1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গাদের জন্য টাকা আছে, ফেরানোর কথা নেই

২৩ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৬০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এলেও তাদের একজনকেও গত তিন বছরে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি৷ আর যে মানবিক সহায়তা আসছে তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় কম৷

ছবি: Getty Images/P. Bronstein

২০২০ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১০০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু তাতে তেমন সাড়া না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সঙ্গে নিয়ে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলন করে৷ সেখানেই ৬০ কোটি ডলারের মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ কোটি ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১১ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং যুক্তরাজ্য ৬ কোটি ডলার দেবে৷ আরো কয়েকটি দেশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘‘এই অর্থ সহায়তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সংকটে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে জোরালো অবস্থানের প্রতিফলন ঘটিয়েছে৷’’

কিন্তু বাস্তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমছে৷ আর প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এখন আর তেমন আলোচনায়ই উঠছে না৷ সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়৷ সেই থেকে আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার৷ বাংলাদেশ হতাশ৷ তাই রোহিঙ্গারা যেন দ্রুত ফেরত যেতে পারে, সে পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে৷’’ আন্তর্জাতিক জোটের নেতা এবং বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই সম্ভব ৷ সেটাতেই জোর দিতে হবে৷

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও ভারত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে: অধ্যাপক সি আর আবরার

This browser does not support the audio element.

অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সি আর আবরার মনে করেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যে চুক্তি করেছে, তার মধ্যেই দুর্বলতা আছে৷ এই চুক্তিতে আন্তর্জাতিক কোনো পক্ষের সংশ্লিষ্টতা নেই৷ কোনো সময়সীমা নেই৷ কাকে ফেরত নেবে সেই সিদ্ধান্ত মিয়ানমারই এককভাবে গ্রহণ করবে৷ তৃতীয় পক্ষের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই৷ চুক্তির এই দুর্বলতার সুযোগ মিয়ানমার এখন পুরো মাত্রায় নিচ্ছে৷ বাংলাদেশকে একটা দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের সাথে ডিল করতে হচেছ৷ তিনি বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে ইউএন সিকিউরিটি কাউন্সিল৷ সেখানে যারা অ্যাক্টর তারা তো এ নিয়ে কোনো কথা বলছে না৷’’

তার মতে, ‘‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও ভারত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে৷ কিন্তু আমরা সে ব্যাপারে কার্যকর কিছু করতে পারিনি৷ আমরা বুঝতে পারিনি যে ভূ-রাজনৈতিকভাবে আমরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷’’

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘এই সমস্যা আরো দীর্ঘায়িত হবে৷ কারণ, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাস্তবে তেমন কোনো চাপই সৃষ্টি করেনি৷’’

বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে মোট ছয় লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠিয়েছে৷ আর ইউএনএইচসিআর-এর সহয়াতায় মোট  আট লাখ ৪০ হাজারের তালিকা করা হয়েছে৷

মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাস্তবে তেমন কোনো চাপই সৃষ্টি করেনি: সাবেক পররাষ্ট্র সচিব

This browser does not support the audio element.

রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের গত ৩ বছরে অর্থের চাহিদা ছিল ২৩০ কোটি ডলার৷ কিন্তু দাতারা দিয়েছে ১৬০ কোটি ডলার, যা মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ৷ ফলে রোহিঙ্গাদের পেছনে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৩০৮ কোটি টাকা৷ ভাসানচরে আবাসন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে বাড়তি তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা৷ আবার দাতারা যে অর্থ দেন শতকরা ৩৩ ভাগ পরিচালন ব্যয়েই চলে যায়৷

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুকে তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্বের জায়গায় রাখেনি৷ তাদের বিবেচনায় আরো অনেক বড় বড় সমস্যা আছে৷ ফলে তারা এই ইস্যুটিকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ আর করোনার কারণে সব দেশই অর্থনৈতিক চাপে আছে৷ ফলে মানবিক সহায়তা কমছে৷ শুরুতে অনেকের আগ্রহ থাকে৷ এখন তারা দেখছে এই সমস্যা চলতেই থাকবে৷ তাই কতদিন আর সহায়তা করবে৷ সমস্যাটি আমাদের ঘাড়ে চেপেছে৷ তাই আমাদের বোঝা তো বইতেই হবে৷ তবে আমাদের উচিত হবে ইস্যুটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাঙ্গা রাখা৷’’

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরাসরি ১৮৩টি এনজিও কাজ করছে৷ বাংলাদেশে মোট নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ১১ লাখ ১৯ হাজার৷ সি আর আবরার মনে করেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার যে চেষ্টা বাংলাদেশের, তা প্রত্যাবাসনকে আরো ঝুলিয়ে দেবে, কারণ এখন রোহিঙ্গারা আছে কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে৷ ভাসানচরে তো স্থায়ী স্থাপনা, যা এমন ধারণার সৃষ্টি করতে পারে যে তারা তো সেখানেই ভালো আছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ