সরকারে থাকা জোটগুলোর সমর্থন যখন কমেই চলেছে, গ্রিন পার্টি এবং উগ্র ডানপন্থি এএফডি তাদের অবস্থান ক্রমশ মজবুত করছে৷ কিছু জার্মান এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও অন্যরা পরিবর্তনকে গণতন্ত্রের জন্য ভালো বলেই মনে করছেন৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার প্রকাশিত জার্মানির সর্বশেষ ডয়েচলান্ডট্রেন্ড জরিপ বলছে, ইতিহাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি গত সপ্তাহের চেয়েও এক পয়েন্ট হারিয়েছে৷ ফলে সরকারের সমর্থন এসে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে৷
জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি পরিচালিত জরিপ বলছে, এই রোববার ফেডারেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিডিইউ পেতো কেবল ২৫ শতাংশ ভোট৷ এসপিডিকে ভোট দিতো ১৪ শতাংস জার্মানের সমর্থন৷
উগ্র ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়চলান্ড এএফডি ১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছে৷
‘গ্র্যান্ড কোয়ালিশনের' এই পতনে লাভবান হয়েছে গ্রিন পার্টি৷ ২০১১ সালের নির্বাচনের পর থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে দলটি৷ ১৯ শতাংশ জার্মান বলছেন, তাঁরা পরিবেশবাদী এই দলটিকেই ভোট দিতেন৷
বাভারিয়া রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচন থেকেও বেশ সাফল্য তুলে নিয়েছে গ্রিন পার্টি৷ রাজ্যটিতে সিডিইউ-এর সহযোগী খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন সিএসইউ প্রাধান্য ধরে রাখলেও ১২ অক্টোবরের নির্বাচনের পর তারা হারিয়েছে ১২ শতাংশ মানুষের সমর্থন৷ অন্যদিকে গ্রিন পার্টিক সমর্থন ২০১৩ সালের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে৷
জার্মানির ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর জনপ্রিয়তা ক্রমাগত কমতে থাকায় ৫১ শতাংশ জার্মান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ একই সময়ে ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নতুন নতুন দলের উত্থান দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে৷
জার্মানিতে যে সব নারী চ্যান্সেলর হতে চান
জার্মানির সাতটি মুখ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে চারটি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হলেন মহিলা৷ চলুন, পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক...
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
‘মা ম্যার্কেল’
জার্মানির প্রথম মহিলা চ্যান্সেলর হিসেবে ২০০৫ সালে শপথ গ্রহণ করার পর ১২ বছর কেটে গেছে – ম্যার্কেল এখনও সেই পদেই অধিষ্ঠিত রয়েছেন৷ এমনকি নিজের দলের লোকেরাও আজ তাঁকে ‘মুটি’ বা ‘মা’ বলে অভিহিত করে – মা বলতে জাতির জননী – এবং সেটা ঠাট্টা বা অশ্রদ্ধা করে নয়৷ আর্থিক সংকট থেকে শুরু করে উদ্বাস্তু সমস্যা অবধি হাল ধরে রেখে জার্মানিকে বাঁচিয়ে চলেছেন ‘মা’ – এই হলো জনমানসে ম্যার্কেলের ভাবমূর্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Bergmann
আরো চার বছর?
জরিপ বলছে, ম্যার্কেলের সিডিইউ দল আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনেও ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেতে চলেছে৷ অর্থাৎ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলের একটি চতুর্থ কর্মকালের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
‘সবুজ দলের আঙ্গেলা’
জার্মানির সবুজ পার্টি যে পশ্চিমি বিশ্বের সফলতম পরিবেশবাদী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গণ্য, তার একটি কারণ হলো, জার্মানির সবুজদের ডান কিংবা বাম, কোনোদিকেই ফেলা চলে না৷ ঠিক সেইভাবেই সবুজদের কাট্রিন গ্যোরিং-একহার্ড একদিকে কট্টর পরিবেশবাদী, অন্যদিকে আবার গভীরভাবে ধর্মানুরাগী৷
ছবি: imago/S. Simon
সবুজদের ডবল টিকিট
জার্মানির সবুজদের এবার একজনের বদলে দু’জন মুখ্য প্রার্থী: কাট্রিন গ্যোরিং-একহার্ড ও চেম ও্যজদেমির, একজন মহিলা ও একজন পুরুষ, কিন্তু দু’জনেই মধ্যমপন্থি, এই দু’জনেই আবার দলের যুগ্ম সভাপতি৷ শোনা যাচ্ছে, সবুজরা নাকি এবার ম্যার্কেল সরকারে জোট সহযোগী হবার আশা করছে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
বামপন্থি নেত্রী
বামদলের প্রধান সারা ভাগেনক্নেশ্ট কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির ইয়েনা শহরে বড় হয়েছেন৷ তাঁর বাবা ইরানি বংশোদ্ভূত ও মা জার্মান, তাই তাঁর নামের বানান কিন্তু প্রচলিত জার্মান ‘সারাহ’ নয়, বরং ইরানি ধাঁচের ‘সাহরা’৷ তিনি একবার মন্তব্য করেছিলেন, সমাজতন্ত্রের আদর্শের সঙ্গে সাবেক পূর্ব জার্মানির ‘‘কোনো সম্পর্ক নেই’’৷ অপরদিকে তিনি ‘‘শিকার ধরা পুঁজিবাদের’’ বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছেন৷
ছবি: DW/R.Oberhammer
বিরোধীর ভূমিকায় চিরকাল?
বামদল গত চার বছর ধরে জার্মান সংসদে বৃহত্তম বিরোধী দল৷ ২০১৩ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল বলেছিল, তারা কোনোমতেই বামদলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করবে না৷ এবার কিন্তু এসপিডি এ বিষয়ে নীরব৷ হয়ত এসপিডি সিডিইউ-সিএসইউ-এর চেয়ে কম আসন পেলেও অন্য একটি জোট সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Steffen
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’
অ্যালিস ভাইডেলকে উগ্র দক্ষিণপন্থি, বহিরাগত বিদ্বেষি এএফডি দলের মুখাবয়ব বলা চলে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ উচ্চশিক্ষিতা ভাইডেল নিজে সমকামী; তাঁর দল সমকামী বিবাহের বিরোধী৷ এএফডি দল যখন মূলত ইউরো মুদ্রা বিরোধী দল ছিল, তখন ভাইডেল যোগদান করেন৷ সেযাবৎ তাঁর দলে দক্ষিণপন্থি প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও দলের একাধিক সদস্যকে সম্প্রতি জাতিবাদী ও বহিরাগত বিদ্বেষি মন্তব্য করতে শোনা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
ভাইডেল একা নন
এএফডি দলও এবার চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে দু’জনকে মনোনীত করেছে, ভাইডেল ও এএফডি দলের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সান্ডার গাউল্যান্ড৷ ভাইডেল তাঁর দলকে কেন্দ্র করে সব বিতর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে যথেষ্ট সফল হয়েছেন – যদিও সম্প্রতি একটি টেলিভিশন বিতর্কে তাঁকে সঞ্চালিকার উপর বিরূপ হয়ে স্টুডিও ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়৷