আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানীর দারুণ সাফল্যের খবর৷ ড. তাহের এ সাইফের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী ‘জীবন্ত রোবট' উদ্ভাবন করেছেন৷ এখন ‘রোবট বিপ্লব' ঘটানোর দ্বারপ্রান্তে৷ সেটা সফল হলে ক্যানসার জয় করা সম্ভব হবে!
বিজ্ঞাপন
নিউইয়র্ক টাইমস-এর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সংখ্যায় পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী এক কলামনিস্ট লিখেছেন, ২০১৬ সালে প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটাতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি গবেষণা৷ গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশের ড. তাহের এ সাইফ৷ তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইতিমধ্যে ‘জীবন্ত রোবট' উদ্ভাবনের স্বপ্নপূরণ করেছেন৷
আণুবীক্ষণিক এই রোবট মানুষের রক্তনালিতে সাঁতার কাটতে পারে৷ ড. তাহের এ সাইফ ও তাঁর ছাত্ররা হৃৎপিণ্ডের কোষ থেকেই তৈরি করেছেন বায়ো-বট বা ‘জীবন্ত রোবট'৷ এখন চলছে স্টেমসেল থেকে নেওয়া নিউরন আর পেশিকোষের সমন্বয়ে জৈব রোবট তৈরির চেষ্টা৷ চলমান গবেষণা সফল হলে নিউরনগুলো কখন, কোথায় যাওয়া দরকার তা নিজে নিজেই ঠিক করতে পারবে৷
ফলে নিউরনের নির্দেশে রোবট ক্যানসার সেলে যেতে পারবে, সেখানে গিয়ে প্রতিষেধক উৎপাদনকারী কিছু কোষ ক্যানসার সেল ধ্বংস করার উপাদান নিঃসরণ করবে৷
বাইরে থেকে কোনো ওষুধের প্রয়োগ ছাড়াই ক্যানসারকে জয় করার স্বপ্ন-রথের সারথী হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক কৃতী শিক্ষার্থী তাহের এ সাইদ৷ বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানীর সাফল্যে আনন্দের ফোয়ারা বইছে অনেকের মনে৷ খবরটি সোৎসাহে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা৷
অথ্যাপক তাহের এ সাইফ ও তাঁর সুযোগ্য ছাত্রদের বায়ো-বট উদ্ভাবন এবং আরো বড় অর্জনের দিকে অগ্রসর হওয়ার খবরে সাংবাদিক ও লেখক আনিসুল হক গর্বিত৷
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও যে গর্বিত, আনন্দিত তা বোঝা গেছে তাঁর টুইট দেখে৷ তাহের এ সাইফ সফল হলে শুধু নির্দিষ্ট কোনো দেশ, জাতি, ধর্ম বা গোত্রের নয়, সারা মানব জাতিরই কল্যাণ হবে৷ সবার গর্বিত হওয়া, আনন্দে উদ্বেল হওয়াই তো স্বাভাবিক৷
বাংলাদেশের কয়েকটি রোবটের কথা
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখন অনেক ধরনের রোবট তৈরি করছেন৷ তার কয়েকটির কথা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার
জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ব্যবহারের পর থেকে শব্দটি বেশ পরিচিত৷ তবে ড্রোন দিয়ে করা যায় আরও অনেক কাজ৷ তাই বাংলাদেশের তরুণরা ড্রোন নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছেন৷ কয়েকটি টিভি চ্যানেল দৃশ্য ধারণের কাজে এ সব ড্রোন ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW
বাংলা ভাষা বোঝা রোবট
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ২০১৩ সালে একটি রোবট তৈরি করেন যেটা বাংলা ভাষা বোঝে৷ এই রোবটকে বাংলায় ‘ডানে যেতে’ বললে সেটি ডানে যেতে পারে৷ নির্মাতারা বলেন, মানব কল্যাণে বিশেষ করে হুইল চেয়ার হিসেবে এই রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে৷ ছবিতে নির্মাতাদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Shadly Salahuddin
ওয়েল্ডিং কাজে রোবট
জাহাজ নির্মাণ সহ বিভিন্ন শিল্পে ওয়েল্ডিং-এর কাজ হয় প্রচুর৷ এই কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ অথচ রোবট দিয়ে এই কাজ করানো যেতে পারে বলে জানান ‘প্ল্যানেটার বাংলাদেশ’ এর প্রধান নির্বাহী রিনি ঈশান খুশবু৷
ছবি: Rini Eshan Khushboo
টেলিপ্রেজেন্স রোবট
এর মাধ্যমে অফিসের বাইরে থেকেও অফিসে কে কী করছেন তা দেখতে পারেন অফিসের প্রধান৷ এছাড়া চিকিৎসকরা অন্য স্থানে থেকেও রোগীকে পরামর্শ দিতে পারেন৷ টেলিপ্রেজেন্স রোবটকে এমন আরও অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে বলে জানান প্ল্যানেটার বাংলাদেশ এর খুশবু৷ ছবিতে তাঁকে নাসা-য় একটি রোবট উপস্থাপন করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Rini Eshan Khushboo
দমকল কর্মী রোবট
তৈরি পোশাক কারখানা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা প্রায় ঘটে৷ সেই আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল কর্মীরা৷ ভবিষ্যতে হয়ত তাদের সঙ্গে যোগ দেবে রোবট৷ বাংলাদেশেই এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ চলছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ‘রোবটিক্সবিডি ডটকম’-এর অ্যাডমিন শিবলী ইশতিয়াক৷
ছবি: Reuters
উঁচু ভবন পেইন্ট করা
ঢাকা শহরে এখন অনেক উঁচু ভবন তৈরি হচ্ছে৷ এসব ভবনের বাইরের দিকটা পেইন্ট করতে গিয়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটছে৷ এই কাজে সাহায্য করতে পারে এমন রোবট তৈরির কাজ চলছে৷
ছবি: Harun Ur Rashid
গোয়েন্দাকাজে রোবট
বিখ্যাত ‘ট্রান্সফরমার’ মুভির কথা মনে আছে? ঐ যে একই জিনিস একেকবার একেক রূপ ধারণ করতে পারে! কোনো রোবট যদি এমন হয় তাকে তো গোয়েন্দা কাজে লাগানো যেতেই পারে৷ সেটাই চেষ্টা করছে প্ল্যানেটার বাংলাদেশ৷ অনেক দূর এগিয়েছেও তারা৷
ছবি: Rini Eshan Khushboo
জীবন বাঁচাতে রোবট
সাগরে ডুবে মৃত্যুর খবর প্রায়ই শুনি আমরা৷ তবে কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করে ডুবন্ত কারও কাছে লাইফ জ্যাকেট ও ভেস্ট পাঠিয়ে তাঁকে বাঁচানো যেতে পারে৷