মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কক্সবাজার এলাকার এক শ্রেণির লোক ব্যবসা শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ রোহিঙ্গাদের সঙ্গের মূল্যবান সম্পদ কম দামে কিনে বা কেড়ে নিচ্ছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
কক্সবাজারের টেকনাফের হোছনিপাড়া, নয়াবাড়ি, পাহাড়ার কাটা,উছনি প্রাং ও হ্নীলা এলাকায় এখন রোহিঙ্গাদের ঘর ভাড়া দেয়ার ব্যবসা জমজমাট৷ সেখানকারই নয়াবাড়ি পুলিশ গেটের আলিশা মার্কেটের নিচে ছয়টি খালি দোকান ভাড়া নিয়েছেন রোহিঙ্গারা৷ মিয়নমারের রাখাইন রাজ্যের ম্যারুল্লা শিকদারপাড়া থেকে পালিয়ে আসা হাজেরা খাতুন জানান,তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তিনি এক সপ্তাহ ধরে একটি দোকানে ভাড়ায় থাকছেন৷ মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়া দেবেন এই চুক্তিতে তাঁরা সেখানে উঠেছেন৷
আজিদা নামে এক নারী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া থাকি৷ এক রুমে চার জন থাকি৷ স্বামী ও দুই বাচ্চা নিয়ে এই রুমেই থাকি৷ বাবা-মাকে এখনও খুঁজে পাইনি৷ আমরা কয়েকদিন পরে ক্যাম্পে যাবো৷''
হাবিবুর রহমান নামের একজন বলেন,‘‘ঘর তৈরি করে দিলে দুই হাজার টাকা, আর যদি ঘর আমরা তৈরি করি, তাহলে মাটি ভাড়া একহাজার টাকা দিতে হবে৷''
সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিক আমানুর রহমান রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে ভুল তথ্য দিয়ে ক্যাম্পে যেতে দিচ্ছে না স্থানীয় একটি চক্র৷ তারা তাদের ব্যবসার জন্য এ কাজ করছেন৷ তারাই এখন ঘর তুলে রোহিঙ্গাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে সাপ্তাহিক এবং মাসিক ভিত্তিতে৷''
আমানুর জানান, ‘‘এই চক্রটিই আবার কম দামে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের স্বর্নালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছে৷ কেউ কেউ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷''
আনোয়ারুল আজিম
তিনি আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা পারাপারের বিনিময়ে জেলেরা গরু অথবা নগদ টাকা নেয়৷ কখনো গরু বা নগদ টাকা দিতে না পারলে নারীদের স্বর্ণালংকারও রেখে দেয় জেলে ও নৌকার মাঝিরা৷''
‘গুপ্তচর' আটক
মঙ্গলবার রাতে ঘুমধুম এলাকা থেকে তিন জন ও বুধবার নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে মিয়ানমারের চার নাগরিককে গুপ্তচর সন্দেহে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)৷ তারা সবাই মিয়ানমারের মংডু শহরের ফকিরাবাজারস্থ আমতলির বাসিন্দা৷ ঘুমধুম এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলি ঢেকুবুনিয়া সীমান্তের ৪৮ নম্বর পিলারের কাছে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় তাদের আটক করা হয়৷
বিজিবি ৩১ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই চার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ তারা নিয়মিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যেতো৷ তাদের আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷''
তারা বাংলাদেশে কিভাবে এলো– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে এবং এখানে তারা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিল বলে ধারণা করছি৷''
জাকির হোসেন
ঢাকার কাছ থেকে ২০ রোহিঙ্গা উদ্ধার
ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর এলাকা থেকে ১১ শিশুসহ ২০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় পুলিশ৷ ওই উপজেলার ধল্লা ইউনিয়ন থেকে বুধবার রাতে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে৷ তারা তিনটি পরিবারের সদস্য এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার মন্ডুকাদের বিল গ্রামের বাসিন্দা৷ মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম নামে একজনের হেফাজতে ছিলেন তারা৷ তাজুল ইসলামের দাবি, তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন৷
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তাদের আটক করিনি, উদ্ধার করেছি৷ তাদের এখন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এবারই বাংলাদেশে এসেছেন৷ তারা কিভাবে, কার সহায়তায় এবং কেন মানিকগঞ্জে এসেছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷''
তবে কক্সবাজারের একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি স্থানীয় চক্র রোহিঙ্গাদের থাকার ভালো জায়গার কথা বলে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্যাম্পের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে৷
প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার মতামত জানান, নীচের ঘরে৷
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷