ব্রাজিলের রেন ফরেস্ট গোটা বিশ্বের জলবায়ুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ অ্যাটলান্টিক উপকূলের একটি অংশে জীবজগতের সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রবল উৎসাহে কাজ করছে এক এনজিও৷ স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকদেরও সেই কাজে শামিল করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
আনা পাউলা ও ফ্লাবিয়া বালদেরি নামের দুই বোন নিজেদের কিশোর বয়সের স্বপ্ন পূরণ করেছেন৷ তাদের কোপাইবা পরিবেশ সংগঠন অ্যাটলান্টিক উপকূলের রেন ফরেস্টের উদ্ভিদ জগত বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে৷
সেখানে প্রায় ১৩০টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে৷ এর মধ্যে কয়েকটির অস্তিত্ব লোপ পেতে বসেছে৷ কারণ অনেক বছর ধরে গাছ কাটার ফলে ‘মাতা আৎলান্তিকা' অরণ্যের একটা বড় অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷ সেই জঙ্গলের বিনাশ দেখে হয়রান হয়ে দুই বোন কিশোর বয়সেই এক পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠন গড়ে তোলেন৷ আনা পাউলা মনে করিয়ে দেন, ‘‘অ্যাটলান্টিক রেন ফরেস্ট গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ আবাসভূমিগুলির মধ্যে একটি৷ নানা প্রজাতি এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে৷ একই সঙ্গে অন্যতম বড় হুমকির মুখেও পড়েছে৷ সুরক্ষা, পুনর্গঠন ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই জঙ্গল অক্ষত রাখা আমাদের কাজের লক্ষ্য৷''
অনেক উৎসাহ ও কম অর্থ নিয়ে যে কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল, আজ তা বড় আকার ধারণ করেছে৷ দুই জীববিজ্ঞানী ইতোমধ্যে নিজেদের নার্সারি থেকে গোটা অঞ্চলে গাছপালা সরবরাহ করছেন৷ সেই অর্থ এনজিও-র আয়ের অন্যতম উৎস৷ প্রতি বছর প্রায় চার লাখ চারাগাছ প্রস্তুত করা হয়৷
আনা পাউলা একটি বৃক্ষরোপণ উদ্যোগে যোগ দিতে চলেছেন৷ ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বে ‘সেরা জা মান্তিকেইরা' পাহাড়ে কফির প্লান্টেশন ও চারণক্ষেত্র আরও সমৃদ্ধ করে তোলা হচ্ছে৷
মূল অরণ্যের সামান্য কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে৷ অথচ পানির অসংখ্য উৎসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সেই অরণ্যের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে৷ তবে পুনর্বনায়নের সাফল্য জমির মালিকদের মনোভাবের উপর নির্ভর করে৷ আনা পাউলা বলেন, ‘‘এস্টেটের পানির উৎসগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে৷ যেমন কয়েকজন মালিকের আর কোনো পানি নেই৷ পুনর্বনায়নের মাধ্যমে আমরা জমিতে গাছপালা ফিরিয়ে এনে জমির সংস্কার করতে চাই, যাতে সেখানে আবার পানি ফিরে আসে৷''
ক্ষুদ্র কৃষকরা কিছুকাল আগেই সেই জমি কিনেছেন৷ প্রায় ৩০ বছর আগে আলু চাষের লক্ষ্যে জমি সাফ করা হয়েছিল৷ পরে গবাদি পশুর চারণভূমি হিসেবে সেটি ব্যবহার করা হয়েছে৷
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি বনাঞ্চল
হবিগঞ্জে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ সুন্দরবনের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনভূমিও এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুরুর কথা
প্রায় ১,৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমি বিস্তার লাভ করতে শুরু করে ১৯৪০ সালের দিকে৷ তবে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮২ সালে৷ পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বনটি সম্প্রসারণ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাহাড়-টিলার সমন্বয়
সিলেট বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের চারটি বিটের (কালেঙ্গা, রেমা, ছনবাড়ী আর রশিদপুর) মধ্যে রেমা, কালেঙ্গা আর ছনবাড়ীর বিস্তীর্ণ জঙ্গল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত৷ বেশ কয়েকটি পাহাড়-টিলার সমন্বয়ে গঠিত এ বনাঞ্চল৷ এখানকার পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৭ মিটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি
দেখছেন মালায়ন বড় কাঠবিড়ালিকে৷ রামকোটা বা বড় কাঠবিড়ালি নামেও এটি পরিচিত৷ পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালির মধ্যে বিরল প্রজাতির এই কাঠবিড়ালির একমাত্র বসবাস এই বনেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুখপোড়া হনুমান
এদের নাম ক্যাপড লিফ মাঙ্কি বা মুখপোড়া হনুমান৷ এছাড়াও ‘ফেরে’স লিফ মাঙ্কি’ বা চশমা হনুমান আর বিরল উল্লুকও আছে এই অভয়ারণ্যে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে কুলু বানর
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘নর্দান পিগ টেইলড ম্যাকেক’ বা কুলু বানরও দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়াও আছে বিরল প্রজাতির স্লো লরিজ বা লজ্জাবতী বানর৷
ছবি: DW/M. Mamun
পর্যবেক্ষণ টাওয়ার
অভয়ারণ্যের ভেতরে একটি টিলার উপরে আছে ছয়তলা পর্যবেক্ষণ বুরুজ৷ এই টাওয়ারের উপরে উঠলে বনের বিস্তীর্ণ সীমানা খালি চোখে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
জলাশয়
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের ভেতরে আছে বেশ কিছু জলাশয়৷ শুকনো মৌসুমে বনের ভেতরের পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে গেলেও এসব জলাশয়ের জল বন্যপ্রাণীদের তেষ্টা মেটায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
গাছপালা সমৃদ্ধ
নানান গাছপালায় সমৃদ্ধ রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য৷ ৬৩৮ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছপালা আর লতাগুল্ম পাওয়া যায় সেখানে৷
ছবি: DW/M. Mamun
তিনটি ট্রেইল
রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের একটি ট্রেইলে বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী৷ এরকম তিনটি ট্রেইল ঘুরে প্রাণ-প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতিপ্রেমীরা৷ আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টার তিনটি ট্রেইলই ছবির মতো সুন্দর আর সাজানো৷
ছবি: DW/M. Mamun
দামি প্রাণি
নাম ‘সাউথ এশিয়ান জায়ান্ট হাউস গেকো’ বা তক্ষক৷ গিরগিটি প্রজাতির ছোট্ট এই প্রাণীটি দেশি চিকিৎসায় বহুল ব্যবহার হয় বলে পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে এই গিরগিটিটি খুব চড়ামূল্যে বিক্রি ও পাচার হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস
কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মানুষের বাস আছে রেমা-কালেঙ্গা বনে৷ ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি হলেও সাঁওতাল ও উড়ং জণগোষ্ঠীর লোকজনও আছেন সেখানে৷
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘গ্রেটার র্যাকেট টেইলড দ্রোঙ্গো’ বা বড় ভিমরাজ৷ এই অভয়ারণ্যে আছে প্রায় ১৬৫ প্রজাতির নানান পাখি৷
ছবি: DW/M. Mamun
কেমন দেখতে?
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ‘ব্ল্যাক ক্রেস্টেড বুলবুল’ বা কালো ঝুটি বুলবুলি পাখি৷ এই অভয়ারণ্যের আরো উল্লেখযোগ্য পাখি হলো ভিমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙ্গা, ঈগল, চিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
থাকার ব্যবস্থা
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের পাশেই আছে নিসর্গ তরফ হিল রিসোর্ট৷ সেখানে পর্যটকদের জন্য কম খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়া বনের ভেতরে বন বিশ্রামাগারও আছে৷ তবে সেখানে অবস্থান করতে হলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি
রেমা-কালেঙ্গা বনের ভেতরে আছে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের সমাধি৷ ৩ নং সেক্টরের এই যোদ্ধা ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে এখানেই শহিদ হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন
শহিদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীর উত্তমের সমাধির পাশেই বিশাল সেগুন গাছটির শরীরজুড়ে এখনো দেখা মেলে হানাদারদের সেদিনের গুলির চিহ্ন৷
ছবি: DW/M. Mamun
17 ছবি1 | 17
এস্টেটের প্রায় অর্ধেক অংশে অরণ্য রয়েছে৷ এখন অরণ্যের সীমা চাষের জমির প্রান্ত পর্যন্ত আনার উদ্যোগ চলছে৷ এক দম্পতি সেখানে অরগ্যানিক চাষ করছে৷ কয়েকদিন আগে আনা পাউলা নিজের এনজিও-র মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার হাজার চারাগাছ পুঁতেছেন৷ এবার কয়েকটি ফলের গাছও সরবরাহ করেছেন৷
মাঠের মাঝে চারাগাছ প্রায় চেনাই যাচ্ছে না৷ অথচ মাত্র দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সেখানে ছোটখাটো একটি জঙ্গল সৃষ্টি হবার কথা৷ চাষি আন্দ্রে জি রেজেন্ডে মনে করেন, ‘‘গাছগাছালির একটা স্তর থাকলে মাটির সুরক্ষা হয়, ভূমিক্ষয় হয় না৷ বৃষ্টি হলে পানির একটা বড় অংশ মাটিতে প্রবেশ করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভরিয়ে দেয়৷ তখন আমরা পানির উৎস নতুন করে চালু করতে পারি৷''
গাছগুলি বড় হওয়া পর্যন্ত আনা পাউলা দুই বছর ধরে চাষিদের সাহায্য করবেন৷ চাঁদা এবং বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এনজিও অর্থ পায়৷ চাষিদের অবশ্য কোনো অর্থ দিতে হয় না৷ আনা পাউলা বলেন, ‘‘এখন আমরা চারাগাছের চারিপাশের জমি ঘাস দিয়ে ভরে দিচ্ছি৷ এভাবে আর্দ্রতা ধরে রেখে গাছ আরও ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারবে৷''
আনা পাউলা ইতোমধ্যে দুইশ-রও বেশি জমির মালিককে পুনর্গঠনের কাজে অংশ নিতে রাজি করিয়েছেন৷ প্রায়ই তাঁদের যথেষ্ট বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে৷ সে কারণে এই এনজিও বড় আকারের এক পুনর্বনায়ন প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক জলবায়ু সুরক্ষা উদ্যোগ সেই কাজে মদত দিচ্ছে৷