ৭২ কিলোমিটার দৌড়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
সেরা রক্ষণভাগ
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২টি দলের রক্ষণভাগের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ক্রোয়েশিয়াই সেরা৷ ফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচে মোট ৩০১টি ক্লিয়ারেন্স, ট্যাকল এবং সেভ করেছে ক্রোয়াট ডিফেন্ডাররা৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
রামোসকে মনে রাখতে হবে যে কারণে
স্পেনের রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী সার্হিয়ো রামোস৷ তবে এবার শুধু রক্ষণের কাজেই ব্যস্ত ছিলেন না রেয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক৷ আক্রমণ রচনাতেও ভূমিকা রেখেছেন অনেক৷ তাই বিশ্বকাপের অন্য সব খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি পাস দিয়েছেন তিনি৷ এ আসরে মোট ৪৮৫টি পাস দিয়েছেন রামোস৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
বেশি গোলের ম্যাচ
এবারের বিশ্বকাপ শুরুই হয়েছিল সৌদি আরবের বিপক্ষে রাশিয়ার ৫-০ গোলের জয় দিয়ে৷ স্পেন-পর্তুগাল ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচেও দেখা গেছে গোলের ছড়াছড়ি৷ পরে দু’টি ম্যাচে আরো বেশি গোল হয়েছিল৷ বেলজিয়াম-টিউনিশিয়া (৫-২) ও ইংল্যান্ড-পানামা (৬-১) ম্যাচে সাতটি করে গোল দেখা গেছে৷ ওই দু’টিই এবারের আসরের সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ৷
ছবি: Reuters/M. Childs
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি কার্ড
ম্যাচে খুব বেশি উত্তেজনা থাকলে বা লড়াইটা খুব জমজমাট হলেই সাধারণত খেলোয়াড়রা মেজাজ হারান৷ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তখন কঠোর হতে হয় রেফারিকে৷ তখন কার্ডও দেখাতে হয় বেশি৷ কিন্তু বেলজিয়াম বনাম পানামা ম্যাচটিতে সে অর্থে কোনো উত্তেজনাই ছিল না৷ তারপরও ম্যাচে মোট আটটি কার্ড দেখিয়েছেন রেফারি৷ এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখানো হয়েছে সেই ম্যাচেই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস
বেশি পাসের প্রসঙ্গ এলে স্পেনের নাম আসবেই৷ এই বিশ্বকাপে যে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পাস হয়েছে, সেখানেও স্পেন আছে৷ কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রাশিয়া৷ হ্যাঁ, স্পেন-রাশিয়া ম্যাচেই হয়েছিল সবচেয়ে বেশি পাস৷ সেই ম্যাচে দু’দলের খেলোয়াড়রা মোট ১২৩৫টি পাস দিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
11 ছবি1 | 11
গ্রুপ এফ-এ ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি৷ এবারও জার্মানিকে বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদারই ধরে নেয়া হচ্ছিলো৷ কিন্তু সেই জার্মানিকেই কিনা মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো প্রথম পর্ব থেকেই, তা-ও টেবিলের তলানিতে থেকে৷ সুইডেন ও মেক্সিকো উঠে যায় শেষ ষোলর লড়াইয়ে৷
গ্রুপ এফ-এর পরিস্থিতি ছিল, কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান৷ শেষ ম্যাচ পর্যন্ত প্রতিটি দলেরই ছিল নক আউটে যাওয়ার সম্ভাবনা৷ শেষ পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে কলম্বিয়া ও জাপান যায় শেষ ষোলতে৷
শেষ ষোলর লড়াইয়েই ফেবারিটতের দাপট কাজে লাগেনি৷ উরুগুয়ের কাছে পর্তুগাল, ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনা, রাশিয়ার কাছে স্পেন হেরে বিদায় নেয়৷ দুই গোলে জাপানের কাছে পিছিয়ে থেকেও কোনোরকমে জয় নিশ্চিত করতে পারে বেলজিয়াম৷ সেই বেলজিয়ামের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলকে৷
ছোট দলগুলোর প্রচণ্ড শক্তিতে উঠে আসাকে খুব ইতিবাচক মনে করছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু৷ তিনি বলছেন, ‘‘ফুটবলের জন্য ভালো তো এটা৷ আরো এন্টারটেইনিং হলো আরকি৷ আপনি যদি প্রেডিকশন দেন, আর প্রেডিকশন মিলে যায়, তাহলে মজাটাই থাকলো না৷''
গোলাম সারোয়ার টিপু বলছেন, ফুটবলপ্লেয়িং দেশগুলোতে ফুটবল নিয়ে সার্বিকভাবে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা আরো বেড়েছে৷ এর ফল দেখা যাচ্ছে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে৷ তিনি মনে করেন, এর ফলে নতুন দেশগুলোও অনুপ্রাণিত হবে৷
সাবেক এই খেলোয়াড় বলছেন, ‘‘খেলায় ব্যবসায়িক ব্যাপারও অনেক কাজ করে৷ জার্সি নাম্বার থেকে শুরু করে অনেককিছুতেই৷ মিডিয়াও এতে অনেক ভূমিকা রাখে৷ ফলে এই জায়গাটা যে নতুনরা ভাঙতে পারলো, এটা ফুটবলের জন্য ভালো৷''
Golam Sarwar Tipu Edited - MP3-Stereo
This browser does not support the audio element.
তাঁর সাথে একমত জাতীয় দলের আরেক সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ, সাইফুল বারী টিটুও৷খেলোয়াড় বাছাই থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ ও কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখন সব দেশই অনেক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগুনোয় দলগুলো কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও মনে করেন তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‘তাদের যে জিনিসটা আছে, তা হলো ফুটবল কালচার৷ আমাদের দেশে যেমন একসময় ফুটবল অনেক জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু খেলাটা কখনও কালচারের অংশ হয়নি৷''
‘‘মডার্ন ফুটবলে ভালো করতে হলে যে জিনিগুলোতে নজর দিতে হয়, ইন টার্মস অফ টেকনিক্যাল অ্যান্ড ট্যাকটিকেল এবং ফিজিক্যাল-সাইকোলজিক্যাল, সবদিকে তাঁরা সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করে৷''
অনেক দল বড় তারকা না থাকলেও শুধু পরিকল্পিত স্ট্র্যাটেজির ফলে অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন টিটু৷
শুধু দলই নয়, নতুন নতুন দাপুটে খেলোয়াড়দেরও খুঁজে পেয়েছে রুশ বিশ্বকাপ৷ ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে ও বেনিয়ামিন পাভার্ড, রাশিয়ার আলেক্সান্ডার গোলোভিন, মিশরের হাকিম জিয়াচ, মেক্সিকোর হারভিং লোসানোর মতো তরুণ তারকারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসছে দিনগুলোতে চলবে তাঁদেরই রাজত্ব৷
গোলাম সারোয়ার টিপু বললেন, ‘‘অলরেডি যাঁরা সুপার স্টার, ভালো খেলেও তাঁদের ছায়ায় থেকে অনেকে হারিয়ে যান৷'' কিন্তু এই বিশ্বকাপ তাঁদেরও সামনে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার, এঁদের ছায়ার ভেতরে ছিল অনেক খেলোয়াড়৷ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এঁদের অনেকেই এই তারকাদের কাছাকাছি মানের খেলোয়াড়৷ এই জিনিসটাই আমার কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে৷''
বিশ্বকাপে বেশি গোল করেছেন যাঁরা
বিশ্বকাপ শুরুর আগে বেশি আলোচনায় ছিলেন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমাররা৷ তারকাদ্যুতিতে যে অনেক এগিয়ে তাঁরা! কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে তাঁরা থেকে গেলেন নিষ্প্রভ৷ সেখানে সবচেয়ে উজ্জ্বল হ্যারি কেন৷ তাঁর পরে কারা?
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
হ্যারি কেন, ৬ গোল
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার দেয়ার চল শুরু ১৯৮২-র আসর থেকে৷ সেবার সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইটালি৷ আরো অবাক করেছিলেন পাওলো রসি৷ আসর শুরুর আগে যাঁকে কেউ প্রায় চিনতোই না, সেই রসিই পুরস্কারটি জিতেছিলেন প্লাতিনি, জিকো, মারাদোনাদের পেছনে ফেলে৷ এবারের আসরে পানামার বিপক্ষে একটি হ্যাটট্রিকসহ মোট ৬ গোল করায় ‘গোল্ডেন বুট’ জিতে নিলেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন৷
ছবি: Reuters/C. Barria
গ্রিসমান, ৪ গোল
২০ বছর পর ফ্রান্স আবার চ্যাম্পিয়ন৷ দলকে চ্যাম্পিয়ন করায় গ্রিসমানের অবদান ৪ গোল৷
ছবি: Reuters/A. Vaganov
কিলিয়ান এমবাপে, ৪ গোল
আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে একাই বিদায় করেছেন তিনি৷ ১৯ বছর বয়সি এ ফরোয়ার্ড নিজে করেছেন দুই গোল আর পেনাল্টি আদায় করে আরেকটি গোলেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান৷ ফাইনাল শেষে তাঁর নামের
পাশে লেখা চার গোল৷ এমবাপের মাঝে আগামীর সুপারস্টারকে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
রোমেলু লুকাকু, ৪ গোল
বেলজিয়ামের ফরোয়ার্ড লুকাকুও কম যান না৷ ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ১৫৩ মিনিট খেলে ৫ গোল করেছেন হ্যারি কেন৷ লুকাকু খেলেছেন তার চেয়েও কম, মাত্র ১৪৯ মিনিট৷ ওই সময়েই আদায় করে নিয়েছেন ৪ গোল৷
ছবি: imago/Photonews/Panoramic
ডেনিস চেরিশেভ, ৪ গোল
রাশিয়ার এই মিডফিল্ডারও করেছেন ৪ গোল৷ তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটিই ছিল এ আসরে তাঁর শেষ গোল৷ কারণ, সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় তাঁর দেশ রাশিয়ার জন্য শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপ অভিযান৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, ৪ গোল
পর্তুগালের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নামের পাশেও লেখা হয়ে যায় ৪ গোল৷ তারপর অবশ্য আর গোলের দেখা পাননি৷ তাঁর বিশ্বকাপ জয়ের বাসনা অপূর্ণ রেখেই উরুগুয়ের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
এডেন হ্যাজার্ড, ৩ গোল
বেলজিয়ামের হ্যাজার্ড ৭ ম্যাচে করেছেন ৩ গোল৷ দলের সাফল্যে তাঁর অবদান অবশ্য তার চেয়ে অনেক বেশি৷ মধ্যমাঠে দলের মধ্যমণিই ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/V.R.Caivano
মারিও মানসুকিচ, ৩ গোল
ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডও সাত ম্যাচ খেলে করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gilliar
ইভান পেরিসিচ, ৩ গোল
মদ্রিচ, মানসুকিচের মতো ক্রোয়েশিয়ার ইভান পেরিসিচের খেলাও এবার সবার নজর কেড়েছে৷ ৭ ম্যাচে তিনিও করেছেন ৩ গোল৷
ছবি: Reuters/D. Staples
এডিনসন কাভানি, ৩ গোল
প্রথম রাউন্ডে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি৷ তিন ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ১ গোল৷ কিন্তু ঠিক সময়েই জ্বলে উঠে উরুগুয়েকে তুলে দিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে৷ কাভানির জোড়া গোলের কারণেই রোনাল্ডোর আশাভঙ্গ হয়েছে, বিদায় নিয়েছে পর্তুগাল৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
আর্টেম জিয়ুবা, ৩ গোল
রাশিয়ার এই ফরোয়ার্ডে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন দুই গোল নিয়ে৷ কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করা ম্যাচে এক গোল করায় তিনিও উঠে এসেছে স্বদেশী চেরিশেভের পাশে৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
ইয়েরি মিনা, ৩ গোল
খামেস রদ্রিগেস দলে থাকতেও এবার কলম্বিয়ার ইয়েরি মিনা নজর কেড়েছেন৷ দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির জন্য খেলতে পারেননি রদ্রিগেস৷ মিনার গোলেই ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিল কলম্বিয়া৷ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ায় অবশ্য সেখানেই শেষ হয়ে যায় কলম্বিয়া আর মিনার ২০১৮-র বিশ্বকাপ মিশন৷
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
দিয়েগো কস্তা, ৩ গোল
পর্তুগালের বিপক্ষে তিনি যেন রোনাল্ডোর সঙ্গে গোল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন৷ তবে কস্তা দুই গোল করে থামলেও রোনাল্ডো থেমেছেন শেষ মুহূর্তের গোলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে৷ প্রথম রাউন্ড শেষ করেছিলেন তিন ম্যাচে তিন গোল নিয়ে৷ তারপরই স্পেনের বিদায় এবং কস্তার জন্যও বিশ্বকাপ আপাতত শেষ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
জন স্টোনস, ২ গোল
এই তালিকায় জন স্টোনসের নামটা কিন্তু বিস্ময় জাগানোর মতো৷ ডিফেন্ডার হয়েও ইতিমধ্যে করে ফেলেছেন ২ গোল৷ পানামাকে ৬-১ গোলে হারিয়ে এ আসরে প্রথম রাউন্ডে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি গড়েছে ইংল্যান্ড৷ সেই ম্যাচেই দুই গোল করেছিলেন স্টোনস৷
ছবি: Reuters/M. Childs
ফিলিপে কুটিনিয়ো, ২ গোল
নেইমার যখন গোলের দেখা পাচ্ছেন না, তখনই ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছিলেন কুটিনিয়ো৷ প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের একমাত্র গোলটি এসেছিল তাঁর পা থেকেই৷ কোস্টারিকা ম্যাচেরও গোল-বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছিলেন প্রথম পর্বের পারফর্ম্যান্সে নেইমারসহ অনেক বড় তারকাকেই ছাড়িয়ে যাওয়া এই মিডফিল্ডার৷
ছবি: Reuters/D. Staples
মোহামেদ সালা, ২ গোল
ভক্তদের অনেক আশা ছিল তাঁর কাছে৷ কিন্তু ইনজুরির কারণে বেশি কিছু করতে পারেননি মিশরের মোহামেদ সালা৷ দুই ম্যাচ খেলে করেছেন দুই গোল৷
ছবি: Reuters/H. Romero
আরো যাঁদের ২ গোল
ব্রাজিলের নেইমার, জাপানের তাকাশি ইনুই, নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসা, ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ, উরুগুয়ের লুই সুয়ারেজ, সুইডেনের আন্দ্রেয়াস গ্রাঙ্কভিস্ট, আর্জেন্টিনার আগুয়েরো, দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউংমিন, টিউনিশিয়ার খাজরি আর অস্ট্রেলিয়ার জেডিনারও করেছেন দু’টি করে গোল৷
ছবি: Reuters/C.G. Rawlins
পারলেন না মেসি
এবারও বিশ্বকাপ জেতা হলোনা লিওনেল মেসির৷ দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলে হেরে গেছে ফ্রান্সের কাছে৷ মেসির বিশ্বকাপ মিশনও শেষ হয়েছে মাত্র ১ গোল নিয়ে!
ছবি: Getty Images/G. Rossi
18 ছবি1 | 18
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷