ভারতের সমস্ত রেল-কামরায় ‘বায়ো টয়লেট’ বা জৈব শৌচালয় বসানো হয়ে যাবে ২০১৯ সালের মধ্যে৷ কিন্তু বিমানসংস্থাগুলি এখনও এ ব্যাপারে উদ্যোগী নয় কেন?
বিজ্ঞাপন
বিমান উড়ে যায় আকাশপথে৷ বিমানে শৌচালয় থাকে৷ যাত্রীরা প্রয়োজনমত সেই শৌচালয় ব্যবহার করেন৷ কিন্তু তার দরুণ যে বর্জ্য তৈরি হয়, সেটা শেষপর্যন্ত কোথায় যায়? সম্প্রতি তার আন্দাজ পাওয়া গেল৷ দিল্লি বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা সৎবন্ত সিং দাহিয়া গত অক্টোবরে ভারতের পরিবেশ আদালতে অভিযোগ জানান যে, প্রতিদিন উড়ন্ত বিমান থেকে তাদের এলাকায় মানব-বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয়, যা ঘরেদোরে, এমনকি লোকের গায়েও এসে পড়ে৷ গত বছর ডিসেম্বরেই দিল্লির আরেক বাসিন্দা, ৬০ বছরের এক মহিলা জখম হয়েছিলেন অত উঁচু থেকে গায়ে এসে পড়া বর্জ্যের আঘাতে৷ সৎবন্ত সিং দাহিয়ার অভিযোগের পরই বিষয়টি জাতীয় নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নজরে আনা হয় এবং পরিবেশ আদালত শেষ পর্যন্ত উড়ান সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেয়, বিমানে সঞ্চিত মানব-বর্জ্য ঠিকভাবে যাতে জমা করা হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে৷ কারণ কোনো জনপদ এই বর্জ্যের কারণে সমস্যায় পড়বে, এটা হতে পারে না৷
বিমান শিল্পের ভবিষ্যত আকাশে
বিমান নির্মাতা ফার্নবোরো এয়ারশো-তে এখন খদ্দেরদের সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তি করতে ব্যস্ত৷ তা সত্ত্বেও সেখানে দেখার আছে অনেককিছু৷
ছবি: Reuters/K. Doherty
বড় বিমান কম বানানোর ঘোষণা
ফার্নবোরো এয়ার শো-তে অবতরণ করছে একটি বিশালাকৃতির এয়ারবাস এ ৩৮০ বিমান৷ ইউরোপের বিমান নির্মাতাটি জানিয়েছে, দ্বিতলবিশিষ্ট বিমানটির উৎপাদন অর্ধেকের মতো কমিয়ে বছরে বারোটি করে করা হবে৷ তবে এয়ারবাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টম এন্ডার্স আশাবাদী যে, ভবিষ্যতে তাঁর ‘টাকা তৈরির এই মেশিনের’ চাহিদা আবারো বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. MCkay
প্রাইভেট জেটের প্রদর্শনী
নিজস্ব বিমান কিনবেন? যাদের পকেটে খরচ করার বাড়তি পয়সা আছে, তারা ফার্নবোরো থেকে নিজের একটা বিমানও চাইলে কিনে নিতে পারেন৷
ছবি: Imago/TASS/M. Lystseva
আকাশে মহড়া
দ্য রয়েল এয়ার ফোর্সের এরোবেটিক টিম, দ্য রেড অ্যারোজ, একটি লকহিড মার্টিন এফ-৩৫বি বিমানকে ‘এস্কর্ট’ করে নিয়ে যাচ্ছে৷ তবে আকাশে বিমানটির মহড়া চমক সৃষ্টি করলেও মাটিতে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা৷ এটি কেনার খদ্দের এখনো তেমন পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
ছোট, তবে শক্তিশালী
বোম্বারডিয়ার সিএস১০০ যাত্রীবাহী বিমানের ককপিটের ভেতরের একটা ছবি৷ ক্যানাডায় নির্মিত ১১০ থেকে ১৫০টি আসন ধারনে সক্ষম বিমানটি প্রমাণ করেছে সাইজই একমাত্র বিষয় নয়৷ এয়ার ক্যানাডা, সুইস এয়ারলাইন্স এবং ডেল্টা এয়ারলাইন্স বিমানটির সাম্প্রতিক ক্রেতাদের মধ্যে কয়েকটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Leal-Olivas
এবার সাড়া অনেক কম
দুই বছর আগে ফার্নবোরো এয়ারশো-তে খদ্দেররা ২০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিমান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোন কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ সে তুলনায় চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির পরিমান প্রায় শূন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TASS/M. Lystseva
‘প্রব্লেম চাইল্ড’
মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট বিমান এ৪০০এম নিয়ে খানিকটা বিপাকেই আছে এয়ারবাস৷ বিমানটির বাইরের কিছু অংশের চিড় ধরার প্রবণতা রয়েছে৷ মোটের উপর, এটির ইঞ্জিনেও সম্প্রতি কিছু সমস্যা ধরা পড়েছে৷ তা সত্ত্বেও, এয়ারবাস বিমানটির সুবিধাদি তুলে ধরেছে ফার্নবোরো শো-তে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TASS/M. Lystseva
নতুন বাজার
চীন এবং ভারতের মতো দেশগুলো যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে, তাই সেসব দেশের নতুন নতুন বিমানের প্রয়োজন পড়বে - অন্তত বিমান শিল্প তাই আশা করছে৷ চীনের বিমান সংস্থা ডংহাই এবং জিমান বোয়িংয়ের কাছ থেকে সাড়ে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের বিমান কেনার অর্ডার দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
সাধারণদের জন্যও সুযোগ
ফার্নবোরো এয়ারশো-তে শুরুতে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের আনোগানা থাকলেও সপ্তাহান্তে তা সাধারণ মানুষের জন্যও উন্মুক্ত করে দেয়া হবে৷ ফলে বিমানপ্রেমীরা চাইলে নিত্যনতুন মডেলের বিমান দেখতে পারবেন খুব কাছ থেকে৷ যাবেন নাকি?
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
8 ছবি1 | 8
ভারতীয় বিমানসংস্থাগুলির জন্যে কিন্তু বর্জ্য নিষ্কাশনের নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে৷ সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, উড়ন্ত বিমান থেকে কোনো অবস্থাতেই সেপটিক ট্যাংক খালি করা যাবে না৷ সেটা খালি করতে হবে বিমানবন্দরে, বিমান মাটিতে নামার পর৷ তার জন্য নির্দিষ্ট সাফাইকর্মীরা থাকেন বিমানবন্দরে, যাঁরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিমানের সেপটিক ট্যাংক সাফ করেন৷ এবং এক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম হলো, বিমান অবতরণের পর যদি দেখা যায় তার সেপটিক ট্যাংক খালি, তা হলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে৷
একটি কারণেই বিমানের বর্জ্য মাঝ আকাশে, উড়ন্ত অবস্থায় খালি করার দরকার হতে পারে৷ যদি সেপটিক ট্যাংক কোনো কারণে ‘লিক’ করে বা বিমানের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়, তবে সেক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নিয়ম আছে৷ বিমান যখন অতি উচ্চতায় থাকবে, সেই বর্জ্য হিমায়িত করে বরফ কুচির আকারে পরিবেশে ছেড়ে দিতে হয়৷ কিন্তু পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, বিমান সংস্থাগুলি বরং ভারতীয় রেলের থেকে শিক্ষা নিতে পারে৷ রেলকামরার শৌচালয়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যবহার বিধি আছে৷ ট্রেন স্টেশনে থাকা অবস্থায় বা রেলপথে অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কামরার শৌচালয় ব্যবহার নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তাতেও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যায় না, যেহেতু মানব-বর্জ্য কোথাও না কোথাও ঠিকই পড়ে, নোংরা হয়৷ যে কারণে রেল মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রত্যেকটি রেলের কামরায় জৈব শৌচালয়, অর্থাৎ বায়ো টয়লেট বসানোর৷
কীভাবে কাজ করে এই শৌচালয়? সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে সঞ্চিত বর্জ্যকে প্রথমে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া হয়৷ তারপর অতি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্যে সেটিকে মিথেন গ্যাস এবং জলে রূপান্তরিত করা হয়৷ ফলে দূষণের কোনো সম্ভাবনাই থাকে না৷ ভারতীয় রেল মন্ত্রক ২০১৬ সালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, পরের পাঁচ বছরের মধ্যে সমস্ত রেল কামরায় এই জৈব শৌচালয় বসিয়ে ফেলবে৷ সেই মতো কাজও শুরু হয়ে যায় এবং এখন সেই কাজের যা অগ্রগতি, নির্দিষ্ট সময়সীমার দু'বছর আগেই, অর্থাৎ ২০১৯ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে৷
পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, ভারতীয় রেল যদি পারে, তা হলে বিমান সংস্থাগুলি কেন পারবে না এমন কোনো সমাধান খুঁজে নিতে, যাতে মানব-বর্জ্য সমাজ জীবনে দূষণ না ঘটায়!
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷
বাংলাদেশে যেসব এয়ারলাইন্স সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে
বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন৷ প্রায় একই সংখ্যক যাত্রী দেশে প্রবেশ করেন৷ বাংলাদেশ বিমান-এর দেয়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/K. Doherty
বাংলাদেশ বিমান
বাংলাদেশে মোট যাত্রীর ২০ থেকে ২১ ভাগ পরিবহন করে বাংলাদেশ বিমান৷ ফলে প্রতিদিন ৩ হাজারের মতো যাত্রী বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে অন্য দেশে যায়৷ প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমান৷ ১৬টি রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল করে৷ এর মধ্যে লন্ডনসহ কয়েকটি রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট যায়৷ অন্য রুটগুলোতে সপ্তাহে অন্তত দু’টি ফ্লাইট চলাচল করে৷
ছবি: picture alliance/Asian News Network
এমিরেটস এয়ারলাইন্স
বাংলাদেশ বিমানের পরই এমিরেটস এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে৷ সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করে তারা৷ প্রতিদিন এ সব ফ্লাইট ১২শ’ থেকে সাড়ে ১২শ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: C. Furlong/Getty Images
সৌদিয়া
এমিরেটস-এর পরেই রয়েছে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স৷ তারা সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন আটশ’ থেকে সাড়ে আটশ’ যাত্রী পরিবহন করে এসব ফ্লাইট৷
ছবি: Reuters/S. Perez
কাতার এয়ারলাইন্স
চতুর্থ অবস্থানে আছে কাতার এয়ারলাইন্স৷ এরা সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন প্রায় আটশ’ যাত্রী পরিবহন করে এই এয়ারলাইন্স৷
ছবি: AP
ইতিহাদ এয়ারওয়েজ
ঢাকা থেকে ইতিহাদ প্রতিদিন একটা করে ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন তারা প্রায় পাঁচশ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
জেট এয়ারওয়েজ
জেট এয়াররওয়েজ প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ তবে তাদের ফ্লাইটগুলো ছোট হওয়ায় যাত্রী পরিবহন হয় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jet-Airways
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বড়৷ তবে তারাও প্রতিদিন ঢাকা থেকে প্রায় পাঁচশ’ যাত্রী পরিবহন করে৷