1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

‘রেড মিট খাওয়ার আগে অবশ্যই স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করতে হবে’

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
১৪ জুন ২০২৪

ঈদুল আজহায় রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায় বাংলাদেশে৷ এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. খুরশিদ জাহান৷

গ্রিল করা মাংসের কাবাব হাতে এক ব্যক্তি
যাদের সমস্যা নেই, তারা দিনে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস খেতে পারবেনছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed

ডয়চে ভেলে: কোরবানির ঈদে বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর মাংস খেয়ে থাকে৷ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

. খুরশিদ জাহান: কোরবানির ঈদ হলো মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ এই সময়ে বিভিন্ন পশু যেমন, গরু, ছাগল, মহিষ, উট, দুম্বা জবাই করার মাধ্যমে উৎসবটা পালন করা হয়৷ এগুলো কিন্তু রেড মিটের উৎস৷ আমি বলবো, গরুর মাংস বা রেড মিট খাওয়ার আগে অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করে নিতে হবে৷ বছরে একটা দিন আমরা কোরবানির মাংস খাবো, এটা অনেকে আশা করে থাকে৷ কোরবানির মাংসকে অনেকে পবিত্রও মনে করে৷ এই গরুর মাংসের অনেক উপকারিতা আছে, কিন্তু বেশি খাওয়ার ঝুঁকিও রয়ে গেছে৷ মাংসের ক্ষতিকারক দিক মূলত চর্বি৷ খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে রক্তে এবং এটা ক্ষতিকারক কোলস্টেরল বাড়িয়ে দেয়৷ যার কারণে হৃদরোগ, উচ্চ রক্ত চাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ আরো অনেক সমস্যা শরীরে হতে পারে৷ 

মানবদেহের জন্য লাল মাংসের প্রয়োজনীয়তার দিকটি নিয়ে কী বলবেন?

পুষ্টির দিক থেকে রেড মিট কিন্তু অনেক গুণে গুণান্বিত৷ এটা হাই কোয়ালিটির প্রোটিনের উৎস৷ এরমধ্যে অনেক ভিটামিন, মিনারেল রয়ে গেছে৷ আয়রন আছে, যেটা রক্তশূণ্যতা দূর করে৷ রেড মিট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় ও দাঁতের গঠনে ভূমিকা রাখে, চুল-নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে৷ তারপর বাচ্চা বয়স থেকে শুরু করে সবারই শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে৷ আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, অতিরিক্ত অসারতা দূর করতে সহায়তা করে৷ এসব স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় ভালো উৎস হলো রেড মিট৷

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, কোলেস্টরেল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ আছে- তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

তারা রেড মিট খেতে পারবে কি না, কতটুকু খেতে পারবেন- এর জন্য অবশ্যই তাদের বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে৷ কোরবানির ঈদে সবাই মাংসটা খেতে চায়৷ যাদের কোনো সমস্যা নেই, তারা দিনে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত খেতে পারবে, যেটা সপ্তায় সবমিলিয়ে ৩০০-৫০০ গ্রাম হতে পারে৷ কিন্তু যারা অসুস্থ: বিশেষ করে হৃদপিণ্ডে সমস্যা আছে, যাদের কিডনির সমস্যা আছে, যাদের ওজন অনেক বেশি, আর্থ্রাইটিস আছে- তাদের বুঝেশুনে খেতে হবে, পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে৷ তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোরবানির ঈদের সময় পাওয়া পশুর পাঁজর বা সিনার মাংসে চর্বি কম থাকে, সেখান থেকে কিছুটা হয়তো খাওয়া যাবে৷ কিন্তু বেশি খাওয়া যাবে না, সীমিত আকারে- সেটা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী৷

সুস্থ মানুষ দিনে ৭০ গ্রাম মাংস খেতে পারে: ড. খুরশিদ জাহান

This browser does not support the audio element.

গরু খাসির মাংস যাদের বারণ, তারা সাধারণত মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন৷ এই বিকল্প ঠিক কি না?

হাই কোলেস্টরেলের কারণে যাদের গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ, তারা ঝুঁকি কমাতে মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন৷ মুরগির মাংসেও কিন্তু গরুর মাংসের মতোই হাই কোয়ালিটির প্রোটিন থাকে৷ যাদের সমস্যা তাদের প্রোটিন কম খাওয়া উচিত, কিডনি রোগীদের এমনিতেই কম খাওয়া উচিত৷ ফুড ডাইভারসিফিকেশন বলে কিন্তু একটা কথা আছে৷ আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই, তারমধ্যে অনেক ধরনের খাবার যুক্ত করা উচিত৷ এই খাবারের সঙ্গে আমরা যদি শাকসবজি, ফলমূল, দানাদার খাবার যুক্ত করি- তাহলে আমাদের মাংসের পরিমাণটা কম হয়ে যায়৷ সব খাবার মিলিয়ে খেলে সমস্যা কমে যায়৷

আমিষের চাহিদা পূরণে মাছ, মাংস ছাড়া আর কোন কোন খাবার গ্রহণ করা যায়?

দুরকম উৎস থেকে আমরা আমিষ পেতে পারি৷ একটা হলো প্রাণিজ উৎস যেমন, মাছ-মাংস৷ আরেকটা হলো ভেজিটেবল৷ দেশে আমরা যত জরিপ করেছি, সেখানে আমরা বেশিরভাগই পেয়েছি সিরিয়াল প্রোটিন৷ বিভিন্ন ধরনের ডাল হলো আমিষের ভালো উৎস৷ ডাল ও চাল মিলিয়ে যদি আমরা খাবার খাই, তাহলে কিন্তু হাই কোয়ালিটির প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়৷ ডালে যে অ্যামিনো এসিড কম থাকে, সেটা চালে থাকে৷ আবার চালে যে অ্যামিনো এসিড কম থাকে, সেটা ডালে থাকে৷ এখন যদি মিলিত খাবারটা খাই, তাহলে এটা পরিপূর্ণ হাই ক্লাস অ্যামিনো এসিড যুক্ত খাবার হয়৷

ছোটবেলা থেকেই শাকসবজি খাওয়ার প্রতি কিছু অনীহা দেখা যায়৷ এর কারণ কী? সমাধান কীভাবে হতে পারে?

বাচ্চাদের যখন সাপ্লিমেন্ট ফুড দেওয়া হয়, তখন থেকে যদি আমরা এমন খাবারে অভ্যস্ত করি, যেটা তাদের উপযোগী এবং তাদের টেস্ট অনুযায়ী, যা ভেজিটেবলস ও অ্যানিমেল সোর্সের মিলিত খাবার- এভাবে দিলে বাচ্চারা এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠবে৷ কিন্তু অনেক মাকেই দেখি, তারা এতো ঝামেলার মধ্যে যায় না৷ তারা বাচ্চাদের সিরিয়াল জাতীয় খাবার দেয়, যেটাতে হয়তো অনেক ভিটামিন মিক্সড থাকে৷ একটু বড় হতে হতেই দেখি, তাদের বাইরে থেকে প্রসেস ফুড কিনে এনে দেয়৷ তারা আর কখনোই শাকসবজি খেতে চায় না৷ তারা প্রসেস ফুডেই ঝুঁকে যায়৷ আমাদের বড় ছাত্রদের মধ্যে দেখেছি একই অবস্থা৷ খাবারের তো একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে হয় ছোটবেলা থেকে, সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় না৷

কোরবানির ঈদের সময় খাবার গ্রহণ নিয়ে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

ধর্মীয় উৎসব তো আমরা পালন করবোই৷ যেভাবেই খাই, কিছু হলেও মাংস খাবো৷ তবে এই সময়ে মাংস খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত৷ প্রয়োজন বুঝে খেতে হবে৷ বেশি মাংস থাকলে, বেশি রান্না হলে অতিরিক্ত খাওয়া হয়৷ আমি বলবো, মাংস রান্না করার আগে চর্বিযুক্ত অংশগুলো ফেলে দেওয়া উচিত৷ মাংস রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল বা ঘি ব্যবহার না করাই ভালো৷ কোরবানির সময় মাংসটাই মেইন মিল হিসেবে না খেয়ে সঙ্গে যদি শাকসবজি, দানাদার খাবার, বিভিন্ন ধরনের সালাদ খাই, তাহলে কিন্তু মাংসের পরিমাণ কম হয়ে যায়৷ এছাড়া আঁশযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া উচিত৷ কারণ এই সময় দেখা যায় অতিভোজনে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসট্রিক সমস্যা, ডায়রিয়া অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে৷ যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷ ঈদের আগে তাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে৷ যেহেতু রেড মিট হৃদরোগ, স্ট্রোক, আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়- সেজন্য আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷

তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ