সংঘাত ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ্বের প্রায় ছয় কোটি মানুষ ঘর ছাড়া অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ ২০১৪ সাল পর্যন্ত হিসেব করা এই সংখ্যাটি আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর প্রকাশ করা বার্ষিক ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট' বলছে, ঘর হারা হওয়াদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশিই শিশু৷
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশেরই মানুষ সবচেয়ে বেশি গৃহহীন অবস্থায় আছেন৷ গত বছর পর্যন্ত সিরিয়ার প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছেন৷ এর মধ্যে প্রায় চার মিলিয়ন সিরীয় লেবানন, জর্ডান ও তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন৷
ঘর ছাড়া মানুষের মধ্যে ৩৮.২ মিলিয়ন তাদের নিজেদের দেশেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ বাকিরা নিজের দেশ ছাড়তেই বাধ্য হয়েছেন৷ অর্থাৎ জাতিসংঘের হিসেবে, বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৯.৫ মিলিয়ন৷ এর মধ্যে ৫.১ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি নাগরিক৷ অবশিষ্টরা সিরিয়া, সোমালিয়া ও আফগানিস্তানের৷
নিজ দেশে গৃহহারা হওয়াদের মধ্যে বেশিরভাগই ইউক্রেন, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের নাগরিক৷
জাতিসংঘ বলছে, ২০১৪ সালে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন মানুষ অন্যদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে৷ ২০১৩ সালের চেয়ে যেটা প্রায় দ্বিগুন৷ গতবছর শুধু ২ লক্ষ ৭০ হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিক রাশিয়ায় আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে বলে জানা গেছে৷
তুরস্ক জানিয়েছে, তিন হাজারের মতো শরণার্থী সপ্তাহান্তে সেদেশে প্রবেশ করেছে৷ ‘ইসলামিক স্টেট’ এবং কুর্দি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের মাত্রা বাড়ায় সিরীয়রা তাদের সবকিছু ফেলে রেখে দেশত্যাগ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
বাধ্য হয়ে পলায়ন
গত সপ্তাহে ১৩ হাজারের মতো সিরীয় সেদেশের তেল আবিয়াত শহর ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে৷ আধুনিক ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার নামে সহিংস প্রচারণার জন্য বিদেশে সেনা নিয়োগে শহরটি ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠী৷ তুরস্ক অবশ্য শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়নি৷ ফলে অবৈধভাবে দেশত্যাগ করেছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
জঙ্গি এবং বন্ধ সীমান্তের মাঝে
কুর্দি সেনারা ধীরে ধীরে তেল আবিয়াত শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে শহরটির কাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম দখল করেছে তারা৷ কুর্দিদের ঠেকাতে দুটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট৷’ তবে, কিছু সিরীয় গোলাগুলির মাঝে আটকে পড়ে শহরটিতে রয়ে গেছে৷ আর যারা সেখান থেকে বের হতে পেরেছে, তারা বাধা পেয়েছে সীমান্তে৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
‘ইসলামিক স্টেট’-এর থাবা থেকে রক্ষা
গত সপ্তাহান্তে তিন হাজারের মতো শরণার্থী সিরীয়-তুর্কি সীমান্ত অতিক্রম করেছে৷ ছবিতে কিছু সিরীয়কে দেখা যাচ্ছে, যারা অবৈধভাবে কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করছে৷ তেল আবিয়াত ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নিয়োগ কেন্দ্র হলেও কুর্দি সেনারা সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত মানিয়ে চলার চেষ্টা করেছিল সিরীয়রা৷
ছবি: Reuters/K. Celikcan
‘সীমান্তের মধ্যে থাকুন’
সিরীয়রা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে গরম পানি এবং ‘পিপার স্প্রে’ করে তুর্কি বাহিনী৷ এক পর্যায়ে অবশ্য একটি সীমান্ত অনিচ্ছুকভাবে খুলে দেয়া হয়৷ তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুর্টুলমুস জানিয়েছেন, সিরীয়রা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা এড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ আমরা তাদের সীমান্তের মধ্যে রাখার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইউএনএইচসিআর-এর কাছে নথিভুক্ত ৪০ লাখ সিরীয়
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর মে মাসের শেষের দিকে জানিয়েছে, চল্লিশ লাখের মতো শরণার্থী তাদের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে৷ সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন অবধি সতের লাখের মতো শরণার্থী গ্রহণ করেছে তুরস্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Gurgah
সবচেয়ে ‘বেশি ভুগছে’ শিশুরা
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার আন্থনিও গুটারেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ায় সংঘাতের কারণে সিরীয় ছেলে-মেয়েরা ব্যাপকহারে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তুরস্কে নিবন্ধিত সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
যথেষ্ট নয়
চলতি বছরের শুরুতে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পটি খুলে দিয়েছে৷ সুরুচ ক্যাম্পে ৩৫ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করে৷ আরো ৯০ হাজার শরণার্থীর অবস্থান দেশটির ২৫টি ক্যাম্পে৷ তবে ইউএনএইচসিআর-এর প্রশংসা সত্ত্বেও তুরস্ক রেকর্ড সংখ্যক সিরীয় শরণার্থীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
পেছনে ফেলে আসা
তেল আবিয়াত শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে কোবানিতে এখনও কিছু সিরীয় রয়ে গেছেন৷ ইসলামিক স্টেট-এর গণহারে মানুষ হত্যা এবং কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীর হামলায় শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে খাবার এবং বিদ্যুতের অভাব রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও অল্প কিছু মানুষ শহরটিতে টিকে থাকার লড়াই করছে৷