শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে এই অঞ্চলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটতে পারে৷ আর এটা শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো অঞ্চলের জন্যই হবে ভয়াবহ৷
বিজ্ঞাপন
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ী অধ্যাপক রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলেন৷ ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশ কীভাবে এ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বা কতদিন এভাবে আশ্রয় দিতে পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়৷ এটা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়ও৷ ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে৷ পুরো অঞ্চলটি খুব শিগগিরই সন্ত্রাসবাদের আখড়া হয়ে উঠবে৷''
Sahidul Haq.mp3 - MP3-Stereo
তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নেটওয়ার্কও এখানে কাজ করা শুরু করবে৷ ফলে এটা বাংলাদেশের জন্য তো বটেই, পুরো অঞ্চলের জন্যই হবে ভয়াবহ৷ একসময় সবকিছু মিলিয়ে একটা বিস্ফোরণ হবে৷ আমি বলতে চাই, এসব ঘটার আগেই এ সমস্যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হবে৷''
হেফাজতে ইসলাম রোহিঙ্গা স্রোত ব্যবহার করছে, তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছে৷ আর এই হেফাজত নিয়ে অবস্থান জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ পুরো অঞ্চলই এতে জড়িয়ে পড়বে৷ ভারত ও পাকিস্তানও এতে জড়াবে, সব জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও এতে জড়াবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সু চি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন৷ বিশ্বব্যাপী তিনি তাঁর একটি ইমেজ তৈরি করেছেন, সারা বিশ্ব তাকে সম্মান করে৷ কিন্তু এখন তিনি পুরোপুরি উল্টো আচরণ করছেন৷ বিশ্ব এখন তার ভিন্ন রূপ দেখছে৷ নিজ দেশের মানুষের গণহত্যার সাথে নিজের নাম জড়াচ্ছেন সু চি৷''
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
22 ছবি1 | 22
সু চিকে কতোটুকু দোষ দেওয়া যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তিনি বলতে পারেন, সেনাবাহিনী তাকে চাপে রেখেছে, তাহলে তো তাঁর পদত্যাগ করা উচিত৷ কারণ তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না৷ রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের নাগরিক৷''
যদি সু চির সাথে সরাসরি কথা হয়, তাহলে তাকে কী বলতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘তাকে বলতাম যে আপনার তো একটি অবস্থান নেওয়া উচিত৷ বছরের পর বছর ধরে আপনি আপনার যে ইমেজ তৈরি করেছেন, সেটি রক্ষা করতে হবে৷ আপনি মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার একজন নেত্রী হিসেবে নিজের ইমেজ তৈরি করেছেন৷ এখন এসব নীতি, নৈতিকতার কী হলো?''
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স এটাশে এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল শহীদুল হক ড. ইউনূসের রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেয়া বক্তব্যকে বাস্তবতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি এই রোহিঙ্গা সমস্যার যদি দ্রুত সমাধান করা না হয় তাহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা হুমকির মুখে পড়বে৷ রোহিঙ্গারা এখন জঙ্গি বা অপরাধমূলক কাজের রিক্রুটমেন্টের উর্বর ক্ষেত্র৷ আর এর প্রথম শিকার হবে বাংলাদেশ৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব পড়বে৷ কিন্তু তারা কি করল তার দিকে চেয়ে আমাদের বসে থাকলে হবেনা৷ আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে৷ কারণ রোহিঙ্গা সমস্যার প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ বাংলাদেশ৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী আগুনে পোড়া সম্পদ ও ঘরবাড়ি রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত হয়৷ মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়ি ফসল জমি রাষ্ট্রীয় সম্পদে পরিণত করার পরিকল্পনা করছে৷ তাহলে তারা তাদের ফেরত নিয়ে রাখবে কোথায়? তারা আসলে ফেরত নিতে চায় না৷ আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো শেষ পর্যন্ত প্ল্যান ‘বি' অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রেখেই সহায়তা দিতে চাইবে৷ যদি তাই হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য হবে মহাবিপর্যয়ের কারণ৷ তাই বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে৷''