রোম শহর সম্পর্কে জানতে চান? ট্যাক্সি ড্রাইভারের সহায়তা নিন
মিশায়েল কাডেরাইট/এআই২ জানুয়ারি ২০১৫
রোম শহরে দর্শনীয় বলতে কী আছে? কিংবা কোথায় যাত্রীরা বেশি যেতে পছন্দ করেন? একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারের চেয়ে ভালো এটা কে বলতে পারে বলুন৷ চলুন এমনই একজন চালকের চোখে দেখে নেই ইটালির রাজধানী রোম৷
বিজ্ঞাপন
রোমের রাস্তায় কম যানবাহন দেখতে হলে আপনাকে খুব সকালে উঠতে হবে৷ তখন কলোসিয়াম-এর পাশ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলা যায়৷ সহজে ঘুরে দেখা যায় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা কিংবা স্প্যানিশ স্টেপস-এর মতো স্থানগুলো৷
এউজেনিয়ো ডেবিয়াসি তাই পর্যটকদের সকাল সকাল ঘুরতে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ ৫৩ বছর বয়সি এই ট্যাক্সি চালকের কাছে রোম নতুন কিছু নয়৷ এখানকার আট হাজার চালকের একজন তিনি৷ যানজট তাঁর কাছে নিত্যদিনের ব্যাপার৷ তবে সবসময় শান্ত থাকার নীতিতে বিশ্বাসী তিনি৷
এউজেনিয়ো ডেবিয়াসি বলেন, ‘‘আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে অন্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের রোম ঘুরিয়ে দেখানো এবং তাদের কৌতূহল অনুভব করা৷ কারণ এটা আমার শহর৷ আমি এখানে বাস করি৷ ফলে যখন অন্য কেউ এই শহরকে ভালোবাসে তখন আমি গর্ব বোধ করি৷''
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ট্যাক্সি
সারা বিশ্বেই ‘ট্যাক্সি’ আজ শুধু যানবাহন নয়, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের একটা জায়গা হয়ে উঠেছে৷ ট্যাক্সিটি নতুন, পুরনো, ভাঙা বা বিলাসবহুল – যাই হোক না কেন, সেটায় বসেই যাত্রী সে দেশটিকে, দেশের মানুষকে দেখতে, ও জানতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উজ্জ্বল হলুদ রঙের ট্যাক্সি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের হলুদ রঙের এই ট্যাক্সিগুলো পরিচিত ‘ইয়েলো ক্যাব’ নামে৷ বিশ্বখ্যাত এই ট্যাক্সিগুলো মজবুত এবং আয়তনে বেশ বড় হলেও, ১৯৮০ সালের পর থেকে আর তৈরি হয়নি৷ তাছাড়া পুরনো এই ট্যাক্সিগুলো চালাতে বেশি পেট্রোল লাগলেও, আজও নিউ ইয়র্কের রাস্তায় মাঝে মাঝেই এগুলি চোখে পড়ে৷ শোনা যায়, ১৯৯৯ সালে এই হলুদ ক্যাবের দাম নিলামে ১৩৪,৫০০ অ্যামেরিকান ডলার পর্যন্ত উঠেছিল৷
ছবি: imago/Manfred Segerer
মেয়েদের জন্য গোলাপি রঙের ট্যাক্সি
মেক্সিকোয় বড় শহরগুলোর রাস্তা তেমন নিরাপদ নয়৷ তাই মেক্সিকো-সিটি এবং পুয়েব্লার পৌরসভা সেখানে ‘পিংক ক্যাব’ ট্যাক্সি চালু করেছে৷ উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ট্যাক্সির চালকরা যেমন মেয়ে, তেমনি যাত্রীও শুধুই মেয়ে এবং শিশুরা৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে, নারীচালিত এই ট্যাক্সিতে জিপিএস, ইমারজেন্সি বোতাম এবং কসমেটিক্স বক্স – এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সবসময় থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতীতে ফিরে যাওয়া
কিউবার রাস্তায় এখনো পুরনো গাড়ি, মানে ‘ওল্ডটাইমার’ চলতে দেখা যায়৷ এদের মধ্যে অধিকাংশই মার্কিনি৷ ১৯৫০ এবং ৬০-এর দশকের এমন অনেক গাড়ি ইতিমধ্যেই ১০০,০০০ কিলোমিটারের ঘর পার করেছে৷ তাই আজকের এ যুগে ঐ গাড়িগুলোয় চড়া পর্যটকদের জন্য এক অকল্পনীয় অভিজ্ঞতা৷ তার ওপর এগুলো ‘শেয়ার ট্যাক্সির’ মতো কাজ করায়, পথে যাত্রী ওঠা-নামা করে৷ ফলে স্থানীয়দের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায় সহজেই৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
ইচ্ছে মতো যাত্রী তোলা
গণ প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার ট্যাক্সিগুলিতে কতজন যাত্রী তোলা হবে – তার কোনো নিয়ম-কানুন নেই৷ ফলে ট্যাক্সিতে চালকের ইচ্ছেমতো যাত্রী তোলা হয়৷ তবে এ ছবি শুধু আফ্রিকায় নয়, বাংলাদেশের রাস্তাতেও নিত্যদিনের দৃশ্য৷ আসলে বেশিরভাগ সময় যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য আর কোনো বিকল্প উপায় থাকে না বলেই শেষ পর্যন্ত এরকম ভর্তি ট্যাক্সিতে ওঠেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুবাইয়ের ‘লাইফলাইন’ জলট্যাক্সি
এখানে যতগুলো সেতু আছে, তারচেয়েও বেশি আছে জলট্যাক্সি৷ খাঁড়িগুলিতে অবশ্য শুধুমাত্র কাঠের তৈরি জাহাজগুলোরই চলাচলের অনুমোদন আছে৷ তবে ‘আব্রাস’ নামের ছোট্ট এই নৌকাটিও অন্ততপক্ষে ২০ জন মানুষকে তুলতে পারে৷ আর এই জলট্যাক্সিতে শ্রমিক, ম্যানেজার, পর্যটক – যেই উঠুন না কেন, সবার জন্যই ভাড়া মাত্র ২০ সেন্ট৷ সম্ভবত বিশ্বের আর অন্য কোথাও এত কম ভাড়ায় ট্যাক্সি চড়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অমানবিক কাজ
জাপানে আবিষ্কৃত রিক্সা প্রথমে এশিয়ার দেশগুলিতে পরিচিতি পেলেও, ইতিমধ্যে সাইকেল রিক্সা হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর চল রয়েছে৷ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবশ্য টানা রিক্সা শহরের প্রায় সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ আজকের যুগে মানুষ-টানা রিক্সাকে রাজনীতিবিদ সহ অনেকেই অমানবিক বলে মনে করেন৷ তাই তাঁরা এ ধরণের রিক্সা একেবারেই তুলে দেওয়ার পক্ষে৷
ছবি: Gemeinfrei
সন্নাসীরাও ট্যাক্সিতে ওঠেন
থাইল্যান্ডে ট্যাক্সি চড়ে ঘুরে বেড়ানোটা বেশ মজার একটা ‘অ্যাডভেঞ্চার’৷ তবে ওখানকার তিন চাকাওয়ালা ‘টুক-টুক’-এ চড়তে শক্ত নার্ভ আর স্থিতিশীল পাকস্থলী থাকা প্রয়োজন তা না হলে মুসকিল৷ অন্যদিকে আরামদায়ক গাড়ির মধ্যে লিমোজিন অন্যতম৷এই গাড়িতে ওঠার আগে পর্যটকদের ভাড়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা ভালো৷ থাইল্যান্ডে সন্নাসীদের বিশেষ অবস্থানের কারণে তাঁরা এই ব্যয়বহুল লিমোজিনে উঠতে পারেন, তাও আবার বিনা পয়সায়৷
ছবি: picture-alliance/Sebastian Kahnert
বিরক্তিকর!
কম্বোডিয়ায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য সাইকেল রিক্সা, মোফাট্যাক্সি, মিনিবাসের মতো নানান যানবাহন রয়েছে৷ তবে ‘পিকআপ’ হচ্ছে সস্তা যানবাহনের একটি৷ আরাম যার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, সে এতে চড়তে পারেন৷ তবে ‘পিকআপ’-এ চড়ার আগে এটা ধরেই নিতে হবে যে, তাঁকে অন্যান্য যাত্রীদের সাথে কষ্ট করে বসতে হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
সবুজ চা পান
চীনের প্রধান শহরগুলোতে ট্যাক্সিই মূল যানবাহন৷ শুধুমাত্র পেকিংয়েই চলে প্রায় ৬৬,০০০ ট্যাক্সি৷ শুধু তাই নয়, ট্যাক্সিতে খুব কম খরচে এবং সহজে যাতায়াত করা যায়৷ তবে বেশিরভাগ ট্যাক্সি চালক ইংরেজি না জানায়, গন্তব্যস্থলটি চীনাভাষায় লিখে চালককে ধরিয়ে দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ পর্যটকদের এটাও জানা দরকার যে চীনা ট্যাক্সি চালকরা যখন-তখন সবুজ চা পান করেন৷ তাই আপনাকেও যদি সেই চা খেতে বলা হয়, তাহলে ভয়ের কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জলের ওপর বিলাসবহুল ট্যাক্সি
ইটালির ভেনিস শহরে হাতে গোনা পিচ ঢালা সমান্তরাল রাস্তা রয়েছে৷ কারণ শহরটি রাস্তার বদলে সরু সরু খালে ভর্তি৷ দেড় হাজার বছর আগে ভূমধ্যসাগরের বুকে শহরটির গোড়াপত্তন হয়৷ আর তখন থেকেই ছোট ছোট নালা বা খালের ভেতর দিয়ে চলতো কাঠের তৈরি সোনালি-কালো গন্ডোলা৷ দাঁড় বেয়ে মাঝিরা এই রোম্যান্টিক নৌকা চালান, রাতের বেলায় যাতে ৪০ মিনিট চড়তে খরচ হয় ১০০ ইউরো৷ আজকাল অবশ্য ইলেক্ট্রিক জলট্যাক্সিও পাওয়া যায় ভেনিসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
শহরের পুরনো কেন্দ্রের কাছে সবসময় নতুন যাত্রী পান এউজেনিয়ো৷ পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো এখান থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত৷ এউজেনিয়ো-র কাছে হতাশার ব্যাপার হচ্ছে যাত্রীরা এ সব ভালোভাবে দেখার পর্যাপ্ত সময় পান না৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা সবসময় শুধুমাত্র কলোসিয়াম কিংবা সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে যেতে চান৷ তারপর এরকম জায়গায় মানে পিয়াৎসা ডেল পপোলো কিংবা ট্রেভি ফাউন্টেন৷''
আর মাঝেমাঝে পছন্দের যায়গায় নির্মাণ কাজ দেখে বিরক্ত হন যাত্রীরা৷ যেমন জটিল পুনরুদ্ধার কাজ চলায় বিখ্যাত ট্রেভি ফাউন্টেন শুকিয়ে আছে৷ স্প্যানিশ স্টেপস-এর কাছেও কাজ চলছে৷ তবে উপর থেকে রোম দেখতে অনেক সুন্দর৷
এউজেনিয়ো-র যাত্রীরা গাড়ির মধ্যে থাকা আইপ্যাড থেকে শহর সম্পর্কে আরো জানতে পারেন৷ এতে তার কোম্পানির তৈরি ট্যাক্সি-অ্যাপ রয়েছে৷ তিনি তাঁর শহর এবং ভ্যাটিকান সম্পর্কে বলতে ভালোবাসেন৷ তবে যাত্রীদের প্রশ্ন শুনে মাঝে মাঝে বিস্মিত হন তিনি৷
এউজেনিয়ো বলেন, ‘‘একবার পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত চার্চ সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক ইটালীয় নারী যাত্রী জানতে চাইলো, এটা কী? এই প্রশ্ন শোনার পর প্রচণ্ড হাসি পেয়েছিল আমার৷''