রেস্টুরেন্ট পুড়লেও আন্দোলনে সমর্থন বাংলাদেশি পরিবারের
৩১ মে ২০২০
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস শহরে তাদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন রেস্টুরেন্টটি পুড়িয়ে দিয়েছেন৷ তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ক্ষুব্ধ না হয়ে উল্টো আন্দোলকারীদেরই সহযোগিতা করছে এক বাংলাদেশি পরিবার৷
বিজ্ঞাপন
তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস৷
পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র৷ ফ্লোরিডা, আটলান্টা, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন শহরে৷ চলছে অগ্নিসংযোগ আর ভাংচুর৷ এরমধ্যে মিনিয়াপোলিস, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া আর লস এঞ্জেলেসসহ অনেকগুলো শহরে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে৷ আন্দোলন থামাতে ফেডারেল সরকার প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী নামাতে প্রস্তত বলে টুইটে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷
শুরুটা হয়েছিল মিনিয়াপোলিস থেকে৷ জর্জ ফ্লয়েডের পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও আর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জ্বলছে শহরটি৷ ক্ষোভের আগুনে পুড়ে গেছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷ বাদ যায়নি বাংলাদেশের রুহেল ইসলামের রেস্টুরেন্টটিও৷ এটিই তার একমাত্র আয়ের অবলম্বন৷ অথচ ঘটনাটি জানার পর এক বন্ধুকে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘আমার বিল্ডিং পুড়ে যাক৷ কিন্তু ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক৷’’
শুক্রবার আগুন নিভে যাওয়ার পর পরিবারসহ রেস্টুরেন্টে যান রুহেল৷ তিনি সেখানেও অন্দোলনকারীদের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন৷ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘‘আমরা ভবনটি আবার তৈরি করতে পারব, কিন্তু একজন মানুষকেতো আর পারব না৷’’
২০০৮ সালে বাংলাদেশি ও ভারতীয় খাবারের এই রেস্টুরেন্টটি চালু করেন তিনি৷ মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী হওয়ায় নাম দেন গান্ধী মহল৷ যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া আন্দোলনটি এখন সহিংসতায় রূপ নিলেও তার পেছনে কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘আমাদের তরুন প্রজন্ম ক্ষুব্ধ হয়েছে, এবং এর যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে,’’ বলেন রুহেল৷
শুধু রুহেল নন, তার কন্যা হাফসা ইসলামও বাবার মতকেই সমর্থন দিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরাতো শান্তিপূর্ণ উপায়ে চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাতেতো কাজ হয়নি৷’’
প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে শুধু নৈতিক সমর্থনই নয়, রেস্টুরেন্ট ভবনের একটি কক্ষকে ফিল্ড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের জন্যেও ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা৷ সেখানে অনেক আন্দোলনকারীদেরই চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷ এমনকি তাদের শক্তি যোগাতে রেস্টুরেন্টে নান, বাসমতি চালের ভাত আর ডাল রান্না করেছেন তিনি৷
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নিপীড়নে সোমবার মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জর্জ ফ্লয়েড৷ নির্মমতার এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়৷
এফএস/এআই (নিউইয়র্ক টাইমস, এপি, রয়টার্স)
অ্যামেরিকায় কলকাতার মেয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের একটি হাসপাতালের চিকিৎসক জাফিয়া অ্যানক্লেসারিয়া৷ কলকাতার এই নারী অন্তসত্তা হয়েও নিম্নবিত্ত করোনা রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন নিয়মিত৷ তার গল্প থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/L. Nicholson
সাত মাসের অন্তঃসত্তা
ডাক্তার জাফিয়া অ্যানক্লেসারিয়া সাত মাসের অন্তঃসত্তা৷তিনি লস এঞ্জেলেসের কমন স্পিরিটস ডিগনিটি হেল্থ ক্যালিফোর্নিয়া হসপিটাল মেডিকেল সেন্টারের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সহকারি পরিচালক৷হাসপাতালটিতে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত নিম্নবিত্ত হিস্পানিক ও আফ্রো অ্যামেরিকানদের চিকিৎসা দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
শিশু নিয়ে উদ্বেগ
এক করোনা রোগীকে ভেন্টিলেটরে রেখে শ্বাস নিতে সাহায্য করছিলেন জাফিয়া৷হঠাৎ খেয়াল করেন রোগীকে জরুরি সেবা দেয়ার পুরোটা সময় শিশুটি নড়াচড়া করছে না৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
ভয়াবহ কাজের চাপ
এই হাসপাতালে করোনা ইনটেনসিভ কেয়ারে ২২টি বিছানা আছে৷মার্চের শেষ থেকে এই ইউনিটে কাজের চাপ খুব বেশি৷কোনো কোনো নার্সকে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
গরিবদের দুরবস্থা
জাফিয়া যেসব করোনা রোগীর চিকিৎসা করছেন, তারা এমন জায়গায় বাস করেন, যেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব নয়৷ফলে তাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি৷জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, লস এঞ্জেলেসের যেসব দরিদ্র মানুষ করোনায় মারা গেছেন তাদের সংখ্যা ঐ এলাকায় করোনায় মৃত ধনীদের চেয়ে দ্বিগুণ৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
নার্সদের সহযোগিতা
নার্সরা প্রতিনিয়ত তাকে পরীক্ষা করেন, দেখেন তিনি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছেন কিনা৷অনাগত সন্তানের উদ্দেশে জাফিয়া বলেন, ‘‘তুমি তোমার মাকে ভালোভাবে কাজ করতে দিচ্ছো৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
জাফিয়ার কাজ
জাফিয়ার ১২ ঘণ্টার শিফট শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে৷প্রতি সপ্তাহে চারদিন করে কাজ করেন আইসিইউতে৷বাকি এক বা দুই দিন রোগীদের পরামর্শ দেন৷রাতে যিনি আইসিইউ-এর দায়িত্বে থাকেন, তার কাছ থেকে সব তথ্য জেনে করোনা প্রতিরোধক পোশাক পরে ও জীবানুনাশক ব্যবহার করে রোগীদের ঘরে ঢোকেন৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তা
তবে জাফিয়ার মাঝে মাঝে মনে হয়, রোগীদের সামলাতে গিয়ে তার মধ্যে যে হতাশা সৃষ্টি হয় তা নিশ্চয়ই তার সন্তানও টের পায়৷তাই তিনি প্রায়ই একটু সময় বের করে সন্তানকে বলেন, ‘‘সব ঠিক আছে, চিন্তা করো না৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
শারীরিক কষ্ট
দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে জাফিয়ার এখন বেশ কষ্ট হয়৷ পিঠ ও কোমরে ব্যথা করে৷তবে একদিন সকালে একটা ভালো খবর পান: জানতে পারেন এক কর্মী চার সপ্তাহ আইসিইউতে ভেন্টিলেটরে থাকার পর সুস্থ হতে শুরু করেন৷ এমন খবরে সব কষ্ট ভুলে যান জাফিয়া৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
পাশে আছেন স্বামী
বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরলে জাফিয়াকে সাহায্য করেন তার স্বামী জাফারি৷ করোনার কারণে তিনি প্রায়ই স্ত্রী ও অনাগত সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন৷ জাফারি একজন প্রকৌশলী৷ নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করেন তিনি৷ ফেসটাইমে জাফারি মাঝে মাঝে আলট্রাসাউন্ডে সন্তানের নড়াচড়া দেখে নিশ্চিন্ত হন৷
ছবি: Reuters/L. Nicholson
কলকাতার মেয়ে
জাফিয়া কলকাতার মেয়ে৷বাবা-মা দুজনেই চিকিৎসক৷তার বাবা-মা এখনো কলকাতায়৷সন্তান জন্মের সময় বাবা-মায়ের যুক্তরাষ্ট্রে আসার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভব হবে না কিনা সন্দেহ৷