জাপানে বৌদ্ধ মন্দিরে এখন আর বেশি মানুষ যায় না৷ তাই বলে ভিক্ষুরা মন খারাপ করে বসে নেই৷ খোলা হয়েছে নতুন ধরণের রেস্টুরেন্ট৷ খাওয়া-দাওয়া, চা-কফি এমনকি মদ্যপানও চলে সেখানে৷ সঙ্গে থাকে বৌদ্ধ ধর্মের আলোচনা!
বিজ্ঞাপন
রাজধানী টোকিও এবং তার আশপাশে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এমন কিছু রেস্টুরেন্ট৷ রেস্টুরেন্টগুলো আকারে খুব বড় নয়, তাই বলতে গেলে কোনো সময়ই ফাঁকা থাকে না৷ ২০ থেকে ৪০ বছরের নারীরাও যান সেখানে৷ খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি একটু ধর্ম নিয়ে কথা বলতে ভালোই লাগে তাঁদের৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেস্টুরেন্টগুলোর মালিক বৌদ্ধ ভিক্ষু৷ কিছু কিছু রেস্টুরেন্টের ওয়েটারও ভিক্ষু৷ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে দিব্যি অ্যালকোহল, অর্থাৎ মদও পরিবেশন করেন তাঁরা৷ হাসিমুখে কথা বলেন ক্রেতাদের সঙ্গে৷ ধর্মবিষয়ক প্রশ্নের উত্তরও দেন ভিক্ষুরা৷
টোকিওর এমনই এক রেস্টুরেন্টের নাম ‘টেরা ক্যাফে'৷ জাপানি শব্দ ‘টেরা' মানে মন্দির৷ সুতরাং বাংলায় রেস্টুরেন্টটির নাম দাঁড়ালো ‘মন্দির ক্যাফে'৷ সেই ক্যাফেতে মন্ত্র জপ করার জন্য পুঁতির মালা রাখা হয়েছে৷ কাপড়ে লেখা আছে মন্ত্র৷ ভেতরে গিয়ে একজন ভিক্ষুকে ডেকে নিয়ে কিছু একটা খেতে খেতেই শুরু করতে পারেন ধর্ম নিয়ে আলোচনা৷ চাইলে একটু মন্ত্রও জপ করে নিতে পারেন৷
‘টেরা ক্যাফে'র মালিক হিরোতাকে আসানো নিজেও ভিক্ষু৷ এখনো শিংগোয়িজি মন্দিরের প্রধান ভিক্ষুর দায়িত্বে আছেন তিনি৷ ২০১৩ সালে ‘টেরা ক্যাফে' প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধর্ম প্রচারের কাজ মন্দিরের বাইরেই করছেন বেশি৷ ‘টেরা ক্যাফে' ব্যবসা সফল হওয়ায় আরো তিনটি রেস্টুরেন্ট এবং একটি গলফ শপও খুলেছেন হিরোতাকে আসানো৷ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নামার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজকাল লোকজন আর মন্দিরে আসেনা- এই কথা বলে কান্নাকাটি না করে আমি মন্দিরকেই মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চেয়েছি৷''
এসিবি/জেডএইচ (রয়টার্স)
ভারতের পরিবেশবান্ধব ধর্মীয় আচার
মন্দিরের ফুলগুলো পুনঃব্যবহার করার যন্ত্র তৈরি করে মানুষের মধ্যে দূষণ বিষয়ে সচেতনা তৈরিতে এগিয়ে এসেছেন ভারতের পরিবেশবিদরা৷ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যত ফুল ব্যবহার হয় সাধারণত সেগুলো নদীতে ছুড়ে ফেলা হয়, যার ফল পানি দূষণ৷
ছবি: DW
ধর্ম ও নদীর ভূমি
ভারতের লাখো মন্দিরে প্রতিদিন পূজার সময় অনেক ফুল ব্যবহার হয়, যেগুলো শেষ পর্যন্ত ফেলে দেওয়া হয় নদীতে৷ প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত পূজা দিতে যান এসব মন্দিরে৷ এই ছবিটি দিল্লির লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দিরের৷
ছবি: picture alliance/DINODIA
ফুল দিয়ে ভক্তি প্রদর্শন
ঈশ্বরের প্রতি একাত্মতা এবং ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য ভক্তরা এই ফুল দেবতার চরণে অর্পণ করেন৷ তবে কেবল হিন্দু মন্দিরগুলোতেই নয়, ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় গুরুদ্বয়ারাতেও ফুল অর্পণ করেন অনেক ভক্ত৷ এছাড়া ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মাজারেও ফুল দেন৷
ছবি: DW/A. Ashraf
আরাধনা থেকে আর্বজনা
ফুল অর্পণের মধ্য দিয়ে ভক্তরা যখন পূজা সম্পাদন করেন, কেউ অল্প কিছু ফুল বাসায় নিয়ে যান৷ আর কিছু রয়ে যায় মন্দিরেই৷ এগুলো শুকিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলা হয় পার্শ্ববর্তী নদীতে৷ বেশিরভাগ ভক্তই পরিবেশের কথা না ভেবে কাজটি করেন৷
ছবি: DW/A. Ashraf
বাড়ছে আবর্জনা, তার সঙ্গে পরিবেশ দূষণ
কেবল দিল্লি শহরেই মন্দির আছে প্রায় ২৩ হাজার৷ আর প্রতিটি মন্দিরের বাইরেই আছে ফুলের দোকান৷ ওআরএম গ্রিন নামে একটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, প্রতিদিন এ সব মন্দির থেকে ২০ হাজার কিলোগ্রাম ফুল পাওয়া যায়৷ এদের মধ্যে ৮০ ভাগ যমুনা নদীতে ফেলা হয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
দূষণ সমস্যা
ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নদীকে পবিত্র মানলেও পরোক্ষোভাবে সেই নদীরই দূষণ ঘটাচ্ছেন তাঁরা৷ কেবল যমুনা নদীকে দূষণমুক্ত করতে ভারত সরকার গত কয়েক বছরে খরচ করেছে অন্তত ২০ বিলিয়ন ইউরো৷
ছবি: DW/A. Ashraf
নতুন ভাবনা
ওআরএম গ্রিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অঙ্কিতা কলসি বলেছেন, ধর্মীয় আচার আচারণে কিছুটা পরিবর্তন আসছে৷ এই বেসরকারি সংস্থাটি মন্দিরের ফুলগুলো রিসাইকেল করে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে৷
ছবি: DW/A. Ashraf
ফুল থেকে জ্বালানি
কলসি এবং তাঁর সহকর্মীরা এমন একটি যন্ত্র বানিয়েছেন, যেটার মাধ্যমে ফুলগুলো প্রক্রিয়াজাত করে ধূপকাঠি বা রান্নার জন্য ‘বায়োফুয়েল’ তৈরি করা যায়৷ ব্লেসড ফ্লাওয়ার নামে ঐ যন্ত্রটি তৈরিতে এক বছর এবং ১০ হাজার ইউরো খরচ হয়েছে৷ দিল্লির সাঁইবাবা মন্দিরে এই যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Ashraf
সচেতনতা বাড়ানো
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দিল্লির অন্তত ৩০টি মন্দিরে এই যন্ত্রটি স্থাপনের কথা ভাবছে ওআরএম গ্রিন৷ যন্ত্রটি আরো উন্নত করার পরিকল্পনা করছে তারা, যাতে গাছের পাতাও প্রক্রিয়াজাত করতে পারে এটি৷ এর ফলে মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণ বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে বলেও আশা করছে সংস্থাটি৷