সুখ মানে কী? কি করে সুখী হওয়া যায়? সুখের বসতিই বা কোথায়? নানা প্রশ্ন, অনেক উত্তর৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ বলতে পারেননি সঠিক উত্তরটা৷ কিন্তু চেষ্টা অব্যাহত৷ সেই চেষ্টার ফসল একটি বই৷ নাম ‘দ্য ওয়ার্ল্ড বুক অফ হ্যাপিনেস’৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রুনা লায়লার একটি গান আছে৷ যেটি আজও অনেকে গুন গুন করে গান, ‘সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছে করে'৷ সত্যিই যুগ যুগ ধরে মানুষ জানতে চেয়েছে সুখের বিশ্লেষণ৷ জানতে চেয়েছে সুখী হওয়া যায় কী করে৷ কিন্তু একেক জনের কাছে একেক উত্তর৷ আর তাই সুখের বসতির খোঁজ পাওয়াটা সব সময় থেকেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷
কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কী? আর তাই এ বিষয়ে পৃথিবীর খ্যাতিমান একশ জন গবেষক সুখের তত্ত্ব তালাশ করেছেন গবেষণা গ্রন্থটিতে৷ ওয়ার্ল্ড বুক অফ হ্যাপিনেসের অন্যতম গবেষক নেদারল্যান্ডসের রটারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুট ফেনহোফেন৷ তিনি বলছেন, সুখ বিষয়টি আসলে জীবনের মানসিক উপলব্ধি৷ তিনি তাঁর নিজস্ব মাপকাঠি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন কোন দেশের মানুষ সবচেয়ে সুখী৷ তাঁর বিচারে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ কোস্টারিকা৷ এরপর আছে ডেনমার্ক৷ পরেই যৌথ অবস্থানে আছে ক্যানাডা এবং সুইজারল্যান্ড৷ যে দেশ প্রায় প্রতি বছরই সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান, সেই নরওয়ের অবস্থান এর পরেই৷ টোগো, তানজানিয়া এবং জিম্বাবোয়ের মানুষের সুখের প্রাচুর্য কম৷ ফলে তারা আছে সর্বনিম্ন স্থানে৷ তিনি বলেন, ‘‘সুখটা একা একা জন্ম নেয় না৷ সামগ্রিক বিবেচনাতেই আপনা আপনি মনে হবে সুখী-অসুখীর ব্যাপারটি৷'’
বেশি করে হাঁটুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন
হাঁটাহাঁটি শরীরকে সুস্থ রাখে এবং নানা অসুখ-বিসুখ এমনকি ক্যানসারের মতো কঠিন অসুখ থেকেও দূরে থাকা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চলুন হাঁটি...
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে অনেক অসুখ-বিসুখকে দূরে রাখা সম্ভব৷ হাঁটা বা জগিং শরীরকে তো মজবুত করেই, মনকেও করে শক্ত৷ তবে হাঁটার অভ্যাস হুট করে হয় না, আস্তে আস্তে হাঁটার গতি বাড়ালে এবং সেটা নিয়মিত করলে তবেই শুধু ভালো ফল পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোফায় না বসে বেরিয়ে পড়ুন
সারাদিনের লম্বা কাজের পর সাধারণত সবাই বাড়ি ফিরে সোফায় বা বিছানায় বসে বা শুয়ে সময় কাটাতে চায়৷ বসার চেয়ে যদি একটু খানি হাঁটা যায় তাহলে কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি দূর হবে অনেক তাড়াতাড়ি৷ একথা অনেকে জানলেও সেভাবে পরিকল্পনা করে হাঁটা আর শুরু করা হয় না৷
ছবি: Fotolia/olly
‘চল্লিশ পেরোলেই চালশে...’
হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা না করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা ভালোভাবেই টের পাওয়া যায় এবং ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অংশ দুর্বল হয়ে যেতে থাকে৷তা শুরু হয় ৪০ বছরের পর থেকেই – একথা বলেন মিউনিখের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা সংক্রান্ত চিকিৎসা বিভাগের প্রধান প্রোফেসার মার্টিন হালে৷ তাঁর কথায়, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে তা পরবর্তিতে কোমর ব্যথা, মাথা ঘুরানো, এমনকি ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়৷
ছবি: Fotolia/ArTo
হাঁটার কোর্স শুরু
হাঁটাহাঁটির জন্য জার্মানির ‘অ্যাডাল্ট এডুকেশন সেন্টার’-গুলিতে সম্প্রতি একটি কোর্স চালু করা হয়েছে৷ মোট দশদিনের কোর্স, প্রথমেই হাঁটা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান এবং তারপর আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করার নানা পরামর্শ ৷ যেমন হাঁটার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, বিশ্রাম, শুরুতে কার কতদূর হাঁটা উচিত ইত্যাদি৷ সোজা কথায় হেঁটে যেন আনন্দও পাওয়া যায়৷ এর সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ব্যাপার তো আছেই৷
ছবি: Deutsches Hygienemuseum
পরামর্শ: আস্তে আস্তে শুরু করুন
যাঁরা কখনো কোনো রকমের শরীরচর্চা করেননি, তাঁদের জন্য পরামর্শ: কখনো প্রথমেই বেশি সময় ধরে হাঁটবেন না বা বেশি দূরে যাবেন না, তাহলে হাঁটার আগ্রহ কমে যাবে৷ একথা বলেন শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞ আনদ্রেয়া স্ল্যুটার, যিনি একটি ‘হাঁটার কোর্স’-এর ‘কনসেপ্ট’-এর সাথে জড়িত৷
ছবি: Alamode
দল বেঁধে হাঁটুন
জার্মানিতে ছোট-বড় সব বয়সিদের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন শরীরচর্চা কেন্দ্র বা ক্লাবগুলোতে৷ এমনকি, ছুটির দিনে দল বেঁধে প্রায়ই অনেককে হাঁটতে দেখা যায় একটু পাহাড়ি জায়গাগুলোতে৷
ছবি: EWN
নর্ডিক হাঁটা
বেশ কয়েক বছর আগে দু’হাতে ছড়ি নিয়ে এভাবে হাঁটা শুরু হয়েছে জার্মানিতে৷ খোলা জায়গা ছাড়াও শহরের ভেতরও মানুষকে এভাবে অনেক সময় হাঁটতে দেখায় যায়৷ তবে এভাবে হাঁটার জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে, তা না হলে উপকারের চেয়ে যে অপকারই হতে পারে বেশি!
ছবি: picture-alliance/dpa
ছোটবেলা থেকেই হাঁটা
ছোটবেলা থেকেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুললে বড় বেলায় আর কোনো সমস্যা হয় না বা নতুন করে শুর করতে হয় না৷ তাছাড়া হাঁটা অভ্যাস একবার হয়ে গেলে যে কোনো আবহাওয়াতেই হাঁটা সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
জার্মানির সফল চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল হাঁটতে খুব ভালোবাসেন৷ ছুটির দিনে বা অন্য কোনো সময় সুযোগ পেলেই তিনি ও তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাওয়ার পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান৷ মুক্ত বাতাসে হাঁটা মানেই শরীর, মন দুটোকেই হালকা করা৷ এমনিতেই কি আর তাঁকে ‘রাজনীতিক তারকা’ বলা হয়?
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
অনেক গবেষকই বলছেন, ‘‘আপনার কত অর্থ প্রতিপত্তি আছে, সেটাও খুব একটা আমলে আসে না, ধর্তব্যে আসে না প্রাচুর্যের বিষয়টিও৷'' গবেষক ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট লেন-এর বক্তব্য অনেকটা এই রকম৷ তিনি বলছেন, যখন মানুষ তাদের দারিদ্র্যকে পিছনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা হন সুখী৷ এক্ষেত্রে অনেক বেশি আয়ও সুখী হবার বিচারে আসে না৷
যাহোক সেই বইতে অনেকে অনেক কথা বলেছেন৷ তবে সুখী কী করে হবেন তার কিছু রেসিপিও বাতলে দিয়েছেন তাঁরা৷ তারা বলছেন, সুখী হতে হলে প্রয়োজন খুবই ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসী বন্ধু, একটি স্থির প্রেমময় জীবন, নিজের যোগ্যতা অনুসারে একটি নিশ্চিত পেশা, জীবন চালিয়ে নেবার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ, দিনে অন্তত তিনটি ইতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং নিজের যা অর্জন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা৷
এই রেসিপিকে আরও একটু উন্নত করতে আরও পাঁচ তরিকা আছে৷ এগুলো হলো, এক বা একাধিক সন্তান গ্রহণ, বিধাতার উপর বিশ্বাস, অতিরিক্ত শিক্ষা, ভালো স্বাস্থ্য এবং সঙ্গে কিছুটা হতাশা৷