1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৪৭ বছরে ভোটই দেননি তাঁরা!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ নভেম্বর ২০১৮

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নির্বাচনেই ভোট দেননি৷ কোনো এক পীরের নির্দেশে নাকি তাঁরা এত বছর ধরে ভোট দিচ্ছেন না৷

Bangladesch Parlamentswahlen
ছবি: AFP/Getty Images

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৪ হাজার ৪শ' ৫৪ জন৷ তাঁদের মধ্যে নারী ভোটার ১২ হাজার ১শ' ১৪ জন৷ নারীরা মোট ভোটারের অর্ধেক হলেও তাঁদের ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন৷ এই অর্ধেক ভোটারের ভোট নিয়ে কারো তেমন মাথা ব্যথাও ছিল না৷ না জন প্রতিনিধি, না নির্বাচন কমিশন অথবা প্রশাসনের৷  নির্বাচন প্রশাসনের দাবি, তারা এতদিন বিষয়টি জানতেনই না৷ এবার লোকমুখে শুনেছেন৷ কিন্তু প্রতি নির্বাচনের আগেই সংবাদমাধমে ভোট না দেয়া এই নারীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ এবারও হচ্ছে৷

কেন নারীরা ভোট দেন না?

বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের চাঁদপুর প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের কয়েকদিন আগে রূপসা এলাকার ওই নারীদের নিয়ে প্রতিবেদন করতে যান৷ সেখানে নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাঁদের প্রায় কারোই নির্বাচনে ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই৷ জয়পুরী বা জৈনপুরী নামে এক পীরের কথিত নির্দেশে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ওই এলাকার নারীরা ভোট দেন না৷ পীর সাহেব নারীদের ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করেন৷ পর্দায় থাকতে বলেন৷ এখন নারীরা নানা কাজে বাইরে গেলেও ভোট না দেয়ার রেওয়াজ অব্যাহত আছে৷

তালহা যুবায়ের

This browser does not support the audio element.

তালহা জানান, ‘‘এই এলাকার নারীরা এখনো মনে করেন, তাঁরা ভোট দিলে বিপদ হতে পারে৷ তাঁদের বিশ্বাস পীরের নির্দেশ অমান্য করলে কোনো ক্ষতি হতে পারে৷ এলাকায় এমন কথাও প্রচলিত আছে যে, দু-একজন নারী অতীতে ভোট দিতে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু তার কোনো প্রমাণ নেই৷ আর এখন সেই পীরও নেই৷ তার কোনো দরগাহ বা আস্তানাও নেই৷ তারপরও তাঁরা ওই কথিত নির্দেশের কথা বিশ্বাস করেন৷''

তালহা আরো জানান, ‘‘নারীরা ভোট না দিলেও নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিন্তু আছেন৷ নারীরা ভোটেও দাঁড়ান৷'' তিনি বলেন, ‘‘মনোয়ারা বেগম নামে এক নারী কাউন্সিলরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে৷ তিনি জানিয়েছেন, নারীরা ভোটে দাঁড়ালেও নারী আত্মীয়-স্বজন ছাড়া আর কোনো নারী ভোট দেন না৷ আমরা পুরুষ ভোটারদের ভেটেই কাউন্সিলর হই৷''

পীরের নির্দেশ, নাকি গুজব?

ফরিদগঞ্জ রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. ইসকান্দার আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই পীর কোনো নির্দেশ দিয়েছিলেন কিনা তা আমার জানা নেই৷ আসলে আমার মনে হয়, এটা একটা গুজব আর গুজবের ওপর ভিত্তি করেই নারীরা বছরের পর বছর ভোট দিচ্ছেন না৷ এর জন্য আমরাও দায়ী৷ আমরা এতদিন তাঁদের ভোট দেয়ানোর কোনো উদ্যোগ নেইনি৷ আমরা বিভিন্ন সময় যাঁরা চেয়ারম্যান হয়েছি, তাঁরা এটাকে ঝামেলা মনে করেছি৷ মনে করেছি, নারীদের ভোটের উদ্যোগ নিলে না আবার আমার ভোট কমে যায়!''

ইসকান্দার আলী

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে৷ নারীরা অল্প সংখ্যায় হলেও ভোট দিতে শুরু করেছেন৷ এবার নারীরা ব্যাপক সংখ্যায় ভোট দেবেন বলে আশা করি৷ আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালাচ্ছি৷ নানা সভা-সমাবেশ করছি৷ নারীদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস ভাঙছে, পুরুষরাও তাঁদের ভোট দিতে বলছেন৷ এবার সংসদ নির্বাচনে এখানকার প্রার্থীরাও কাজ করছেন৷''

নির্বাচন কমিশনের ঘুম ভাঙবে?

রূপসা এলাকার নারীরা যে স্বাধীনতার পর থেকে ভোট দিচ্ছেন না সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে৷ তারা লোকমুখে এবারই নাকি শুনেছেন৷ আর ওই এলাকা থেকে লিখিত কোনো আবেদন না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে এখনো জানানো হয়নি৷ তবে প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করেছেন চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম৷ আরো কয়েকজন সাংবাদিক  এবং স্থানীয় অধিবাসীরা আমাকে বলেছেন৷ এর আগে আমি জানতাম না যে, রূপসা এলাকায় নারীরা ভোট দেন না৷ আর কেন দেয় না তার কারণও আমার জানা নেই৷ এটা এখানে রেওয়াজ হিসেব চলে আসছে৷''

হেলাল উদ্দীন

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘ওই এালাকায় রিটার্নিং ও পোলিং অফিসাররা কাজ করছেন৷ তাঁরা সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন৷ নির্বাচন কমিশন যে পরিকল্পনা দেয় সে অনুযায়ী আমরা নারী ভোটারদের জন্য কাজ করব৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে কিছু এনজিও ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে৷ তারা নারী ভোটারদের মধ্যে প্রচারপত্র, লিফলেট বিলি করবেন৷ পোস্টারও করবেন৷ আয়োজন করবেন মত বিনিময়ের৷ তবে তা এখনো শুরু হয়নি৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা আশা করি এবারের নির্বাচনে রূপসার নারী ভোটাররা ভোট দিতে যাবেন৷ তবে কেউ না গেলে আমাদের কিছু করার নেই৷ ভোট দেয়া ভোটারের স্বাধীনতা৷ কেউ যদি ভোট দিতে না যান, তাঁকে বাধ্য করা যায় না৷''

তবে তালহা জুবায়ের বলেন, ‘‘নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে কিছু উদ্যোগ এবার নেয়া হলেও আমি নারী-পুরুষ উভয়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রচলিত ধারণায় বড় কোনো পরিবর্তন দেখিনি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ