রেমালের ফলে বাংলাদেশের উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেড় লাখ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু বাঁধ ভেঙেছে।
বিজ্ঞাপন
অনেক গ্রাম জলের তলায় চলে গেছে। অনেক জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সমুদ্রের নোনাজল ঢুকে পড়েছে চাষের ক্ষেতে।
সোমবার বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ''রেমালের ফলে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ জন মারা গেছেন। বরিশাল ও ভোলায় তিনজন করে,খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় একজন করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।''
বহু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। তাই বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ নেই। ধীরে ধীরে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পৌনে তিন কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।
বাংলাদেশে রেমালে নিহত অন্তত ১০
বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় রেমালে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন৷ ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কয়েক হাজার৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
আঘাত
ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে৷ এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়৷ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার৷
ছবি: K M ASAD(Middle East Images/AFP/Getty Images
প্রাণহানি
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অন্তত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা এএফপিকে জানিয়েছেন৷ এর মধ্যে বরিশালে সাতজন মারা গেছেন বলে সেখানকার কর্মকর্তা শওকত আলী জানিয়েছেন৷ বেশিরভাগই ভাঙা বাড়ি ও দেওয়ালের নিচে চাপা পরে মারা যান৷ খুলনায় দুজন মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা হেলাল মাহমুদ৷ আর চট্টগ্রামে একজন মারা গেছেন বলে জানান সরকারি কর্মকর্তা তোফায়েল ইসলাম৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
ক্ষতিগ্রস্ত
ঘূর্ণিঝড়ের পর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার আড়ংঘাটা ইউনিয়নের সরদার ডাঙ্গা গ্রামের ছবি৷ ঝড়়ের প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি পড়ে গেছে, গাছ উপড়ে গেছে৷ প্রায় ৩০ হাজার বাড়ি ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা৷ এছাড়া আরও প্রায় কয়েক হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: Md Nahid Anjuman
আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছেন
প্রায় আট লাখ মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন৷ সাতক্ষীরার ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার নারী-পুরুষ-শিশু আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ তবে এর মধ্যে অধিকাংশ চলে গেছেন৷
ছবি: Md Nahid Anjuman
প্রাণহানি কমেছে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে৷ আগে বছরে একবার ঘূর্ণিঝড় হলেও এখন অনেকসময় বছরে তিনটি বড় ঝড়ও আঘাত হানছে৷ তবে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতি এবং পূর্বাভাস পেয়ে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া বিষয়টির উন্নতি হওয়ায় প্রাণহানি নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে৷
ছবি: Abdul Goni/AP/picture alliance
কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি জানিয়েছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা উপকূলীয় এলাকায় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ৷ পিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান বাংলাদেশে ডিডাব্লিউর কন্টেন্ট পার্টনার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় সারা দেশে অনেক বৈদ্যুতিক পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-মূলত খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে৷’’
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
6 ছবি1 | 6
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেছেন, ''ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।''
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা
সোমবার দুপুরের পর থেকে কলকাতায় বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। জমে থাকা জল অনেকটাই নেমে গেছে। মঙ্গলবার সকালে সামান্য রোদ উঠেছে।
তবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
রেমালের ফলে পশ্চিমবঙ্গে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একজন মারা গেছেন হুকিং করা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। পানিহাটিতে হুকিং করা তার ঝড়ে ছিঁড়ে যায়। তাতে গোপাল বর্মনের মৃত্যু হয়েছে।
ভাসছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল, ডুবছে কলকাতার রাস্তা
রেমালের ফলে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে অনেক জায়গা ভাসলো। ডুবলো বাড়ি। কলকাতার রাস্তায় জল। প্রচুর গাছ পড়লো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বকখালির অবস্থা
রেমালের প্রভাবে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয় বকখালিতে। জলে ভরে যায় চারপাশ। বেশ কিছু মাটির বাড়ি পড়ে গেছে। ঝড়ের দাপটে কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সমুদ্র অশান্ত
বকখালির সমুদ্র এমনিতে শান্ত। কিন্তু রেমালের ফলে তা অশান্ত হয়ে ওঠে। জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। সেই জলে ভেসে যায় তটভূমি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দীঘার সমুদ্রে ঢেউ
দীঘার সমুদ্রও অশান্ত হয়ে ওঠে। বড় বড় ঢেউ ওঠে। তা তীরের বোল্ডারে এসে আঘাত করে। কর্তৃপক্ষ সেসময় কাউকে সমুদ্রের কাছে থাকতে দেয়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তটভূমির অবস্থা
রেমালের ফলে পশ্চিমবঙ্গের তটভূমির অনেকটা জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কয়েকটি বাঁধ ভাঙার খবর এসেছে। কিছু জায়গায় নোনোজল ঢুকে পড়েছে ক্ষেতে। মথুরাপুর, কুলতলি, গোসাবা, সাগরপদ্বীপের কাছাকাছি এলাকার অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দূরের এলাকার খবর আসেনি
দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, দূরের এলাকাগুলি থেকে তারা খবর সংগ্রহ করছেন। ফলে সেখানে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা য়ায়নি। তবে রেমালের ফলে একশ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়েছে। প্রচুর জায়গা জলমগ্ন হয়ে গেছে। ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্বাবনা প্রবল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জলে ভরা কলকাতা
কলকাতার রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। মাঝে সামান্য বিরতি ছিল। রোববার রাতে তো প্রবল বৃষ্টি হয়। তার ফলে বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে। সোমবার সকালে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে জলমগ্ন রাস্তায় একটি বিক্সা যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মেডিকেল কলেজের ভিতরে জল
কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভিতরে জল জমে যায়। বেশ কিছু ওয়ার্ডে জল ঢুকে যায়। ফলে রোগী ও তার আত্মীয়রা বিপাকে পড়েন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গাড়ির উপর চিমনি
বরানগরে একটি পরিত্যক্ত কারখানার চিমনি নিচে পড়ে যায়। সেখানে প্রচুর গাড়ি পার্ক করে রাখা ছিল। বেশ কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গাছ পড়ে
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভা এলাকায় ৫২টি গাছ পড়েছে। এছাড়া বিধাননগর, দমদম পুরসভার এলাকাতেও প্রচুর গাছ পড়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রচুর জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। ফলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে
প্রতিবার বর্ষার সময় জমা জলে বিদ্যুতের খোলা তার জলে গিয়ে পড়ে ও মানুষের মৃত্যু হয়। রেমালের পরেও তার অন্যথা হয়নি। বিদ্যুৎবাহী তার গাছে ও জমা জলে পড়ার ফলে অন্তত তিনজন মারা গেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মানুষের দুর্গতি
এই ঝড়-বৃষ্টির জন্য প্রচুর মানুষ দুর্গতির মধ্যে পড়েন। রাস্তায় নেমে অনেকের ছাতা উড়ে গেছে। অনেকে জমা জলে চলতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকের বাড়িতে জল ঢুকে গেছে। তবে সোমবার বিকাল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। জল কমতে শুরু করেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
11 ছবি1 | 11
ঝড়ে তার ছিঁড়ে জলে পড়ে যাওয়ার ফলে নুঙ্গিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন তাপসী দাস নামে এক নারী।
মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে প্রচার শুরু হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় রোড শো করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদযাত্রা করতে পারেন।