ভারতে #কিসানলংমার্চ যে বাস্তবিক দীর্ঘ হবে, নিজের ফুলকপি ক্ষেতে কোদাল চালিয়ে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের এক কৃষক৷ এক বন্ধু তুলেছিলেন তার ভিডিও৷ ক্ষোভ, আন্দোলন, সহমর্মিতার মতো ভাইরাল হয়েছে সে ভিডিও৷
ভারতের এক কৃষকছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
বিজ্ঞাপন
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের জালনা জেলার পোহেগাঁও গ্রামের কৃষক প্রেম সিং চৌহান৷ নিজের জমিতে এবার চাষ করেছিলেন কপি আর টমেটোর৷ চাষের কাজে লাগিয়েছিলেন প্রায় ৪০,০০০ রুপি – ফসল বেচে যা পেয়েছেন, তা থেকে পরিবহণ ইত্যাদি খরচ বাদ দিলে, পড়ে থাকে মাত্র ৪,০০০ রুপি৷ তার মধ্যে গোটা ফুলকপি ফসলের জন্য মূল্য ধরে দেওয়া হয়েছে সাকুল্যে ৪৪২ রুপি৷
এরপর যদি চৌহান রাগে, দুঃখে পাগল হয়ে গিয়ে নিজের ছোট কোদালটা নিয়ে কপিক্ষেতের কপিগুলোর মুণ্ডচ্ছেদ করেন, তাহলে এই পাগলামোর পিছনে যে কতটা রোষ আর হতাশা লুকিয়ে রয়েছে, সেটা অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজতত্ত্ববিদ ও রাজনীতিকরা একবার ভেবে দেখতে পারেন৷
এর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগেই প্রায় ৩৫,০০০ কৃষক নাসিক থেকে মুম্বই অবধি লংমার্চ করে ভারতের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক-আর্থসামাজিক অমায়িকতার ভিত নড়িয়ে দিয়েছেন, মুখোশ খুলে দিয়েছেন৷ মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার কৃষকদের দাবি মেনে নিয়ে ঋণ মকুব থেকে শুরু করে জমি হস্তান্তরের প্রতিশ্রতি দিয়েছেন৷ ঘটনাটির রাজনীতিকরণ ঘটতে বেশি সময় লাগেনি৷ বামপন্থিরা বলছেন, অভুক্ত মানুষ যতদিন থাকবে, ততদিন বামপন্থা থাকবে৷ কংগ্রেসের চাঁই চাঁই নেতারা পোস্ট বা টুইট করছেন৷ আর বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের মানুষ এরকম একটা সহমর্মিতা দেখানোর সুযোগ পেয়ে একেবারে মার্কিনি কায়দায় হ্যাশট্যাগ মারা আন্দোলনটাকে বুকে করে নিয়েছেন – সেল্ফ- মেড না হলেও, সেল্ফি-মেড আন্দোলন তো বটে৷
প্রেম সিং চৌহান নিজের ক্ষেতে একা যা করলেন, তা কিন্তু ভারতে কৃষকদের বাস্তবের কথাই আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে৷ চৌহান একটি মারাঠি নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, ‘‘আমি এত রেগে গিয়েছিলাম যে, খামারে কীটনাশক থাকলে, আমি সেদিন বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতাম৷’’
গত দু'বছরে ব্যাংকের ঋণ শোধ না করতে পেরে মহারাষ্ট্রে যেসব কৃষক আত্মহত্যা করেছেন, তাদের স্মরণ করেই শুরু হয় ৬ই মার্চের কিসান লং মার্চ৷ ঋণ মকুব এক কথা, আর ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া আরেক কথা৷ আর সেটাও আবার শুধু একটিমাত্র ইস্যু৷ তাই ভাবছিলাম, ভারতের কিসানদের লং মার্চ বাস্তবিক দীর্ঘ হবে৷
এসি/এসিবি
ফ্রান্সের এক অন্যরকম কৃষকের কথা
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃষি অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই সেখানকার কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেছেন৷ কিন্তু ব্যতিক্রম এই জ্যঁ-ব্যার্না উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বলদ দিয়ে হালচাষ
গরু কিংবা ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য গ্রামবাংলায় এখনো দেখা গেলেও ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃষি অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সে সেটি বিরল এক দৃশ্য৷ তাই তো জ্যঁ-ব্যার্না উয়োঁ যখন নিজের বলদ নিয়ে জমিতে নেমে পড়েন, তখন তা একটু অস্বাভাবিকই ঠেকে সেখানে৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
শুরু থেকেই এমন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়৷ কিন্তু বর্তমানে ৭০ বছর বয়সি উয়োঁ শুরু থেকেই এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন৷ তাই ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের পাশাপাশি আটটি গরুর দুধ দোয়ান হাত দিয়ে, আটাও তৈরি করেন হাতে৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
‘আমি সুখী’
নিজের জীবনযাপন নিয়ে খুশি উয়োঁ৷ তাই তো তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন পুরোপুরি সুখী মানুষ৷ আমি কখনোই ধনী ছিলাম না, কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ আজকালকার কৃষকদের অনেক জমি আর পশু আছে৷ কিন্তু তাই বলে যে তাঁরা সবাই সুখী, তা নয়৷ তাদের অনেক সমস্যা আছে৷’’ উয়োঁর বাড়ির ছবিটি দেখে কেমন সুখী, সুখী লাগছে কি?
ছবি: Reuters/S. Mahe
নিজ বাড়িতে বিক্রি
উয়োঁর সব পণ্য প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত৷ তবে পণ্য বিক্রির জন্য তিনি এগুলোর গায়ে অর্গানিক লেভেল লাগাতে রাজি নন৷ কোনো সুপারমার্কেটেও তিনি তাঁর উৎপাদিত পণ্য দেন না৷ শুধু কেউ যদি তাঁর বাড়িতে যায়, তাহলে তাঁদের কাছে শূকর কিংবা বাছুরের মাংস, মাখন ইত্যাদি বিক্রি করেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
উয়োঁর সঙ্গী
ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলের রিয়েক-স্যুর-বেলোঁ এলাকায় উয়োঁর সঙ্গে তাঁর বাড়িতে থাকেন লরেন্স৷ দু’জনে মিলেই খামার সামলান৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
বয়সের কারণে
এতদিন যন্ত্রের সহায়তা না নিলেও বয়সের কারণে একসময় শারীরিক অক্ষমতাকে তো মেনে নিতেই হয়৷ উয়োঁর ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে৷ তাই সম্প্রতি দু’টি ট্রাক্টর কিনেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
অন্যের সমালোচনা নয়
যে কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি আর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছেন, তাঁদের সমালোচনা করতে রাজি নন উয়োঁ৷ কারণ, প্রয়োজনের তাগিদেই তাঁরা এসব করছেন বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘ভাবতে পারেন, একটু গ্লাইফোসেট দিলেই আপনাকে আর আগাছা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না!,’’ বলেন উয়োঁ৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
উত্তরসূরি
উয়োঁ না হয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই কৃষিকাজ করে জীবন কাটিয়ে দিলেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর খামার চলবে কীভাবে? তিনি জানালেন, খামারটি বিক্রি না করে কাউকে দান করে দেবেন৷ তবে উত্তরসূরীর পক্ষে তাঁর মতো করে চলা সহজ হবে না বলে মনে করেন উয়োঁ৷