পেনশন থেকে মাইলেজ ভাতা বাদ দেবার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সারা দেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীরা৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির ডাকে এ ধর্মঘটের কারণে বুধবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কোনো স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েনি৷ ফলে স্টেশনে এসে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা৷
পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, লোকো মাস্টাররা দেড়শ বছর আগে থেকে পেনশনের সাথে ৭৫ শতাংশ মাইলেজ ভাতার একটি বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন৷ আইবাস অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম চালু হওয়ার পর তারা সেই সুবিধাটা পাচ্ছেন না৷ ১০০ বছরের পুরনো এই সুবিধা ফিরে পেতেই তারা আন্দোলনে নেমেছেন৷
তিনি আরো জানান, ‘‘আমাদের লোকো মাস্টাররা হঠাৎ আন্দোলনে গিয়ে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে৷ আমরাও কিছুটা বিপদে পড়েছি, যাত্রীরা অনেক দুর্ভোগে পড়েছে৷ বিষয়টির সুরাহা করতে ঢাকার রেলওয়ে লোকোশেডে রেলমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক লোকো মাস্টারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন৷''
লোকো মাস্টার বা ট্রেন চালক, সহকারী চালক, ট্রেনের গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) মত যে কর্মীরা নিয়মিত ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বলা হয় রানিং স্টাফ ৷ বাংলাদেশ রেলওয়েতে রানিং স্টাফের ১৭৪২টি পদ থাকলেও বর্তমানে ১০১৩ জন কর্মরত৷ এই কর্মীরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে এক দিনের বেতনের সমান অর্থ রানিং ভাতা বা মাইলেজ হিসেবে পান৷ আর অবসরে গেলে সেই ভাতার ৭৫ শতাংশ যোগ করে তাদের পেনশন হিসাব করা হত আগে৷ বছরখানেক আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মাইলেজ ও ৭৫ শতাংশের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের আন্দোলন শুরু হয়৷
যেমন দেখা গেল বাংলাদেশের উড়াল মেট্রোরেল
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে দেখা হয়েছে৷ ২০২২ সালে মেট্রোরেলে চড়ে যাতায়াত করতে পারবেন ঢাকাবাসী৷ ছবিঘরে থাকছে এই প্রকল্পের তথ্য ও পরীক্ষামূলক যাত্রার চিত্র৷
ছবি: Habibur Rahman/ABACA/picture alliance
ঢাকাবাসীর স্বপ্ন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যাতায়াতের অন্যতম অনুষঙ্গ মেট্রোরেল৷ অবশেষে বাংলাদেশের রাজধানীর বাসিন্দারাও পাচ্ছেন এই যানে চড়ার সুযোগ৷ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন নগরবাসী৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
পরীক্ষামূলক যাত্রা
২৯ আগস্ট ছয়টি বগি নিয়ে দিয়াবাড়ি ডিপো থেকে মিরপুর ১২ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার ডিপোতে ফেরে ট্রেনটি৷ সবুজ পতাকা উড়িয়ে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি ডিপোতে মেট্রোরেলের এই পরীক্ষামূলক যাত্রার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
২৫ কিলোমিটার গতি
ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তরা উত্তর, উত্তর সেন্টার ও উত্তর দক্ষিণ স্টেশন পাড়ি দিয়ে মিরপুরের পল্লবী স্টেশনে গিয়ে থামে ট্রেনটি৷ এরপর ফিরে আসে ডিপো এলাকায়৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
ট্রেনের ভিতরে
ট্রেনের ভিতরে দুইপাশে থাকছে বসার আসন৷ মাঝখানে দাঁড়ানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা৷ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কোচগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ ভিতরে থাকবে যাত্রা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শনের ডিসপ্লে-প্যানেল৷ হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি ট্রেনের কোচগুলোতে থাকবে নির্ধারিত স্থান৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
১৬ টি স্টেশন
পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করবে মেট্রোরেল৷ ১৬ টি স্টেশন থেকে যাত্রীরা উঠানামা করতে পারবেন৷ স্টেশনগুলো হলো: উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল৷
ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance
স্টেশন যেমন হবে
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, ‘‘টিকেট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দোতলায় এবং ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম থাকবে তিনতলায়৷ প্রত্যেকটি মেট্রোরেল স্টেশনে লিফট, চলন্তসিঁড়ি, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকেট সংগ্রহের মেশিনসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক ব্যবস্থা থাকবে৷’’ ট্রেনে চলার জন্য র্যাপিড পাস ব্যবহার করতে হবে৷
২৪ সেট মেট্রোরেল ট্রেন নিয়ে শুরু হবে এমআরটি লাইন-৬ নামের এই মেট্রোরেলের যাত্রা৷ প্রতি সেট ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কোচ থাকবে৷ পরবর্তীতে আরো দুইটি কোচ যোগ করা যাবে৷ প্রথম সেটের ছয়টি ২১ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় সেটের আরো ছয়টি কোচ ১ জুন ঢাকায় পৌঁছায়৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
অগ্রগতি
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ৷ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের ১২ কিলোমিটার লাইনে পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ৷ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হয়েছে ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ৷ এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা৷
মেট্রোরেল লাইন-৬-এর জন্য গত ২০১৭ সালে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ দুই পাশে দুইটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে৷
ছবি: Habibur Rahman/ABACA/picture alliance
২০২২ সালে চালু
২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা সরকারের৷ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষের সময়সীমা ছিল৷ করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়৷ পরীক্ষামূলক যাত্রার আয়োজনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর মেট্রোরেল লাইন-ছয়সহ দেশের তিনটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হবে৷ বাকি দুটি প্রকল্প পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী ট্যানেল৷
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
10 ছবি1 | 10
রেলের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ আন্দোলনে নামার পরে মাইলেজ ব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়৷ পেনশন সুবিধা ‘পরে দেখা হবে' বলে সে সময় আশ্বাস দিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ৷ তা পূরণ না হওয়ায় সারাদেশে কর্মবিরতির ডাক দেয় এ সংগঠন৷
চট্টগ্রামে রেলের রানিং স্টাফদের একজন আবু সিদ্দিক বলেন, ‘‘মাইলেজ ও পেনশনের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা আন্দোলন করেছিলাম৷ মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত কাজের মাইলেজ সুবিধা রাখলেও পেনশনে গেলে মাইলেজের ৭৫ শতাংশ সুবিধাটা বাতিল করে দেয়৷ এ নিয়মটা ১৬০ বছর ধরে আছে৷ সুতরাং অর্থ মন্ত্রণালয় কেন এ সুবিধা বাতিল করবে?''
পূর্ব রেলের অধীনে থাকা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকেও সকালে কোনো আন্তঃনগর বা লোকাল ট্রেন ছেড়ে যায়নি৷ পাহাড়তলী লোকোশেড গেইট, বন্দর সিজিপিওয়াই লোকোশেড ও লাকসাম লোকোশেডে অবস্থান নিয়ে রানিং স্টাফরা কর্মবিরতি পালন করছেন৷
পূর্ব রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ইতি ধর জানান, ‘‘রানিং স্টাফরা কাজ না করায় সকাল থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কোন ট্রেন ছাড়েনি৷ তবে আগের দিন রাতে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম এসেছে৷''
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে ১০টি আন্তঃনগর, ১২ জোড়া লোকাল, চার জোড়া কমিউটার, চার জোড়া মেইল ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়৷