1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেমিটেন্স প্রবাহ কমার নেপথ্যে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ জুন ২০১৭

বাংলাদেশে বৈধভাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমে গেছে৷ গত ১০ মাসে রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা,এর প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা কম পাঠানো ও প্রবাসী কর্মীদের আয় কমে যাওয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷

ছবি: Getty Images

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানান, ‘‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ হাজার ৭৩৫ টাকা কম৷ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা৷''

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা ২০১৫ সালের তুলনায় ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কম৷

এর আগে ২০১৩ সালেও প্রবাসীরা তার আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন৷ গত কয়েক বছর ধরে বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ধসের ধারা স্পষ্ট৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহ কমে যাওয়া৷ প্রবাসী কর্মীরা ‘বিকাশ', হুন্ডিসহ নানা উপায়ে দেশে টাকা পাঠাতে আগের চেয়ে বেশি উৎসাহ বোধ করছেন৷ কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কম৷

Hasan Ahmed Chowdhury Kiron - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

জনশক্তি রপ্তানি বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রবাসী শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়াও রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ৷ সৌদি আরবে কাজ করতে নতুন যাওয়া শ্রমিকরা এখন সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৮শ' রিয়াল আয় করতে পারেন, যা আগের তুলনায় অনেক কম৷ আবার নতুন নিয়মে অফিসিয়ালি যে বেতনে কাজ করতে যান, তার চেয়ে বেশি টাকা পাঠাতে পারেন না কর্মীরা৷ ফলে নির্ধারিত কাজের বাইরে ‘অড জব' করে তাঁরা যে টাকা আয় করেন তা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারেন না৷''

তিনি বলেন, ‘‘ফর্মাল বা ব্যাংকিং সেক্টরে ডলারের রেট কম হওয়া ছাড়াও টাকাটা বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের হাতে পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই৷ সে সুযোগ বিকাশ বা অন্য কোনো ইনফর্মাল সিস্টেমে পাওয়া যায়৷ আবার ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকথাকলেও সেখান থেকে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই৷''

কিরণ জানান, ‘‘কাতারসহ আরো কয়েকটি দেশে গিয়ে শ্রমিকরা প্রতিশ্রুত বেতন পাচ্ছেন না৷ যাঁরা পাচ্ছেন তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশে মূদ্রামানে ১০-১৫ হাজার টাকার বেশি বেতন পান না মাসে৷ ওইসব দেশে প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা বাংলাদেশি শ্রমিকদের ঠকায়৷''

DR Naznin Ahmed - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি গত এক বছরে টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারে ব্যাংকিং এবং ইনফরমাল সেক্টরে ব্যাপক পার্থক্য ছিল৷ প্রতি ডলারে ইনফর্মাল সেক্টরে ৭-৮ টাকা বেশি পাওয়া গেছে৷ এই ব্যাপক তফাতের কারণে আন- অফিসিয়াল চ্যানেলে অনেক রেমিটেন্স বাংলাদেশে এসেছে বলে বলা হয়ে থাকে৷ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা কমেছে৷ এটা উদ্বেগজনক৷ কারণ, অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় ফরমাল চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়া দরকার৷ এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যক্তির কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করায় যেহেতু নানা বিধিনিষেধ আছে, তাই শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অনেক বিনিয়োগকারী বিদেশেই তহবিল সংগ্রহ করছে৷ তাঁরা সেখানেই প্রবাসীদের আয় নিয়ে নিচ্ছেন৷ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পরিশোধ করছেন৷''

ড. নাজনীন বলেন, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে ইনফরমাল ইকোনমি বড় হয়ে যাবে৷ ফলে অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ ঠিকঠাক থাকবে না৷ তা অর্থনীতির জন্য শেষ বিচারে ক্ষতির কারণই হবে৷''

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন বলেন, ‘‘ব্যাংকিং চ্যানেলে যাতে প্রবাসীরা টাকা-পঠান, সেজন্য সরকারকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে৷ ডলারের বিনিময়হার গ্রহণযোগ্য করতে হবে৷ আর বিদেশে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর দিকে মনযোগী হতে হবে৷ সংখ্যার চেয়ে দক্ষ শ্রমিকের ওপর জোর দিতে হবে৷''

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ১ কোটি প্রবাসী বছরে পাঠান ১৫ বিলিয়ন ডলার৷ আর ফিলিপাইন্সের ৩৫ লাখ প্রবাসী বছরে পাঠান ২৫ বিলিয়ন ডলার৷ এখানেই দক্ষ শ্রমিকের গুরুত্ব স্পষ্ট৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ