1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছেপেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ জুলাই ২০২৩

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১৮ দিনে রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছেপে সরকারকে দিয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের টাকা (ফাইল ফটো)
বাংলাদেশের টাকা (ফাইল ফটো)ছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance

 

অন্যদিকে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমেছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট কমছে না।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের( সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড, সেলিম রায়হান বলেন, "সরকার অর্থনীতির কার্যকর পরিকল্পনা না নিয়ে ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ছে। অর্থনীতির মূল সংকট মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজার মনিটরিংসহ আরো যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দরকার  ছিলো তা নেয়া হচ্ছে না। রিজার্ভ আরো কমে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতি যে সংকটের মধ্যে আছে তা থেকে  রাতারাতি বের হয়ে আসার জন্য কোনো জাদুর কাঠি নেই সত্য , কিন্তু এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যা দীর্ঘমেয়াদে সুফল আনে। সেই পদক্ষেপ দেখছি না।”

তার কথা, "সরকার সহজ সমাধান হিসেবে টাকা ছাপানোর দিকে যাচ্ছে। এতে কোনো সুফল আসবে না। উল্টো সেটা মূল্যস্ফীতি আরো উসকে দেবে। সামস্টিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা আরো বাড়বে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনের তথ্য বলছে, সরকারি ব্যয়ের চাহিদা মেটাতে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  ৪৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘটতি এবং প্রত্যাশা মতো বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ায়  বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকার সরবরাহ বাড়াতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১৮ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯১ ও ৩৬৪ দিন-মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ছয় হাজার ৭৪ কোটি টাকা দিয়েছে সরকারকে। এছাড়া, আরো চার হাজার ৭১৫ কোটি টাকা দুই ,পাঁচ ও ১০- বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে টাকা দেয়া মানেই হলো নতুন টাকা ছাপিয়ে দেয়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে তার এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেও টাকা পাচ্ছে। 

২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকখাত থেকে এক লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ধার নেয় সরকার। এরমধ্যে ৭৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিমাসে গড়ে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা করে দেয়া হয়েছে।  গত জুনে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছে ছয় হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। আর জুলাইয়ের প্রথম ১৮ দিনে নিলো প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।

‘সরকার ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, "সরকার এখন টাকা ছেপে অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে চাইছে। কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়া হবে। আরো মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর এটাও বোঝা যায় যে সরকার এখন প্রাইভেট ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে পারছে না। কারণ সেখানে তারল্য সংকট। আবার সরকার এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিলে প্রাইভেট ব্যাংকেও টাকার প্রবাহ কমে যাবে। তাদের তারল্য সাপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংক দিতে পারবে না।”

তার কথা,"সরকার এটা বাধ্য হয়ে করছে। রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণও প্রত্যাশা মতো পাওয়া যায়নি। সরকারকে বড় বড় পেমেন্ট দিতে হচ্ছে বিশেষ করে ঠিকাদারির। কিন্তু ওগুলো তো প্রডাকশন দিচ্ছে না। আয় আসছে না। ”

তার কথা,"এই টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ায় দুই দিকে ক্ষতি। একদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। অন্যদিকে ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষতি হবে। এটা হলো হাইপাওয়ারড মানি।  এটা মানি সার্কুলেশনে পাঁচ গুণ বেশি হয়ে যায়।”

রিজার্ভ আরো কমল:

সর্বশেষ  আইএমএফ-এর হিসেবে রিজার্ভের  প্রকৃত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে  দুই হাজার ৩৪৫ কোটি মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯.৮৫০ বিলিয়ন ডলার। গত রোববার (২৩ জুলাই) এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৯.৯৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২৩.৫৬৯ বিলিয়ন ডলার। ১০ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমল প্রায় ১২ কোটি মার্কিন ডলার। আমদানি ব্যয়সহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর প্রধানত রেমিট্যান্স ও রপ্তানি  থেকে রিজার্ভ হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকে আসে।

ঋণ খেলাপি বাড়ছে:

গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব তৈরি করেছে  তাতে চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। আগের বছর ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে তা ১৬ শতাংশ বা ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেশি। আর সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ শতাংশ বা ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

ব্যংকে আমানত কমছে:

ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের আমানতের প্রবৃদ্ধি এখনো কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের  হিসেবে গত এপ্রিলে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৫৪ শতাংশ, যেখানে গত বছরের এপ্রিলে ছিল ৯.০৯ শতাংশ। এপ্রিলে চলতি আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.০৭ শতাংশ, যেখানে গত বছরের এপ্রিলে ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। আমানত কমার কারণে এখন বেশ কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এর মধ্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকই বেশি। এই তারল্য সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয় তাও রাখতে পারছেনা। এ কারণে তাদের জরিমানা গুণতে হচ্ছে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, "ডলার ও রিজার্ভের ওপর আরো চাপ বাড়বে। কারণ সরকারের তো এখন পেমেন্ট শিডিউল এসে গেছে। সরকারকে পাওয়ার সেক্টরেই তো দিতে হবে এক বিলিয়ন ডলার। টাকা ছেপে তো আর ডলারের চাপ কমানো যাবে না। উল্টো মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আর টাকা বাড়লে তো ডলারের ওপর চাপ আরো  বাড়বে। ব্যবসায়ীরা তো আমদানি করতে চাইবে। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর সামর্থ্য নেই যে তারা সরকারকে টাকা দেবে। তারা তারল্য সংকটে ভুগছে।”

তিনি বলেন,"এর কোনো সহজ সমাধান দেখছি না। সংকট আরো বাড়তে পারে। যারা এই সংকট সৃষ্টি করেছেন তাদেরই এখন সমাধান বের করতে হবে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ